সেলিনা আক্তার:
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে এলপিজি সিলিন্ডার। বাজার তদারকি না থাকায় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছে মতো দাম বাড়িয়ে ফায়দা লুটে নিচ্ছেন। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই দোকানিদের বেঁধে দেয়া দামেই গ্যাস সিলিন্ডার কিনছেন ভোক্তারা। ভোক্তারা বলছেন, ১২ কেজির একেকটি সিলিন্ডার ২০০-৩০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে করে আর্থিকভাবে ভোক্তারা প্রতিনিয়ত বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। তবে খুচরা দোকানিরা বলছেন, গ্যাস সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ কম থাকায় ডিলাররা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যার কারনে ডিলারদের বেঁধে দেয়া বেশি দামে ক্রয় করায় এলপিজি বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। এদিকে ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ভোক্তা পর্যায়ে সরকার এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। সরকার নির্ধারিত দামে তা বেচা-কেনা করতে হবে। এরপরেও যদি কোন দোকানি বা ডিলাররা কোন অজুহাত দেখিয়ে ভোক্তা পর্যায়ে বেশি মূল্যে এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আজ শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়িয়ে ৩৫ কেজির সিলিন্ডার ৩ হাজার ৩২৪ টাকা, ১২ কেজির সিলিন্ডার ১ হাজার ১৪০ টাকা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে কোন ডিলার বা খুচরা দোকানিরা তা মানছেন না। নারায়ণগঞ্জের উপজেলার কোথাও সরকার নির্ধারিত দামে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করতে দেখা যায়নি। কোথাও কোথাও ২০০-৩০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, হাজারীবাগ, বংশাল, মোহাম্মদপুর ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকার বাজার ঘুরে দেখা যায়, ফ্রেস, আই গ্যাস, ইউনি গ্যাস, পেট্রোমেক্স, বিএম, লাফস, অরিয়ন, যমুনা ১ হাজার ৩৫০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বসুন্ধরা ১ হাজার ৫৫০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বসুন্ধরা এলপিজি ১২ কেজির সিলিন্ডার ১ হাজার ৫৫০ থেকে ১৬০০ টাকা, বেক্সিমকো ও ওমেরা ১২ কেজির সিলিন্ডার ১৪৫০-১৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কামরাঙ্গীরচরের পূর্ব রসুলপুর ছয় নং গলির গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির খুচরা দোকানি বাবুর দোকানে সিলিন্ডার কিনতে আসা গৃহিনী বেবি আক্তার বলেন, সরকার নির্ধারিত সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ১৪০ টাকা হলেও বাজারে সঙ্গে এ দামের কোনো মিল নেই। নির্ধারিত এ দামের সাথে আরও ৩৫০ টাকা বেশি দিয়ে ১২ কেজির সিলিন্ডার ১ হাজার ৪৫০ টাকায় কিনতে হলো।
ক্রেতাবেশে কথা হয় এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবসায়ী জনৈক বাবুর সাথে। তিনি বলেন, দুই তিন মাস আগেও সরকার নির্ধারিত মূল্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কেনাবেচা করতে পারতাম। কিন্তু কিছুদিন ধরে গ্যাস স্বল্পতার কথা বলে ডিলাররা মূল্য বেশি নিচ্ছেন। বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলেই বেশি দামে বিক্রি করছি আমরা।
এদিকে রসুলপুর ব্রিজ মার্কেটের রনি মার্কেট সংলগ্ন মধ্য রসুলপুর রোডের দেওয়ান ইলেকট্রনিক্সের দোকানি বলেন, ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডার ভোক্তা পর্যায়ে ১৩৮০ থেকে ১৪০০ টাকা দরে বিক্রি করছি আমরা। ডিলাররা প্রতিদিনই এর দাম ওঠানামা করাচ্ছেন। যার ফলে আমরা বাধ্য হয়ে প্রতিদিনই এর দাম কমিয়ে বাড়িয়ে বিক্রি করছি। একই ধরনের কথা জানান মোহাম্মদপুর, বংশাল, লালবাগ ও হাজারীবাগ এলাকার এলপিজি সিলিন্ডারের খুচরা ব্যবসায়ীরা।
অপরদিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকার খুচরা দোকানি আব্দুর রহিম নামের আরেক দোকানি বলেন, চাহিদা মোতাবেক এলপিজি পাচ্ছি না। ডিলাররা বলছে গ্যাস স্বল্পতা রয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে সরকার নির্ধারিত ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডার ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে আই গ্যাস এলপিজির ডিলার শহিদুল ইসলাম ছোটন বলেন, বসুন্ধরা এলপিজি কোম্পানি ভোক্তা পর্যায়ে চাহিদার প্রায় এক তৃতীয়াংশ যোগান দিত। বাকি চাহিদা যোগান দিত অন্য সব এলপিজি কোম্পানি। কিন্তু সম্প্রতি বসুন্ধরা এলপিজি এলসি না করায় গ্রাহকরা অন্য এলপিজি আমদানিকারক কোম্পানিগুলোর দিকে ঝুঁকে পড়ে। এতে চাহিদার যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে অন্য কোম্পানিগুলো। ফলে দেখা দিয়েছে সংকট। আমরা চাহিদা মতো সাপ্লাই পাচ্ছি না। তাই বাধ্য হয়েই বেশি দামে কেনায় দাম কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সেলিমুজ্জান নিউজ পোস্টকে বলেন, জনবল সংকটের কারণে এক যোগে অভিযান পরিচালনা করতে পারছি না। তবে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে রূপগঞ্জেও শিগগির অভিযান পরিচালিত হবে।
এদিকে ঢাকা জেলার ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, শুধুমাত্র এলপিজি সিলিন্ডারই নয়, বাজার পরিস্থিতি তদারকি ও নিত্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের একাধিক টিম রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিনই অভিযান চালাচ্ছে। এছাড়াও ভোক্তাদের অভিযোগের ভিত্তিতেও নির্দিষ্ট স্থানের দোকান ও বাজারগুলোতে অভিযান চালিয়ে নির্দিষ্ট অংকের জরিমানা আদায়সহ সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে। তবে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কোন ডিলার বা খুচরা দোকানি নানান অজুহাতে বেশি দামে বিক্রি করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আমরা শিগগিরই অভিযানে নামবেন বলে জানান ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।