নিজের বাচ্চার মৃত্যুর আশঙ্কায় আরেকজনের নবজাতক চুরি করে নুসরাত

প্রকাশিত: ৭:২৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৩

সাইফুল ইসলাম:
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে রাজমিস্ত্রি হিরোন মিয়া ও সাহানা বেগম দম্পতির পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। সিজারে জন্ম হওয়া নবজাতক মায়ের দুধ না পাওয়ায় একই ওয়ার্ডে ভর্তি নুসরাত নামের আরেক নারী এগিয়ে আসেন। তার নবজাতক আইসিইউতে থাকায় মৃত্যুও আশঙ্কায় পাশের বেডের ওই নারীর নবজাতককে দুগ্ধদানের কৌশলে কোলে তুলে চুরি করে নিয়ে যায় নুসরাত। এরপর শিশুটিকে নিয়ে আজিমপুর এলাকায় স্বামী তুষারের কাছে রেখে হাসপাতালে ফিরে আসেন ওই নারী। এমন অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্তে নামে শাহবাগ থানা পুলিশ। পওে এ ঘটনায় মামলা হলে পুলিশ হাসপাতালের সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে নবজাতক চুরি করা নারী নুসরাতকে শনাক্ত করে। এরপর গতকাল শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকায় অভিযান চালিয়ে শিশু চুরির ঘটনায় জড়িত নুসরাত ও তার স্বামীসহ চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। উদ্ধার করা হয় সেই নবজাতককে। পরে আইনি প্রক্রিয়ায় নবজাতককে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতাররা হলেন- নুসরাতের স্বামী নাজমুল হোসেন তুষার, শাশুড়ি নাহার বেগম ও ননদ নাদিরা ওরফে খুরশিদা। আজ রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টাওে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন।

তিনি বলেন, তিনদিন ধরে সাহানার নবজাতককে দুগ্ধদান করে আসছিলেন। এই সময়ে তার শিশুটি আইসিইউতে ছিল। তার শিশুটির বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা না থাকায় তিনি হাসপাতাল থেকে ওই শিশুটিকে চুরি করে নিয়ে যান। শিশুটিকে নিয়ে আজিমপুর এলাকায় স্বামী তুষারের হাতে তুলে দেন। এরপর ফের হাসপাতালের বেডে এসে শুয়ে থাকেন। আর তুষার শিশুটিকে তাদের কামরাঙ্গীরচরের বাসায় নিয়ে যান।


ডিসি বলেন, এ ঘটনার তথ্য পেয়ে শাহবাগ থানা পুলিশ হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে। সিসিটিভিতে দেখা যায় নুসরাত নবজাতকটিকে কোলে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে চুরির বিষয়টি স্বীকার করেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। পরে স্বামী, শাশুড়ি ও ননদকে গ্রেফতার করা হয়। পরে উদ্ধারকৃত শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, নুসরাত সিজারের রোগী। সে অসুস্থ থাকায় থানা পুলিশের হেফাজতে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাকিদের গ্রেফতার দেখিয়ে আজ দুপুরের দিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। নুসরাত সুস্থ হলে তাকেও গ্রেফতার করা হবে।
হাসপাতালের কেউ জড়িত রয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা গতকাল শনিবার রাতে আসামিকে গ্রেফতার করেছি। এখনো বিস্তারিত জানতে পারিনি। আমরা তদন্ত করে দেখছি হাসপাতালের কেউ জড়িত আছেন কি না। যদি এ ঘটনার সাথে হাসপাতালের কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, তাহলে তাকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসবেন বলে জানান ডিসি মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন।