আলোচিত ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে বিচার শুরু হচ্ছে শামীম খালেদ-রাজীবের

প্রকাশিত: ১:৩৩ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৯, ২০২০

আলোচিত ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে ধৃত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিচার শিগিগর শুরু হচ্ছে। ঐ অভিযানে গ্রেপ্তার প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে সরকারের সংস্থাগুলো। এর মধ্যে অস্ত্র ও মাদক মামলায় সাত জনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় বেশ কয়েকটি মামলা পাঠানো হয়েছে ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে। এখন এসব আদালতে প্রভাবশালী আসামি ঠিকাদার জি কে শামীম ও তার সাত দেহরক্ষী, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া ও কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবের অবৈধ অস্ত্র মামলার বিচার শুরু হচ্ছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল।

তিনি বলেন, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে ধৃতদের অনেকের চার্জশিট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দাখিল করা হয়েছে। সেখান থেকে মামলার নথি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে মহানগর দায়রা জজ তিনটি মামলা বিচারের জন্য এক্তিয়ারসম্পন্ন আদালতে পাঠিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার খায়রুল আলম চৌধুরী বলেন, অভিযোগপত্র আমলে নেওয়া এবং অভিযোগ গঠনের পর সেই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে আসামিদের সুযোগ আছে উচ্চ আদালতে যাওয়ার। সেখানে নিম্ন আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন ঐ আদেশ বাতিল চেয়ে রিভিশন বা ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১(ক) ধারায় আবেদন করতে পারে। কিন্তু এ ধরনের আবেদন করা হলেও তা হাইকোর্টে তেমন গ্রহণযোগ্য হয় না। কারণ সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়েই মামলাগুলো নিম্ন আদালতে প্রমাণ করতে হয়।

আদালত সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, এনামুল হক আরমান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জু, কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।

অভিযোগপত্র আমলে নেওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে সম্রাট ও আরমানের মামলার নথি মহানগর দায়রা আদালতে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়। অস্ত্র মামলার পাশাপাশি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভুঁইয়াসহ তাদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে দায়েরকৃত মামলার অভিযোগপত্রও ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দাখিল করা হয়েছে।

তাপস কুমার পাল বলেন, অসুস্থ থাকায় সম্রাটকে আদালতে হাজির করা যাচ্ছে না। এ কারণে সম্রাট ও আরমানের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলার নথি অতিরিক্ত দায়রা আদালতে পাঠানো যাচ্ছে না।

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকায় ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে র্যাব। অভিযানে নামিদামি বিভিন্ন ক্লাবে দীর্ঘদিন ধরে চলা ক্যাসিনো সিলগালা করে দেওয়া হয়। এ সময় উদ্ধার করা হয় কোটি কোটি টাকা। জব্দ করা হয় বেআইনি অস্ত্র ও অবৈধ মাদক। গ্রেপ্তার করা হয় ক্যাসিনো পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী এক ডজন ব্যক্তিকে, যাদের অধিকাংশই যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।

গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদের যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা করে। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং অর্থ পাচারের অভিযোগেও একাধিক মামলা করে। এর মধ্যে মাদক ও অস্ত্র আইনে করা মামলাগুলোর অভিযোগপত্র দ্রুতই দাখিল করে তদন্ত সংস্থাগুলো।

আওয়ামী লীগ সরকারের এক বছর পূর্তিতে গত ৮ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমি আবারও সবাইকে সতর্ক করে দিতে চাই—দুর্নীতিবাজ যে-ই হোক, যত শক্তিশালীই হোক না কেন, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। দুদকের প্রতি আহ্বান থাকবে, যে-ই অবৈধ সম্পদ অর্জনের সঙ্গে জড়িত থাকুক, তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন। সাধারণ মানুষের হক যাতে কেউ কেড়ে নিতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।’

প্রসংগত :ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হন খালেদ। তখন তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা হয়। এর মধ্যে অস্ত্র মামলায় তাকে অভিযুক্ত করে ২৩ অক্টোবর চার্জশিট দাখিল করে র্যাব। গত ৬ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার হন সম্রাট ও আরমান। নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে বেআইনি অস্ত্র রাখার অভিযোগে সম্রাট ও আরমানের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়। আলোচিত ঠিকাদার জি কে শামীম গত ২০ সেপ্টেম্বর গুলশানের নিকেতন থেকে গ্রেপ্তারের পর তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও অর্থ পাচারের অভিযোগে তিনটি মামলা হয়। এ ছাড়া ময়নুল হককে ৩১ অক্টোবর রাজধানীর টিকাটুলী থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। অস্ত্র ও মাদক আইনের মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর কলাবাগান ক্রীড়া চক্র ক্লাব থেকে গ্রেপ্তার হন ফিরোজ। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা হয়। ইতিমধ্যে অস্ত্র আইনে সবার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। তবে লোকমান হোসেন ভুঁইয়াসহ যাদের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা রয়েছে, তা বর্তমানে তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে। ১৯ অক্টোবর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন তারেকুজ্জামান রাজীব। এক মাসের মধ্যে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে র‌্যাব।
সূত্র-ইত্তেফাক