মৃত ঘোষণার কয়েক মিনিট পর নড়ে ওঠা সেই শিশুটি মারা গেছে
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
বাঁচানো যায়নি শিশু জান্নাতুলকে। ২৪ ঘণ্টা ধরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের চিকিৎসকদের প্রাণপণ চেষ্টার পরও মৃত্যুর কাছে হার মানতে হলো শিশুটিকে। মঙ্গলবার দুপুরে নিজ বাড়িতে শিশুটি মারা যায়।
এর আগে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উন্নত চিকিৎসার জন্য দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিশুটিকে রাজশাহী মেডিকেলে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু রাজশাহী যাওয়ার মতো টাকা না থাকায় শিশুটিকে বাড়িতে নেওয়া হয়। অর্থ জোগাড় করার প্রস্তুতির একপর্যায়ে বেলা দেড়টার দিকে মায়ের কোলেই নিথর হয়ে পড়ে শিশু জান্নাতুল।
শিশু জান্নাতুলের মৃত্যুর পর ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে গ্রামজুড়ে। অনেকে শিশুটির মৃত্যুর জন্য বেসরকারি ক্লিনিক উপশম নার্সিং হোমের চিকিৎসক ও আয়াদের অবহেলাকে দায়ী করে তাঁদের শাস্তির দাবি করেন।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হাজরাহাটি গ্রামের মুদি দোকানদার আবদুল হালিমের স্ত্রী জিনিয়া খাতুনের প্রসববেদনা উঠলে পরিবারের সদস্যরা রবিবার বিকেলে তাঁকে শহরের উপশম নার্সিং হোমে ভর্তি করান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোররাত চারটার দিকে জিনিয়া নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে কন্যাসন্তান প্রসব করেন।
পরিবারের সদস্যরা শিশুটির নাম দেন জান্নাতুল
শিশুটি ভূমিষ্ঠ হওয়ার কিছুক্ষণ পরই ক্লিনিকটির নার্স–আয়াদের পক্ষ থেকে জানানো হয় মৃত কন্যাসন্তান প্রসব করেছেন প্রসূতি জিনিয়া। এরপর মৃত ভেবেই তাকে রাখা হয় ক্লিনিকের একটি রুমের মেঝেতে। ‘তারপরও আমার স্ত্রীর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী কোলে নিতেই নড়ে ওঠে আমার সদ্য ভূমিষ্ঠ কন্যা। এ সময় আমরা চিৎকার দিয়ে উঠলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে শিশুকে অক্সিজেন দেন। এরপর অবস্থা বেগতিক দেখে জান্নাতুলকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করতে বলেন। তাদের কথামতো সোমবার সকালে আমরা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করি।’
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান মালিক খোকন বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের আগেই শিশুটি জন্ম নিয়েছে। তা ছাড়া শিশুটি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিল। আমাদের পক্ষ থেকে তাকে ইনকিউবেটরের মধ্যে রেখে প্রাণপণ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু কিছুতেই শিশুটির উন্নতি না হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেলে পাঠানোর পরামর্শ দিই। দুপুরে শিশুটির পরিবারের সদস্যরা হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নেন।’
শিশু জান্নাতুলের বড় চাচা বরকত আলী বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে রাজশাহী মেডিকেলে রেফার্ড করলেও আমাদের হাতে রাজশাহী যাওয়ার মতো কোনো টাকাপয়সা ছিল না। এ জন্য আমরা দুপুরে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে শিশুকে বাড়িতে নিয়ে আসি। এরপর টাকা জোগাড় করার প্রস্তুতি নিতে থাকি। কিন্তু এরই একপর্যায়ে বেলা দেড়টার দিকে মায়ের কোলেই নিথর হয়ে পড়ে শিশু জান্নাতুল।’
শিশুটির মৃত্যুর খবরে মঙ্গলবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হাজরাহাটি গ্রামে গিয়ে দেখা যায় শিশুটির মা জিনিয়া খাতুন প্রলাপ বকছেন। বারবার বলছিলেন, ‘জীবিত থাকা অবস্থায় আমার সন্তানকে মৃত ঘোষণা দিয়ে তাকে তীব্র ঠান্ডার মধ্যে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়। আমি শেষ বারের মতো দেখতে না চাইলে জীবিত অবস্থায় হয়ত…..!’
এ ব্যাপারে ডা. জিন্নাতুল আরা বলেন, ‘শিশুটি যখন ভূমিষ্ঠ হয় একেবারেই শ্বাস-প্রশ্বাস ছিল না। নাভির কাছে কেবল ঢিপঢিপ শব্দ ছিল। চার ঘণ্টা অক্সিজেন দেওয়ার পর সে কিছুটা সুস্থ হলে আমরা (সোমবার) চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই।’ তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘শিশুটিকে চিকিৎসা দিতে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি।’
চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তার কিছুই জানা নেই।