এখনও জলমগ্ন ঢাকার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র নিউমার্কেট: হতাশায় ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ৮:৩৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৩

এসএম দেলোয়ার হোসেন:

এখনো জলমগ্ন হয়ে রয়েছে রাজধানী ঢাকার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র নিউমার্কেট। অধিকাংশ দোকানের ভেতর হাঁটু পানি জমে রয়েছে। পানি না নামায় দোকান খুলেও কেউ বেচা-কেনা করতে পারছেন না। সপ্তাহের ব্যস্ততম দিন শুক্রবার হলেও গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ভারী বর্ষণের কারনে আজও সড়ক ছাপিয়ে মার্কেটের ভেতর পানি জমে থাকায় আশানুরূপ বেচা-কেনা করতে পারননি ব্যবসায়ীরা। ফলে শুক্রবার দিনভর হতাশায় ভুগেছেন হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতা। তবে নিউমার্কেট সংলগ্ন মিরপুর রোডে পানি না থাকায় হকাররা ফুটপাতে দোকান খুলে বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে দেদার বেচা-কেনা করেছেন। ব্যক্তিগত গাড়ি হাঁকিয়ে নগরীর দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা এসে জলমগ্ন মার্কেটে ঢুকতে না পেরে ফুটপাতের দোকানগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। মূলত কমবেশি বেচা-কেনা হয়েছে নিউমার্কেট কেন্দ্রিক গড়ে ওঠা ফুটপাতে। আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য-চিত্র পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে ভারী বর্ষণে রাজধানী ঢাকার প্রায় সব রাস্তা তলিয়ে যায় পানিতে। আজ সকালে ঢাকার বিভিন্ন রাস্তার পানি কমতে শুরু করলেও নিউমার্কেট ও আশপাশের সড়ক এখনো পানিতে থই থই করছে। এর ফলে নিউমার্কেটের (মূল মার্কেট কমপ্লেক্স অংশ) অধিকাংশ দোকানই আজ বন্ধ রয়েছে। অল্প সংখ্যক ব্যবসায়ী যারা দোকান খুলেছেন, তারা মূলত এসেছেন দোকানে পানি উঠেছে কি না দেখতে এবং দোকানের ভেতর জমে থাকা পানি অপসারণ করতে। এসময় অনেক দোকানিকে দেখা গেছে, দোকানের সাঁটার বরাবর বা প্রবেশ পথে বালুর বাঁধ দিয়ে ময়লা ফেলার বেলচা নিয়ে পানি সেঁচে বাহিরে ছুড়ে ফেলছেন। মার্কেটের অধিকাংশ দোকানই বন্ধ ছিলো। তবে দোকান বন্ধের আগাম কোনো তথ্য না থাকায় অনেকেই কেনাকাটা করতে এসে ফিরে যেতে দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মার্কেটের ভেতরের অংশে এখনও পানি আটকে রয়েছে। এছাড়া এক নম্বর গেট ও পাঁচ নম্বর গেটের সামনের সড়ক পানিতে তলিয়ে আছে। তবে মার্কেটের সামনের অংশে (মিরপুর রোড) ফুটপাতের দোকানে টুকটাক কেনাবেচা করতে দেখা গেছে।

এদিকে নিউমার্কেটের গা ঘেঁষে গড়ে ওঠা ডিএসসিসির আওতাধীন ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট দক্ষিণ ব্লকের নিচতলায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতের ভারী বর্ষণে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে অধিকাংশ দোকানপাট ও হাঁটা-চলাচলের পথ। অনেক দোকানিকে দেখা গেছে পানিতে ভিজে নষ্ট হওয়া মালামাল নিরাপদে সরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ বেলচা দিয়ে পানি সরিয়ে ফেলছেন। ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটের দক্ষিণ ব্লকের কিডস জোন সংলগ্ন পেইন্টিংয়ের দোকান বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ। ওই দোকানের ব্যবসায়ী সাদিফ ও মতিন নিউজ পোস্টকে জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতের টানা ভারী বর্ষণে তাদের দোকানে সাজিয়ে রাখা পেইন্টিংয়ের অধিকাংশ মালামাল বৃষ্টির পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে তাদের প্রায় লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছ। রাতভর জেগে থেকে মালামাল সরানো হলেও আজ বৃহস্পতিবার বিকেলেও জলমগ্ন থাকায় বেচা-বিক্রি করতে পারেননি তারা। একই কথা বললেন পাশের পেইন্টিংয়ের আরেক দোকানি রানা।

নিউমার্কেটের কাপড়ের দোকানি রহমত আলী বলেন, রাতে অনেক বৃষ্টি হয়েছে। সামনের সড়কের পানি সরে গেলেও মার্কেটের ভেতরের পানি এখনও সরেনি। এ কারণে ক্রেতারা মার্কেটে ঢুকতে পারছেন না। আমরা দোকান খুলেছি মূলত দোকানে পানি ঢুকেছে কি না সেটা দেখার জন্য। জানি না কখন পানি সরবে। এই অবস্থায় আগামীকাল শনিবার দোকান খুলতে পারবো কি না নিশ্চিত হতে পারছি না।

ধানমন্ডি থেকে নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা রীতা পারভীন নিউজ পোস্টকে বলেন, আজ অফিস বন্ধ থাকায় কিছু কেনাকাটা করতে আসলাম। এসে দেখি মার্কেটের পানি এখনো সরেনি। দোকানপাট বন্ধ, তাই কেনাকাটা করতে না পেরে বাসায় চলে যাচ্ছি। পুরান ঢাকার  লালবাগ থেকে কেনাকাটা করতে আাসা নার্গিস আক্তার বলেন, আজ শুক্রবার ছুটি থাকায় বাচ্চাদের জন্য জরুরি প্রয়োজনীয় কিছু কাপড় ও ঘরের দরজা-জানালার পর্দা কেনার জন্য এসেছিলাম। কিন্তু নিয়মিত কেনাকাটার জন্য যে দোকানগুলো রয়েছে তা বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে ফুটপাতের দোকানে বাচ্চাদের রাফ ইউজের জন্য কয়েকটি কাপড় কেনাকাটা করছি। তাই ফুটপাতের দোকানগুলোই ভরসা হাওয়ায় সাশ্রয়ী মূল্যে কিনতে  ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন।

এদিকে কেনাকাটার জন্য কাকরাইল থেকে নিউমার্কেটে আসা রিপন আহমেদ নিউজ পোস্টকে বলেন, নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে আসছিলাম। এসে দেখি মার্কেট বন্ধ। মার্কেটের ভেতরে পানি থাকায় দোকান বন্ধ। তাই ফুটপাত থেকে কিছু কেনাকাটা করলাম।

মার্কেট বন্ধ থাকলেও মিরপুর রোডে পানি না থাকায় ফুটপাতের দোকানগুলোতে মোটামুটি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ফুটপাতের জুতার দোকানি শাওন মাহমুদ নিউজ পোস্টকে বলেন, বেচাবিক্রি নেই। মাত্র চার জোড়া জুতা বিক্রি করেছি। মার্কেটও বন্ধ। লোকজন কম, তাই বেচাবিক্রিও কম। চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট ও ঢাকা কলেজ সংলগ্ন ফুটপাতে ভ্যানগাড়িতে রেডিমেড তৈরি শার্ট, টি-শার্ট ও ট্রাউজার, প্যান্ট বিক্রি করছেন শামীম, আহম্মদ আলী, সজিব, রাকিব, সুমন ও আলী আকবর। তারা নিউজ পোস্টকে জানান, সকালের দিকে ক্রেতা কম থাকলেও বিকেলে তাদের বিক্রি বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে তারা বলেন, নিউমার্কেট ও ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটের দক্ষিণ ব্লকে হাঁটু পানি জমে থাকায় দোকানপাট না খোলায় ফুটপাতের দোকানগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন স্বল্প আয়ের মানুষ। তাই বৃষ্টি না থাকায় ক্রেতাদের কেনাকাটার একমাত্র ভরসাস্থল ছিল ফুটপাতের হকারেরা।