ডেস্ক রিপোর্ট:
বিশ্বজুড়েই নারীদের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় স্তন ক্যানসার নির্ণয় করা গেলে এবং সময়মতো পরিপূর্ণ চিকিৎসা দিতে পারলে ৯০ ভাগ রোগীর সুস্থ হওয়া সম্ভব। দেশে প্রতিবছর প্রায় ১৩ হাজার নারী নতুন করে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। তাদের মধ্যে মারা যান প্রায় আট হাজার। এমন প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) পালিত হলো স্তন ক্যানসার সচেতনতা দিবস। স্তন ক্যানসার সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে ২০১৩ সাল থেকে বেসরকারিভাবে এই দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে।
স্তন ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে দেশে মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। মঙ্গলবার সারা দেশে এ উপলক্ষে আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা ও সহজ ভাষায় লেখা লিফলেট বিতরণ করা হয়। ঢাকায় বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরামের উদ্যোগে মহাখালীতে আইইডিসিআর মিলনায়তনে ফোরামের অন্যতম সদস্য সংগঠন কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টার ট্রাস্ট শুক্রবার ছাড়া পুরো অক্টোবর মাস প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিনামূল্যে স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং-সেবা দেবে।
একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারী চিকিৎসক প্রথমে পরীক্ষা করবেন। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। কোনও পরীক্ষা করাতে তা ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্টে ধানমন্ডির মেডিনোভা এবং সোবহানবাগের বায়োমেড ল্যাব থেকে করা যাবে। দরিদ্র রোগীদের জন্য সিওসি ট্রাস্টের রোগী কল্যাণ তহবিলের সহযোগিতায় বিনামূল্যে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।
এই সেবার জন্য নিবন্ধন করা যাবে ০১৭৮৯৪৪৪৭৬৭, ০২-২২৩৩১০৬৫৫ নম্বরে ফোন করে কিংবা ০১৯৭৭-৫৯১৯০৭ নম্বরে এসএমএস করে রোগীর নাম, বয়স, ঠিকানা ও ফোন নম্বর পাঠিয়ে। অনলাইনে নিবন্ধনের সুযোগ থাকবে।
সোবহানবাগে সালিমা ইনস্টিটিউটেও সরাসরি স্ক্রিনিং করা যাবে।
নারী উদ্যোগ কেন্দ্র ঢাকা ও কিশোরগঞ্জে নারীদের ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। নারীপক্ষ, ওয়াইডাব্লিউসিএ, হারমনি ট্রাস্ট, অপরাজিতাসহ বিভিন্ন সংগঠনেরও নানা কর্মসূচি আছে।
ফোরামের উদ্যোক্তা ও প্রধান সমন্বয়কারী,জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিটের ক্যানসার ইপিডেমিওলোজি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার জানান, ‘স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় স্তন ক্যানসার নির্ণয় করা গেলে ও সময়মতো পরিপূর্ণ চিকিৎসা দিতে পারলে ৯০ শতাংশ রোগীর সুস্থ হওয়া সম্ভব। দুঃখের বিষয়— আমরা এখানে অনেক পিছিয়ে থাকায় তিন-চতুর্থাংশ রোগী ধরা পড়ে রোগের শেষ পর্যায়ে।
অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেন, সরকারের বড় একটি উদ্যোগ— আটটি বিভাগীয় শহরে সমন্বিত ক্যানসার চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প। কিন্তু বাস্তবায়নের ধীরগতি আমাদের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় সরকারি হাসপাতালে স্তন ক্যানসার নির্ণয় ও চিকিৎসার সংকট দূরীকরণে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্মাণাধীন বিভাগীয় ক্যানসার হাসপাতালগুলো দ্রুত চালু এবং জেলাপর্যায়ের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ক্যানসার চিকিৎসার সব পদ্ধতি চালু করতে হবে।