ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় পুলিশকে বাড়াবাড়ি না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার জানান, সবাইকে নিরপেক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে মাঠে নেমেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, এবারের নির্বাচনে পুলিশ কোনো বাড়াবাড়ি আচরণ করবে না। পক্ষপাতমূলক আচরণ থেকেও বিরত থাকবে তারা। তবে পুলিশের উদ্বেগ ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী নিয়ে। যেসব ওয়ার্ডে ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন, সেসব স্থানে সহিংস ঘটনা ঘটতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছে। এ জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
আগামীকাল শনিবার সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার ২ হাজার ৪৬৮টি কেন্দ্রে একটানা ভোট গ্রহণ হবে। নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গতকাল থেকেই মাঠে নামতে শুরু করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৫০ হাজার সদস্য। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, আপাতত কোথাও কোনো ঝুঁকি তিনি দেখছেন না।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, মহানগরের সব উপকমিশনারকে নিরপেক্ষ থেকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে তাঁদের কঠোর হতেও বলা হয়েছে। নির্বাচনকেন্দ্র ও এর আশপাশে যেকোনো ধরনের সহিংস তৎপরতা দমন করা হবে বলে তিনি জানান।
সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই পুলিশের ধরপাকড়ের আশঙ্কা করছিলেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। তবে গতকাল পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো অভিযানের খবর পাওয়া যায়নি। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে মাত্র ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তিনি বলেন, বাইরের ভোটারদের ঢাকা ছাড়তে হবে। আবার ঢাকাবাসীদের বাইরে বের হওয়ার সময় ছবিযুক্ত পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। কাউন্সিলর নির্বাচনের ক্ষেত্রে যোগ্য প্রার্থীদের ভোট দিতে বলেন। কোনো ছিনতাইকারী বা ম্যানহোলের ঢাকনাচোরকে ভোট না দেওয়ার জন্যও ভোটারদের আহ্বান জানান তিনি।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে প্রার্থীদের মধ্যে সংক্ষুব্ধ যে কেউ অন্যায়–অবিচারের অভিযোগ করতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘এত দিন পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনী প্রচার চলেছে। অনেক প্রার্থীর পক্ষে তাঁদের আত্মীয়স্বজনেরা প্রচারে অংশ নিয়েছেন। আমরা আশা করব, এবার আপনারা ঢাকা ছেড়ে চলে যাবেন। অপ্রয়োজনীয় ঢাকা সফর নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।’ ঢাকা ছেড়ে না গেলে র্যাব কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে অবশ্য র্যাবের মহাপরিচালক বলেছেন, কাউকে জেলে পোরা র্যাবের উদ্দেশ্য নয়। প্রকৃত ভোটাররা যেন ঠিকঠাক ভোট দিতে পারেন, সেটাই নিশ্চিত করতে চাইছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জরুরি প্রয়োজন, চিকিৎসা, চাকরির সাক্ষাৎকার বা বিদেশযাত্রার জন্য বাসা থেকে বের হওয়ায় কোনো সমস্যা নেই।
ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ঢাকায় প্রবেশের যে কথা বলেছেন, সে সম্পর্কে র্যাবের কাছে কি খবর আছে, এমন প্রশ্নের জবাব তিনি দেননি। বেনজীর বলেন, রাজনীতিবিদদের কথার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি মন্তব্য করা থেকে বরাবর বিরত থাকছেন। এ দফাতেও তা–ই থাকবেন। তবে সব ধরনের ঝুঁকি ও আশঙ্কা তলিয়ে দেখা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও খেয়াল রাখা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী যেখানে যে আইন প্রযোজ্য, সেখানে সে আইন প্রয়োগ করা হবে। বিরোধীদলীয় প্রার্থীরা ধরপাকড়ের যে আশঙ্কার কথা বলছেন সে সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘ওরা আশঙ্কা করতে থাক, আমরা নির্বাচন করি।’
র্যাবের পাঁচটি ব্যাটালিয়নই আজ শুক্রবার থেকে কাজ করার কথা। নির্বাচনের পরদিন পর্যন্ত র্যাবের বিশেষ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এই কাজে বোম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াড ও ডগ স্কোয়াড মোতায়েন থাকবে। শহরের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশিচৌকি থাকবে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা, প্রবেশপথ ও ভোটকেন্দ্রের আশপাশে বিশেষ নজর থাকবে র্যাবের। ঢাকায় ১২৯টি ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবে। প্রার্থীদের র্যাব মহাপরিচালক আইনকানুন মেনে চলার অনুরোধ করেছেন। কেউ গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করলে র্যাব তাৎক্ষণিকভাবে নিবৃত্ত করবে বলেও জানিয়েছেন।