ডেস্ক রিপোর্ট:
দাবি আদায়ে রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সময়ে হরতাল বা অবরোধের ডাক দিয়ে থাকে। হরতাল-অবরোধকে আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে সরকারকে দাবি আদায়ে বাধ্য করার চেষ্টা করে দলগুলো। এতে কখনও সফলতা আছে, আবার কখনও ব্যর্থ হয় দাবি আদায়ের চেষ্টা। সরকারও পরিস্থিতি মোকাবিলায় নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে থাকে।
গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি ও সমমনা কয়েকটি রাজনৈতিক দল রাজধানীতে সমাবেশের চেষ্টা করে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কর্মীসমর্থক জড়ো করতেও সফল হয় বিএনপি। তবে শনিবার সমাবেশ শুরুর আগেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিএনপি কর্মীরা। পণ্ড হয়ে যায় তাদের সমাবেশ। সমাবেশ করতে না পেরে পরদিন ২৯ অক্টোবর সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচির ডাক দেয় বিএনপি।
হরতাল শেষ হতে না হতেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি। একদিন বিরতি দিয়ে ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা হচ্ছে এবং অনেকেই জানতে চাচ্ছেন, হরতাল আর অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে পার্থক্য কী?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, হরতাল হচ্ছে—গাড়ির চাকা ঘুরবে না, অফিস-আদালত খুলবে না। দোকানপাট, স্কুল কলেজসহ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এক কথায় সব কিছু অচল করে দেওয়ার কর্মসূচি হচ্ছে হরতাল।
এ অঞ্চলে ১৯৪৮ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে প্রথম হরতাল কর্মসূচি পালন করা হয়। বাংলাদেশে যেটা হরতাল, প্রতিবেশী দেশ ভারতে সেটাকে বলে ‘বন্ধ’।
অন্যদিকে, অবরোধ কর্মসূচি অর্থ হচ্ছে—সব কিছু খোলা থাকবে। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হবে। গণমাধ্যম, ফায়ার সার্ভিস, চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ জরুরি সেবাগুলো ছাড়া আর সব ধরনের সরবরাহ চেইন বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে অবরোধ কর্মসূচির মাধ্যমে। এক শহর থেকে আরেক শহরে কিংবা এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় পরিবহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করাটাকে অবরোধ বলা হচ্ছে।
তবে বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের দেশগুলোতে হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি প্রায় একইরকম হয়ে থাকে। সরকারবিরোধীরা জ্বালাও-পোড়াওয়ের মাধ্যমে মানুষকে কর্মসূচি পালনে বাধ্য করে থাকে। জনগণ হরতালের মতো স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দিক বা না দিক; সড়ক, নৌ ও রেলপথে বাধা দিয়ে কর্মসূচি পালনে মানুষকে বাধ্য করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, হরতালের পর ৭২ ঘণ্টার অবরোধের যে কর্মসূচি, সেটা আরেকটু হায়ায় ফরম্যাটের প্রোগ্রাম। হরতালের সঙ্গে এর পার্থক্য হচ্ছে—হরতালটা মানুষের সম্মতির ওপরে পালিত হয়ে থাকে। হরতাল মানে সবকিছু বন্ধ। এ কর্মসূচিতে আপনি জমায়েত নাও করতে পারেন। কিন্তু অবরোধের মধ্যে কিছুটা জমায়েতের প্রশ্ন আছে। রাজপথে অবস্থান নেওয়ার মতো বিষয় আছে।
তিনি বলেন, অবরোধের সময় রাজপথ, রেলপথ সব বন্ধ থাকে। রাজনৈতিক দলের কর্মীরা ছাড়াও ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষদের উপস্থিতির বিষয়টাও অবরোধ কর্মসূচিতে থাকে। এটা করা হয়ে থাকে সরকারকে বাধ্য করার জন্য, যখন তারা শান্তিপূর্ণ কোনও সমাবেশ করতে দেয় না তখন।
সাইফুল হক আরও বলেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের যে সুযোগটা তৈরি হচ্ছিল, সেই পথটা সরকার গত দুই দিনের কর্মকাণ্ডে সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে। এর সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব সরকার এবং সরকারি দলের। সরকার এর মাধ্যমে আবারও একটি নীলনকশার নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে চায়।
২৮ অক্টোবরের ঘটনা নিয়ে তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবেই সরকার এটা ঘটিয়েছে। এই মহাসমাবেশের আগের কয়দিনের তাদের বক্তব্যই প্রমাণ করেছে যে—হেফাজতের মতো পরিণতি হবে। কর্মীদের লাঠিসোটা নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। ঢাকায় কোথাও দাঁড়াতে দেবে না। অলিগলিতে দাঁড়াতে দেবে না। তাদের বক্তব্যেই বোঝা গেছে তারা সর্বাত্মক একটা আক্রমণাত্মক ভূমিকায় যাবে।
তিনি বলেন, তারপরও আমরা আশা করেছিলাম যে সমাবেশটা শান্তিপূর্ণভাবে হবে। আমাদের কর্মসূচিই ছিল শান্তিপূর্ণ। এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য আমরা একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না। হয়তো আশঙ্কা ছিল। তারা পরিকল্পিতভাবে বহু ধরনের এজেন্ট দিয়ে এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে। সংঘর্ষ শুরুর পর বিএনপি নেতাকর্মীদেরও আত্মরক্ষার্থে যুক্ত হতে হয়েছে। পুলিশ ও যুবদলের সদস্যের মৃত্যুর ঘটনাটি নিশ্চয়ই অনাকাঙ্ক্ষিত। পুরোটাই সরকারের নীল নকশার অংশ। এই অজুহাতে তারা অগ্নিসন্ত্রাস, ভাঙচুর করে বিরোধীদলের টপ টু বটম সবার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে তাদের গ্রেফতার ও হয়রানি করার জন্য।
তিনি দাবি করেন, গত দুই দশকেও এমন স্বতঃস্ফূর্ত সফল হরতাল হয়নি। এ হরতাল সরকারের প্রতি দেশের মানুষের অনাস্থার বহিঃপ্রকাশ। মানুষ যে ক্ষুব্ধ ও বিক্ষুব্ধ, এটা তারই প্রমাণ। মানুষ সেটা পরিষ্কার করে দিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেছেন, হরতাল আর অবরোধের মধ্যে কোনও ভিন্নতা আছে কিনা সেটা যারা কর্মসূচি দিয়েছে তারা বলতে পারবেন। দুই কর্মসূচিতে আমাদের করণীয় একই রকমের। হরতাল বা অবরোধ যাই হোক, পুলিশ জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় যা যা প্রয়োজন সেই ব্যবস্থা নেবে।