আমদানির পর আমদানিতেও আলু-পেঁয়াজে পাগলা ঘোড়া, সবজিতে কিছুটা স্বস্তি

প্রকাশিত: ৪:১১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৩, ২০২৩

সেলিনা আক্তার:

গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে বাজারে কয়েকটি সবজির দাম কমেছে। তাই সবজিতে কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে। দীর্ঘ সময় পর ক্রেতাদের জন্য সুখবর এটি। কিন্তু  বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার দফায় দফায় আলু-পেঁয়াজ আমদানির পর আমদানির অনুমতি দিলে দেশের স্থলবন্দর দিয়ে আলু-পেঁয়াজ আসতে শুরু হলেও তার কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি। পাশাপাশি চিনি আমদানিতে সরকার শুল্ক কমিয়ে অর্ধেকে নামালেও বাজারে পণ্যটির দাম আগের চেয়ে কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা বেড়ে গেছে। মাংসের দাম স্থিতিশীল থাকলেও বেড়েছে সব ধরণের মাছের ও বয়লার মুরগির দাম। আজ শুক্রবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন তথ্য-চিত্র পাওয়া গেছে।

খুচরা বাজারে দীর্ঘদিন ধরেই অস্বাভাবিক দামে বিক্রি হচ্ছিল সবজি। এরমধ্যে গত সপ্তাহটা হরতাল, অবরোধে কেটেছে, যে কারণে ক্রেতাদের শঙ্কা ছিল বাজারের সবজির দাম আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। তবে সেটা হয়নি বরং গত সপ্তাহের তুলনায় কয়েকটি সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। এরমধ্যে পটল, ঢেঁড়স, বরবটির দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা কমে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় নেমেছে। এছাড়া বাজারে প্রতি কেজি বেগুন, বরবটি, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, উস্তা ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা একশো টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।

অন্যদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) থেকে আমদানি শুরু হলেও কমেনি আলুর দাম। সেদিন সন্ধ্যায় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ৭০ টন আলু দেশের বাজারে প্রবেশ করেছে। এরআগে গত সোমবার (৩০ অক্টোবর) আলুর বাজারে লাগাম টানতে কৃষি মন্ত্রণালয় আমদানির অনুমতি দেয়। এরইমধ্যে ৫০ হাজার টনের বেশি আলু আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে খুচরা পর্যায়ে আলুর প্রতিকেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে একই দামে ছিল। দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৫০ টাকা। মূলত বাজারে আলুর দরের লাগাম টানতে আমদানির অনুমতি দিলেও গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারণে দফায় দফায় বাড়ছে আলুর দাম। এদিকে বাজারে আগাম নতুন আলু এসেছে। সেটার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৬০ টাকা দরে।

এদিকে গত রোববার (২৯ অক্টোবর) থেকে ভারত পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মুল্য বেঁধে দেওয়ার পর বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম হু হু করে বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা পর্যন্ত। এরমধ্যে পাড়া-মহল্লায় কিছু দোকানে ১৫০ টাকাও বিক্রি করতে দেখা গেছে। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৮০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি।

মনিরুল ইসলাম নামের একজন ক্রেতা বলেন, আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ। ব্যবসায়ীরা এখন পুরাই অসাধু হয়ে গেছে। সরকার নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে দফায় দফায় শুল্কের হার কমিয়ে আলু- পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিলে পাইকারী ব্যবসায়ীরা তা লুফে নেয়। দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকার স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিকৃত আলু-পেঁয়াজ আসছে। অথচ বাজার তদারকিতে সরকারের যথাযথ উদ্যোগ না থাকায় আলু-পেঁয়াজ ও চিনতে পাগলা ঘোড়া ভর করেছে। কয়েকদিন আগে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ  পেঁয়াজ আমদানি করতে বেশি টাকা লাগবে বলে ঘোষণা দেয়। আর সেই খবর শুনেই আমাদের দেশের পাইকাররা এ পণ্যোর দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু আলু আমদানি হচ্ছে সেটা কোনো প্রভাব নেই। চিনির শুল্ক কমেছে সেটার কোনো খোঁজ নেই।

তিনি বলেন, আসলে কোনো পণ্যের দাম বাড়লে বিক্রেতারা সঙ্গে সঙ্গে সেটি কার্যকর করেন। কিন্তু কমলে সে দাম কার্যকর করতে তাদের গড়িমসির শেষ থাকে না।

বাজারে কিছু ইতিবাচক প্রভাব থাকার কথা চিনির দামে। কারণ গত বুধবার (১ নভেম্বর) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চিনি আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে অর্ধেকে করেছে। তবে এরপর বাজারে পণ্যটির দাম আরও বেড়েছে। বাজারে এখন খোলা চিনি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা আগের সপ্তাহ থেকে কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা বেশি।

কামরাঙ্গীরচরের বিক্রেতা স্বপন ও গোলাম কিবরিয়া বলেন, চিনির দাম কমেনি বরং আগের থেকে ৫ টাকা কেজিতে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। শেষ মঙ্গলবার পাইকারি বাজারে প্রতি বস্তায় চিনির দাম ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এছাড়া পাইকারি পর্যায়ে প্যাকেট চিনির কেজিতে দুই টাকা বেড়েছে। এতদিন আমরা কেজি ১৩১ টাকায় কিনে ১৩৫ টাকায় চিনি বিক্রি করতাম। এখন কিনতে হয় ১৩৫ টাকা দরে। বিক্রি ১৪০ টাকা।

এদিকে শাক-সবজির দাম গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে কিছুটা কমেছে। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের পরিবারের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে গরু ও ছাগলের মাংসের দামে কোন হেরফের হয়নি। আগের দামে বিক্রি হচ্ছে মাংস। বয়লার মুরগির দাম বেড়ে ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।  বাজার সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ১০০ টাকা দরে।