বেতন বাড়ানোর দাবিতে রাস্তায় পোশাক শ্রমিকরা: বিক্ষোভে ৩০০ কারখানা বন্ধ

প্রকাশিত: ২:৫১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৪, ২০২৩

ডেস্ক রিপোর্ট :

মজুরি বাড়ানোর দাবিতে ৩১ অক্টোবর থেকে আন্দোলনে নামে পোশাক শ্রমিকরা। শ্রমিকদের এমন বিক্ষোভের কারণে প্রায় ৩০০ কারখানা বন্ধ আছে। প্রায় তিনগুণ মজুরি বাড়ানোর দাবিতে এমন সহিংস বিক্ষোভ করে তারা। এই বিক্ষোভের কারণে লিভাইস এবং এইচএন্ডএম এর মতো শীর্ষস্থানীয় পোশাক ব্র্যান্ডগুলি উৎপাদন হুমকির মুখে বলে জানিয়েছে এক গার্মেন্টস ইউনিয়নের নেতারা। শুক্রবার (৩ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য দিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
মাত্র ১২ হাজার ডলার রপ্তানি আয় দিয়ে শুরু করা পোশাক শিল্প আজ বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে রেখে চলেছে অনবদ্য অবদান। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৩ শতাংশ অর্জিত হয় তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে।


কিন্তু এই সেক্টরের চল্লিশ লাখ শ্রমিকের অনেকের জন্যই অবস্থা ভয়াবহ। শ্রমিকদের অধিকাংশই নারী। যাদের মাসিক মজুরি ৮ হাজার ৩০০ টাকা থেকে শুরু হয়।
এর আগে বাংলাদেশে ২০১৮ সালে শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি আট হাজার টাকা ঘোষণা করা হয়েছিল। শ্রম আইন অনুযায়ী, প্রতি পাঁচ বছর পর পর নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের মাধ্যমে শ্রমিকদের বেতন পুনরায় নির্ধারণ করার নিয়ম রয়েছে।

পোশাক শ্রমিকদের মজুরি কত হবে তা নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে এখন আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে সর্বনিম্ন মজুরি ২৩ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

একে অযৌক্তিক দাবি বলে উল্লেখ করেছে বিজেএমইএ। সংস্থাটির পক্ষ থেকে শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ১১ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এখন উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতার চেষ্টা করা চলছে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের (বিজিআইডব্লিউএফ) সভাপতি কল্পনা আক্তার এএফপিকে বলেন, বন্ধ হওয়া গার্মেন্টসের মধ্যে দেশের অনেক বড় কারখানা রয়েছে যেমন, গ্যাপ, ওয়ালমার্ট, এইচএন্ডএম, জারা, ইন্ডিটেক্স, বেস্টসেলার, লেভিস, মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার, প্রাইমার্ক এবং আলডি। যারা প্রায় সব বড় বড় পশ্চিমা ব্র্যান্ড এবং খুচরা বিক্রেতাদের পোশাক তৈরি করে।

তবে, কোনো ব্র্যান্ডের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে তাদের উৎপাদন বন্ধের ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো খবর পাওয়া যায়নি। বিক্ষোভে যেসব কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্ডার হারানোর ভয়ে তাদের নাম প্রকাশ করছেন না বলে জানা গেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, সপ্তাহব্যাপী এই বিক্ষোভে অন্তত ৩০০টি কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত দুই শ্রমিক মারা গেছে এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।

বিজিআইডব্লিউএফ সভাপতি কল্পনা আক্তার জানান, ইউনিয়ন থেকে প্রায় ৬০০ টি গার্মেন্টস ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।


এদিকে হামীম এবং স্টার্লিং গ্রুপের কর্মীরা পুনরায় কাজে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করলে অন্য সহকর্মীরা তাদের কাজে যোগদানে বাঁধা দেয়।

গার্মেন্টস শ্রমিকরা জানায়, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তাদের পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে।

কারখানার মালিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), শ্রমিকদের ২৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, এই সহিংসতার সবচেয়ে খারাপ রূপ দেখেছে গাজীপুরের কারখানা মালিকরা।

গাজীপুরের পুলিশ চীফ সারোয়ার আলম এএফপিকে বলেছেন, যেকোনো সহিংসতা ঠেকাতে আমরা প্রায় ৩ হাজার পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী মোতায়েন করব। সহিংসতা বন্ধ করে সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের জন্য শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সারোয়ার আলম আরও বলেবন, আমি মনে করি শ্রমিকদের দাবি যৌক্তিক। কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া তাদের উচিৎ হবে না।-এএফপি