আ.লীগের ইশতেহারে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানে বেশি গুরুত্ব, টার্গেট যুব সমাজ: রাজ্জাক

প্রকাশিত: ৮:৫৯ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৫, ২০২৩

জাহাঙ্গীর আলম মিয়া:

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির আহ্বায়ক ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, দেশের যুব সমাজকে আকৃষ্ট করতে এবারের ইশতেহারে শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থানের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রবিবার ৫ নভেম্বর) বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির সঙ্গে পেশাজীবীসহ বিভিন্ন কমিউনিটির প্রতিনিধিদের মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

নির্বাচনি ইশতেহারের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও দুধ, ডিমসহ পুষ্টিকর খাবারে পিছিয়ে আছি। সেটা আগামীতে দূর করতে হবে। এটা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

করোনাভাইরাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারেনি বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অর্থনীতির কাঠামো পুনর্গঠন করতে হবে। এটাকে এমন জায়গায় স্থাপন করতে হবে যাতে আগের গতিশীলতা ও জায়গা পুনরুদ্ধার করতে পারি। এ লক্ষ্যে আগামী নির্বাচনি ইশতেহারে আমরা এগোবো।

মাথাপিছু আয়, দারিদ্র্য কতটা কমানো হবে সেই পরিকল্পনা ইশতেহারে থাকবে উল্লেখ করে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এখন দারিদ্র্য ১৮ দশমিক ৪ নামিয়ে আনছি। এটি কমিয়ে আমরা ১২-তে নামিয়ে আনবো। অতি দরিদ্র ৯ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।

কর্মসংস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, কর্মসংস্থান করতে হলে আমাদের উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানা বাড়াতে হবে। এটা বর্তমানে ৩০ শতাংশ থাকলেও আগামীতে ৪০ শতাংশে উন্নতি করতে চায় আওয়ামী লীগ।

সবার আলোচনায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সুশাসনের কথা উঠেছে উল্লেখ করে আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজের ব্যবস্থা করবো, সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবো। উন্নয়ন সবার জন্য করবো। কেউ পিছিয়ে থাকবে না।

সাংস্কৃতিক বিকাশ না থাকলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ থাকবে না—উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ধরে রাখতে হলে পুরো জনগোষ্ঠীকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে। সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটাতে হবে এবং সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করতে হবে। ধর্মান্ধ ও সাম্প্রদায়িকতা থেকে মানুষকে বের করার জন্য তাদের আরও বেশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করতে হবে। আগামীর সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সংস্কৃতির বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে জানান তিনি।

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ ও কর্মসংস্থান হবে আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য। সেটি হলে আমরা সত্যিকারের অর্থে একটা সমৃদ্ধশালী ও উন্নত জাতি হবো সারা পৃথিবীতে। আমরা অহংকার ও গর্ব করে চলতে চাই। নির্বাচনি ইশতেহারের মাধ্যমে আমরা জনগণকে প্রতিশ্রুতি দেবো, যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিলাম সেটাকে পুনরুদ্ধার করে দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবো।

ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা নির্বাচনের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছি। মূল্যায়নের ভার আপনাদের। নির্বাচনি ইশতেহার যেন জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয়। তার ভিত্তিতেই নির্বাচনি ইশতেহার দেবে আওয়ামী লীগ।

তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। আওয়ামী লীগ সবসময় গঠনতন্ত্র, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও আদর্শের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ কখনও চোরাগলির পথে বা অসাংবিধানিক পথে ক্ষমতায় আসেনি। গণতান্ত্রিক চর্চা করেছে এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চেতনাকে ধারণ আওয়ামী লীগ পরিচালিত হয়েছে। যেসব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিয়েছে তাতে সব সময় জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছে।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের যত সাফল্য সেগুলো তুলে ধরে তার আলোকে আগামীতে কী করবে, কী তার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা-প্রত্যাশা কীভাবে পূরণ করবে, কর্মসূচি বাস্তবায়নের কৌশল কী হবে সেগুলো নির্বাচনি ইশতেহার সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হবে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে কী কী অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে, এ বিষয়ে মতামত উপস্থাপনের জন্য সভায় অংশ নেওয়া প্রতিনিধিদের অনুরোধ করেন ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক।

সভায় বক্তব্য রাখেন একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু, নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান, পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, নারীনেত্রী রোকেয়া কবীর, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, সিনিয়র সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক, জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল আহসান, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, বুয়েটের উপাচার্য সত্য রঞ্জন, আইনজীবী রবিউল আলম বদু, এফবিসিআই পরিচালক অভিনেত্রী শমী কায়সার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাদ হুদা, ওলামা লীগের সভাপতি আব্দুল মোমিন সিরাজী, অবজারভার সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সমাজবিজ্ঞানী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব সেলিম মাহমুদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান।