শ্রমিক বিক্ষোভে গাজীপুরে ১০০ কারখানা বন্ধ ঘোষণা

প্রকাশিত: ১১:১৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৯, ২০২৩

গাজীপুর প্রতিনিধি:

নতুন নির্ধারিত বেতন কাঠামো প্রত্যাখ্যান করে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আজ বৃহস্পতিবারও দিনভর গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে পোশাক শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন। নাওজোড় ও কোনাবাড়ি এলাকায় শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরে টিায়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এদিকে শ্রমিক অসন্তোষের প্রেক্ষিতে মহানগরের প্রায় ১০০ কারখানা বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া বেশ কয়েকটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ টাঙিয়ে দিয়েছে।

পুলিশ, শ্রমিক ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নতুন নির্ধারিত বেতন কাঠামো প্রত্যাখান করে ও ন্যূনতম মুজরি ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গাজীপুর মহানগরের রওশনসড়ক এলাকার লিভাস নামের কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-গাজীপুর সড়কে নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় শ্রমিকরা ওই কারখানাসহ আশপাশের কয়েকটি কারখানায় ইটপাটকেল ছুড়ে ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে শিল্প ও থানা পুলিশ শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

জানা গেছে, আজ সকাল ৯টার দিকে মহানগরের নাওজোড় বাইপাস সড়ক এলাকায় বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা একই দাবিতে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা মহাসড়কে পুরাতন টায়ার ও কাঠ-বাঁশ জড়ো করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। বাসন থানা পুলিশ, র্যাব ও শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরাতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে তারা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এ সময় পুলিশ ও শ্রমিকদের মধ্যে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। পরে পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নেয়। বিকেলে অন্দোলনরত শ্রমিকরা মহানগরের কোনাবাড়ি ফ্লাইওভারের পাশে তুসুকা পোশাক কারখানায় প্রবেশ করে ভাঙচুর করেন। পুলিশ সেখানে গেলে শ্রমিকরা কারখানার পেছন দিক দিয়ে এবং বাউন্ডারি দেওয়াল টপকে চলে যান। পরে পার্শ্ববর্তী আমবাগ সড়কে জড়ো হয়ে এম এম নীট ওয়্যার কারখানায় ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর করেন এবং সড়কে কাঠ-বাঁশ জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় আশপাশের দোকানপাট বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। থানা ও শিল্প পুলিশ, র্যাব বিজিবির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে শ্রমিকরা তাদের ওপরও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় শ্রমিক পুলিশের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে বিকেল ৫টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ ঘটনায় পুলিশ-শ্রমিকসহ অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন বলে শ্রমিকরা দাবি করেছেন।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) ইব্রাহীম খান বলেন, নগরের রওশনসড়ক এলাকায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ করলে বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। নাওজোর এলাকায় টায়ার ও কাঠ-বাঁশ জড়ো করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরাতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে তারা ইটপাটকেল ছোড়ে। পরে ধাওয়া, লাঠিপেটা ও টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

গাজীপুর কলকারখানা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আজ  বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মহানগরের কাশিমপুর এলাকায় ২০টি, কোনাবাড়িতে ৫০টি, নাওজোড় এলাকায় ১৮টি কারখানা বন্ধ রয়েছে। এদিকে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত কারখানায় অনির্দিষ্টকালের বন্ধের নোটিশ টাঙিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।