অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার লঙ্ঘন নিয়ে বহু বছরের বিতর্কের কারণে কর্মীদের কাফালা বা স্পন্সরশিপ বাতিল করতে যাচ্ছে সৌদি আরব। অজ্ঞাত সূত্রকে উদ্ধৃত করে সৌদি গ্যাজেট এখবর জানিয়েছে।
কয়েক দশক পুরনো কাফালা ব্যবস্থায় বিদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব শ্রমিকদের বেশীরভাগই দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিক। এই ব্যবস্থায় সৌদি নিয়োগকর্তাদের হাতে শ্রমিকদের পুরো দায়িত্ব ন্যস্ত থাকে। কিন্তু এর সুযোগ নিয়ে সৌদি আরবে শ্রমিকদের নির্যাতনের অভিযোগ আছে তাদের নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে।
১৯৫০-এর দশকে প্রবর্তিত এই ব্যবস্থায় প্রবাসী শ্রমিকদের তাদের নিয়োগকর্তা ও স্পন্সরের নির্দেশে চলতে হয়। এমনকি তাদের অনুমতি ছাড়া সৌদি আরবে আসা-যাওয়া করা যায় না। এক কথায়, নিয়োগকর্তারা শ্রমিকদের ভিসা ও আইনি অবস্থান নিয়ন্ত্রণ করেন। এই ব্যবস্থা শুধু সৌদি আরব নয়, পুরো উপসাগরীয় দেশগুলোতে প্রচলিত রয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটর’র খবরে বলা হয়েছে, শ্রমিকদের মূলত নির্মাণ ও গৃহকর্মে নিযুক্ত করা হয়। কাজের সময় তাদের বড় ধরনের নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয়। মজুরি না পাওয়া, কম মজুরি প্রদানসহ শারীরিক মারধরের মতো অভিযোগ নিয়মিত করছেন শ্রমিকরা। দুই বছর আগে কুয়েতে একটি ফ্রিজে ফিলিপাইনের এক শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল।
সৌদি গ্যাজেট’র খবরে বলা হয়েছে, কাফালা ব্যবস্থা বাতিলের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তাতে করে শ্রমিকদের সৌদি আরবে যাওয়া ও সেখান থেকে চলে আসার স্বাধীনতা থাকবে। এতে তাদের নিয়োগকর্তা বা স্পন্সরের অনুমোদন লাগবে না। এছাড়া সরকারি অনুমোদন ছাড়াই কাজে যোগ দিতে পারবেন শ্রমিকরা।
মিডল ইস্ট মনিটর’র খবরে আরও বলা হয়েছে, যদি এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয় তাহলে সৌদি আরবের প্রভাবশালী যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে এটি হবে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সংস্কার। যুবরাজের ভিশন ২০৩০ উদ্যোগে তেল সৌদি অর্থনীতিতে তেল নির্ভরতা কমিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
উপসাগরীয় দেশগুলোতে কাফালা ব্যবস্থা বাতিল নিয়ে দীর্ঘদিনে ধরেই আলোচনা হচ্ছে। এর মধ্যে কাতার এই ব্যবস্থায় কিছুটা সংস্কার এনেছে, দেশটিতে কর্মরত বিদেশি শ্রমিকরা নিয়োগকর্তার অনুমোদন ছাড়াই দেশত্যাগ করতে পারেন।
এর আগে ২০১৭ সালেও সৌদি আরব এই ব্যবস্থা বাতিলের উদ্যোগ নিচ্ছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করেছিল।