করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে বনরুই?

প্রকাশিত: ১০:৪৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২০

চীনে মহামারি আকার নেওয়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণ কি তবে প্যাঙ্গোলিন বা বনরুই? সংক্রমণের উৎস খুঁজতে গিয়ে বাদুড় পর আলোচনায় ওঠে এসেছে বিপন্ন এই বনরুইয়ের নাম। চীনা গবেষকদের সন্দেহের শীর্ষ রয়েছে এই বিপন্ন প্রাণীটি।

 

গুয়াংজু প্রদেশের সাউথ চায়না অ্যাগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা বলছেন, করোনাভাইরাস ছড়ানোর ক্ষেত্রে সন্দেহে থাকা এক হাজারেরও বেশি বন্যপ্রাণীর নমুনা পরীক্ষা করে দেখা যায়, বনরুইয়ের শরীরে পাওয়া ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সের (কোষের সম্পূর্ণ ডিএনএ বিন্যাসের ক্রম) সঙ্গে করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সের ৯৯ শতাংশ মিল রয়েছে।

গায়ে আঁশযুক্ত একমাত্র স্তন্যপ্রায়ী প্রাণী বনরুইকে বলা হয় বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পাচার হওয়া প্রাণী। চীন ও ভিয়েতনামে আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় পিপীলিকাভুক এই প্রাণীর মাংস ও আঁশ ব্যবহার করা হয়। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের (২০১৯-এনসিওভি) আদি পোষক বাদুড় হলেও মানুষের মাঝে এর বিস্তারে আর একটি প্রাণীর ভূমিকা রয়েছে বলে গুয়াংজুর গবেষকরা মনে করছেন। তাদের ধারণা, সেই প্রাণীটি হল প্যাঙ্গোলিন বা বনরুই।

 

ভাইরোলজির ভাষায়, এই ধরনের পোষক প্রাণীকে বলা হয় মধ্যবর্তী বাহক। তবে চীনা বিজ্ঞানীদের গবেষণার এই ফল কতটা বিশ্বাসযোগ্য, তা নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন ব্রিটেনের বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, নিশ্চিত করে বলার আগে এ নিয়ে আরও বিশদ গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

 

গত ৩০ ডিসেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হুঁশিয়ার পর নতুন করোনাভাইরাস শনাক্ত করে চীন। হুবেই প্রদেশের উহান শহরের একটি সি-ফুড মার্কেট থেকে ওই ভাইরাস ছড়িয়েছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। গোড়ার দিকে সাপ ও বাদুড়ের দিকে ইঙ্গিত ছিল অনেকের। আবার বিজ্ঞানীদের আরেকটি অংশের বক্তব্য ছিল, করোনাভাইরাস সাপকে পোষক হিসেবে ব্যবহার করে। যদিও এমন কোনো প্রমাণ কখনও মেলেনি।

চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার খবরে বলা হয়, হাজারের বেশি বন্যপ্রাণীর ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে বনরুইয়ের শরীরে পাওয়া জিন বিন্যাসের সঙ্গেই নভেল করোনাভাইরাসের গঠনের সবচেয়ে বেশি মিল পেয়েছেন তারা। আর তাতে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের পথ খুঁজে পাওয়া সহজ হতে পারে।

 

তবে ওই গবেষণার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন কোনো জার্নালে প্রকাশিত না হওয়ায়, এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক জেমস উড। তার বক্তব্য, চীনা গবেষকদের এই দাবি একেবারেই প্রাথমিক ধারণার ওপর ভিত্তি করে। এ থেকে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর সুযোগ কম।