‘দম’ সিনেমা দুই বাংলা মিলিয়ে নতুন কোনো দিগন্তের সূচনা করবে

প্রকাশিত: ২:৫০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১০, ২০২৩

বিনোদন প্রতিবেদকঃ
বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায় শুরু হতে চলেছে। সিনেমার জন্য একত্র হয়েছে বাংলাদেশের চরকি, আলফা আই ও ভারতের স্বনামধন্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসভিএফ ফিল্মস। তিন প্রতিষ্ঠানের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হতে যাচ্ছে বড় পর্দার দুটি সিনেমা। এর মধ্যে একটির ঘোষণা দেওয়া হয় গতকাল শনিবার। ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে গতকাল বিকেল পাঁচটায় অনুষ্ঠিত হয় এক সংবাদ সম্মেলন। এতে জানানো হয়, দীর্ঘ বিরতির পর নির্মাণে ফিরছেন পরিচালক রেদওয়ান রনি। দম নামে সেই ছবিতে অভিনয় করবেন চঞ্চল চৌধুরী। ‘দম’ ছবির সংবাদ সম্মেলনে শাহরিয়ার শাকিল, মহেন্দ্র সোনি, রেদওয়ান রনি, চঞ্চল চৌধুরী ও যারেফ হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে এ–ও জানানো হয়, আগামীকাল সোমবার একই সময়ে একই মিলনায়তনে আরেকটি সিনেমার ঘোষণা আসবে। এ ছবির সঙ্গেও যুক্ত থাকবে এই তিন প্রতিষ্ঠান। দুই দশকের নির্মাণজীবন পরিচালক রেদওয়ান রনির। এই সময়ে তিনি শতাধিক নাটক ও টেলিছবি বানিয়েছেন। ছোট পর্দার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বড় পর্দায়ও বানিয়েছেন দুটি চলচ্চিত্র। ‘চোরাবালি’ ও ‘আইসক্রিম’ নামের ছবি দুটির জন্য প্রশংসা কুড়িয়েছেন রনি। ছবি দুটি নির্মাণের পর নতুন ছবি কেন বানাচ্ছেন না, এ নিয়ে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাঁকে। সেই প্রশ্নের উত্তর গতকাল সন্ধ্যায় মিলেছে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দম ছবি দিয়ে নির্মাণে ফিরছেন রেদওয়ান রনি। দীর্ঘ সাত বছর পর ছবি নির্মাণে আসার বিষয়টিকে নির্মাতা রনি জানালেন, খানিকটা দম নেওয়ার পর নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরলেন তিনি। সত্য ঘটনা অবলম্বনে ছবিটি তৈরি হবে, এমনটাই আভাস দেওয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে। বিরতি শেষে নির্মাণে ফেরা প্রসঙ্গে পরিচালক রেদওয়ান রনি বলেন, ‘সত্য ঘটনা আমাকে সব সময়ই অনুপ্রাণিত করে। অনেক বছর পর চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষুধা মেটানোর জন্য এই গল্পই আমাকে তাড়িত করছিল। সাধারণ মানুষের ভয়াবহ মানসিক শক্তি তাকে যেকোনো ভয়ংকর বিপদ থেকে বাঁচিয়ে তুলতে পারে নিমেষেই। দম চলচ্চিত্রে এই গল্পই বলার চেষ্টা করছি।’ দুই বাংলার যৌথ প্রযোজনার সিনেমাটি নিয়ে রেদওয়ান রনি বলেন, ‘কাজটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুই বাংলার সিনেমার কান্ডারিরা।

এসভিএফ, আলফা ও চরকি—সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।’ ‘দম’ সিনেমার মূল চরিত্রে অভিনয় করবেন চঞ্চল চৌধুরী। পরিচালক রেদওয়ান রনির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা প্রায় ২০ বছরের, এমনটাই বলছিলেন অভিনেতা নিজে। সিনেমায় চঞ্চলের বিপরীতে কে অভিনয় করবেন, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানালেন পরিচালক রেদওয়ান রনি। আরও উপস্থিত ছিলেন পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, আদনান আল রাজীব, অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা, মাসুমা রহমান নাবিলা প্রমুখ। চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘রনির সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কটা অনেক দিনের। চরকি যখন শুরু হয়, তখনো তাকে সিনেমা বানাতে বলতাম। ফাইনালি সে আমার গলায় দড়িটা ঝুলিয়েছে। এবারের সিনেমার গল্প যখন রনি আমাকে শুনিয়েছে, তখন আমি হতবাক হয়েছি। অসাধারণ একটা গল্প। আমার চরিত্রটা বেশ চ্যালেঞ্জের। সেই সঙ্গে অনেক আয়োজন ও বিগ ক্যানভাসের সিনেমা দম। আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগছে, একই সঙ্গে চরকি, এসভিএফ, আলফা আইয়ের মতো বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আমাদের এই সিনেমার সঙ্গে আছে। এই সিনেমা দুই বাংলা মিলিয়ে নতুন কোনো দিগন্তের সূচনা করবে।’ আলফা আই স্টুডিওজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার শাকিল বলেন, ‘আলফা আই স্টুডিওজ সব সময় বাংলাদেশের বিনোদনজগতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। একটি অগ্রগামী চিন্তার প্রোডাকশন হাউস। আমরা আগেই বুঝতে পেরেছিলাম যে বাঙালি দর্শক ভালো মানের কনটেন্ট দেখতে চান। আমরা প্রতিবারই সেটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এবার আলফা, এসভিএফ ও চরকি এক হয়েছি বাংলা চলচ্চিত্রের বাজারকে উন্নত করতে এবং বিশ্বব্যাপী দর্শকের কাছে পৌঁছাতে।’ ভারতের অন্যতম বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসভিএফ ফিল্মস, ২৮ বছর ধরে যারা একাই বদল করে চলেছে বাংলা সিনেমার ইতিহাস। ‘রেইনকোট’, ‘চোখের বালি’, ‘অটোগ্রাফ’, ‘২২শে শ্রাবণ’-এর মতো অনেক সিনেমা দিয়ে তারা বাংলা সিনেমার ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। এসভিএফের পরিচালক ও সহপ্রতিষ্ঠাতা মহেন্দ্র সোনি বলেন, ‘চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্যোগী হয়ে বাংলাদেশের বিনোদনশিল্পের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে আরও গভীর করার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছে এসভিএফ। আমরা শুধু চলচ্চিত্র নির্মাণ করছি না, বাংলা সিনেমাকে উদ্যাপন করে আমরা একটি সম্প্রদায়, একটি সংস্কৃতিকে লালন করছি। আমাদের লক্ষ্য বাংলা ভাষার সিনেমাকে আন্তর্জাতিক মানে তৈরি করে বিশ্বের প্রতিটি কোনায় পৌঁছে দেওয়া।’ চরকির প্রেসিডেন্ট স্ট্র্যাটেজিপ্রধান যারেফ হোসেন বলেন, ‘শুরু থেকেই চরকির লক্ষ্য ছিল সারা বিশ্বের বাংলাভাষীদের কাছে মানসম্পন্ন কনটেন্ট পৌঁছে দেওয়া। এবার চরকি, আলফা আই ও এসভিএফ একসঙ্গে সেই মিশনকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এক হয়েছে। আমাদের বিনোদনশিল্পের কাজকে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়ার এটি একটা বড় সুযোগ ও উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হতে চলেছে।’ যারেফ হোসেন আরও বলেন, ‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল, এখনো আছে—বাংলাদেশি এন্টারটেইনমেন্ট এবং বাংলাদেশি শিল্পীদের জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম দেওয়া। সারা পৃথিবীতে ৩০ কোটি বাঙালি ছড়িয়ে আছে। তাই এই খাতের সম্ভাবনাও অনেক। আমরা মনে করি, এই ৩০ কোটি বাঙালিকে মানসম্মত কনটেন্ট দিতে হলে আমাদের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। যাত্রা শুরুর প্রথম দিন থেকে আমরা একটা বিষয়ে পরিষ্কার ছিলাম, দ্যাট চরকি ইজ গোয়িং টু বি বিল্ট ওপেন আর্কিটেকচার। আমরা বাংলাদেশের অসাধারণ প্রতিভাদের নিয়ে কাজ করতে চেয়েছি, একই সঙ্গে দেশের বাইরেও একসঙ্গে কাজ করতে চেয়েছি। আমি মনে করি, এই ওপেন আর্কিটেকচারের একটা ফলাফল আজকের দিনটা, যেটা আমরা এখন দেখছি। চরকি আড়াই বছরে এত দূর আসবে, এটা আমাদের চিন্তার বাইরে ছিল। আজ আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, চরকি পৃথিবীর ১৯০ দেশ থেকে দেখছে। প্রতি মাসে চার লাখ ঘণ্টা স্ট্রিমিং হচ্ছে। চরকি এখন একটা গর্বের বিষয়; কারণ, এই প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলাদেশি অভিনয়শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজকদের দিয়ে বানানো কনটেন্ট পৃথিবীর সবাই দেখছে।’ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২৫ সালে ছবিটি মুক্তি পাবে। দম ছবির চিত্রনাট্য লিখছেন সৈয়দ আহমেদ শাওকী, আল-আমিন হাসান নির্ঝর, সাইফুল্লাহ রিয়াদ, রবিউল আলম রবি ও রেদওয়ান রনি নিজেই। শাওকী বলেন, ‘বছরখানেক আগে গল্পটি নিয়ে রনি ভাইয়ের সঙ্গে আলাপ হয়। এরপর অনেক দিন খবর নেই। তারপর তাঁকে জিজ্ঞেস করি, আপনি সিনেমাটি না বানালে এই গল্পে আমি সিনেমা বানাতে চাই। অবশেষে তিনি কাজটি করতে যাচ্ছেন। গল্পের কাজ চলছে।’