ক্রেতা সংকটে পেঁয়াজের ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ৬:১৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৩, ২০২৩

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

দেশের প্রধান ভোগ্যপণ্যের বাজার চাকতাই-খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম কমেছে। বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) মানভেদে পেঁয়াজের দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে। বাজারে চীন এবং ভারতীয় পেঁয়াজের পাশাপাশি দেশীয় মুড়িকাটা পেঁয়াজে ভরে গেছে।

দুপুরে সরেজমিন চাকতাই-খাতুনগঞ্জের আড়তগুলো পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, সবকটি আড়তেই পেঁয়াজে ভরপুর। গুদামের পাশাপাশি বাইরেও বস্তায় বস্তায় পেঁয়াজের স্তূপ। তবে আশানুরূপ ক্রেতা না থাকায় বিক্রিও কম।

বুধবার ভারতীয় পেঁয়াজ মানভেদে কেজিপ্রতি বিক্রি হয় ১১০ থেকে ১২৫ টাকা, চীনা পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকা এবং দেশীয় মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। পাইকারিতে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কমলেও খুচরায় এখনও ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় পেঁয়াজ। দেশীয় পেঁয়াজ ১০০ টাকা এবং চীন ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিন দুপুর ১টায় কথা হয় খাতুনগঞ্জের ‘বাঁচা মিয়া সওদাগর’ আড়তের ম্যানেজার মো. আইয়ুবের সঙ্গে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজ (বুধবার) খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজে ভরপুর। তবে ক্রেতা কম। এখন পর্যন্ত আমরা এক কেজি পেঁয়াজও বিক্রি করতে পারিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারতীয় পেঁয়াজ মানভেদে ১০০ থেকে ১৩০ টাকা, চীনা পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকা এবং দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। কেজিপ্রতি পেঁয়াজ ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। যেহেতু বাজারে দেশি পেঁয়াজ চলে এসেছে সেহেতু পেঁয়াজের দাম আরও কমে আসবে।’

অপর আড়ত ‘আল হাকিম বাণিজ্যালয়’-এর পরিচালক শাহাদাত শামীম বলেন, ‘আজ পেঁয়াজের দাম কমে গেছে। ভারতীয় পেঁয়াজের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা পেঁয়াজ চাকতাই-খাতুনগঞ্জে আনা হয়েছে। একই সঙ্গে আনা হয়েছে দেশীয় মুড়িকাটা পেঁয়াজও। যার কারণে পেঁয়াজের দাম কমেছে। তবে দাম কমলেও এখানে আশানুরূপ ক্রেতা নেই। এরকম থাকলে ২-৩ দিনের মধ্যে দাম আরও কমে আসবে। কেননা, পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য। ৩-৪ দিনের বেশি বস্তায় রাখা যায় না। যে কারণে ব্যবসায়ীদের বাধ্য হয়ে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হবে।’
চাকতাই আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রফিক বলেন, ‘পেঁয়াজের ঝাঁজ কমে গেছে। কেজিপ্রতি ১০০ টাকা ১২০ টাকা পর্যন্ত কমলেও কেনার মতো ক্রেতা নেই। মঙ্গলবার থেকে চাকতাই-খাতুনগঞ্জে দেশীয় মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসা শুরু করেছে। দুই দিনে অন্তত ১২ ট্রাক দেশীয় পেঁয়াজ এ বাজারে আনা হয়েছে। সে সঙ্গে প্রচুর ভারতীয় এবং চীনের পেঁয়াজ এসেছে। যার কারণে দাম আপনা-আপনি কমে গেছে।’

চাকতাই আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কাশেম বলেন, ‘বাজারে প্রচুর পেঁয়াজ। এখন কেজিপ্রতি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ১২৫ টাকা, চীন থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকা এবং দেশীয় মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে একশ্রেণির আমদানিকারক বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। মুহূর্তেই টেলিফোনে যারা পেঁয়াজের বাজার অস্থির করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে বলেছি। পাশাপাশি কারা এর জন্য দায়ী তাদের তথ্য দিয়েছি। যাতে ভবিষ্যতে বাজারে এ ধরনের অস্থিরতা তৈরি করে ফায়দা লুটতে না পারে।’
এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘দেশের পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে আমদানিকারকরা। এসব আমদানিকারকের বেশিরভাগই সীমান্তবর্তী জেলা হিলি, বেনাপোল, ভোমরা, সোনা মসজিদ এবং ঢাকার। কেননা, পেঁয়াজ বেশি আমদানি হয় ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে। যারাই আমদানিকারক তারাই বিক্রেতা। তারা যদি চট্টগ্রামে পেঁয়াজ পাঠায় তাহলে আমরা পাই, না পাঠালে পাই না। আবার তারাই ফোনে নির্ধারণ করে দেন কত টাকা করে এসব পেঁয়াজ বিক্রি করতে হবে।’

শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) থেকে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করেছে ভারত। ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশটি আর পেঁয়াজ রফতানি করবে না। এমন খবরে দেশের বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম।

ওই দিন থেকে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করা হয় ১০০ টাকা, চীনের পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। অথচ ভারত থেকে আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্তে শুক্রবার বিকাল থেকে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। শনিবার প্রতি কেজি পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জে বিক্রি হয় ২০০ টাকা থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত। যা খুচরা বাজারে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। যা মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) পর্যন্ত বিক্রি করা হয়।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রানা দেব নাথ বলেন, ‘অভিযান এবং নিয়মিত তদারকির কারণে পেঁয়াজের দাম কমেছে। কয়েকদিনের মধ্যে দাম আরও কমে আসবে।’