সাইফুল ইসলাম:
বেসরকারি বিশ্বাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসিউর রহমান শিশির (১৯)। ফ্রি ফায়ার ও পাবজি খেলার সহায়তার আশ্বাসে টার্গেট করতেন স্কুল-কলেজে পড়ুয়া কিশোরীদের। এরপর ফাঁদ পাততেন অনলাইনে পাবজি ও ফ্রি ফায়ার গেলার গ্রুপগুলোতে। শিশিরের পাতা ফাঁদে পা দেওয়া অল্প বয়সী কিশোরীদের নিয়ে গেমের দল গঠন করে শুরু করতেন প্রেম। এরপর মোবাইল নম্বর ও হোয়াটসঅ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আইডি নিয়ে নিয়মিত কথা বলতেন। পরবর্তীতে যা গড়ায় প্রেমের সম্পর্কে। এরপর গোপনে প্রেমিকার সঙ্গে আপত্তিকর মুহূর্তের ভিডিও ও ছবি তুলে রাখতেন শিশির। আর এগুলোকে হাতিয়ার বানিয়ে আরও আপত্তিকর ছবি-ভিডিও ও টাকা-পয়সা আদায় করতেন। আজ মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান ডিবি সাইবারের ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের ইনচার্জ অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) আশরাফউল্লাহ।
তিনি বলেন, এক বছরে অন্তত ২০ কিশোরী শিশিরের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি তার। এক ভুক্তভোগীর অভিযোগেরে পরিপ্রেক্ষিতে তাকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ। সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার মোল্লাপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন, দুটি সিম ও ১৯টি এডিট করা অশ্লীল ভিডিও উদ্ধার করা হয়েছে।
এডিসি আশরাফউল্লাহ বলেন, তাসিউর রহমান শিশির ৩/৪ বছর ধরে ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেমে আসক্ত। এ গেমসগুলো খেলার জন্য এক বা একাধিক পার্টনারের প্রয়োজন হয়। শিশির গেমস দুটি খেলার সময় সবসময় কিশোরী ও তরুণীদের টার্গেট করে তার খেলার পার্টনার হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। কোনো কিশোরী-তরুণী এ গেমস খেলার সময় তার পার্টনার হলে তাদের সঙ্গে সে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে। ফ্রি ফায়ার বা পাবজি গেমস খেলার সময় পার্টনাদের সঙ্গে অনলাইনে সংযুক্ত থেকে আলোচনা করে গেমস খেলার কৌশল ঠিক করতে হয়। তরুণী বা কিশোরীদের ফাঁদে ফেলার জন্য গেম দু’টি খেলার সময় পার্টনার হিসেবে কিশোরীদের খুঁজে বের করে সুকৌশলে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর, হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর, ইনস্টাগ্রাম আইডি অথবা ফেসবুক আইডি হাতিয়ে নিতো। পরবর্তীতে তাদের মোবাইল নম্বর, হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর, ইনস্টাগ্রাম আইডি অথবা ফেসবুক আইডির মাধ্যমে যোগাযোগ করে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে। বন্ধুত্ব চলাকালে তাদের বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে ভিডিও কলে কথা বলে। একসময় মেয়েদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে সে। বিভিন্ন সময় সে ওই সব কিশোরীকে অনলাইন থেকে সংগৃহীত নগ্ন ছবি ও অশ্লীল ভিডিও পাঠিয়ে দিয়ে তাদের ভিডিও-কলে আসতে প্রলোভিত করতেন। মেয়েদের বিভিন্ন কৌশলে ভিডিও কলে এনে তা স্ক্রিন রেকর্ডারের মাধ্যমে রেকর্ড করে রাখে।পরবর্তীতে এসব ছবি ভিডিও প্রচারের ভয়ভীতি দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করে এবং মোটা অংকের টাকা দাবি করে।
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, একটি মামলা তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায়, মামলার বাদীর বোনের সঙ্গে প্রায় এক বছর আগে ফ্রি ফায়ার গেম খেলার মাধ্যমে তাসিউর রহমান শিশিরের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর ব্যবহৃত ইনস্টাগ্রাম আইডি নেয় শিশির। এরপর উভয়ের মধ্যে কথোপকথনের একপর্যায়ে ভুক্তভোগীকে ফুসলিয়ে ইনস্টাগ্রামে ভিডিও চ্যাটিং শুরু করে শিশির। কৌশলে ওই কিশোরীর ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে রাখে সে। পরবর্তীতে শিশিরের সঙ্গে সম্পর্ক চলাকালে কিশোরীকে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য এবং আপত্তিকর সম্পর্কে জড়ানোর জন্য কু-প্রস্তাব দেয়। এ প্রস্তাবে কিশোরী রাজি না হওয়ায় সে উদ্দেশ্যেমূলকভাবে তার কাছে থাকা ভিডিও ও ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এভাবে সে প্রায় ২০ কিশোরীকে ফাঁদে ফেলেছে।
এ ধরনের প্রতারণা থেকে রক্ষায় ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেম খেলা হতে বিরত থাকা। অপরিচিত কাউকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধুত্ব না করা। যেকোনো ব্যক্তির সঙ্গে লাইভ ভিডিও চ্যাটিং না করা। অপরিচিত কাউকে আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও শেয়ার না করা। মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করা। প্রতারিত হলে পুলিশের সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ইউনিটের এডিসি আশরাফউল্লাহ।