ক্রীড়া ডেস্ক:
ফর্টিস এফসির ভেন্যু রাজশাহীতে। ২২ ডিসেম্বর লিগের উদ্বোধনী দিনে ফর্টিসের ভেন্যুতে মোহামেডানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে একটুর জন্য হারতে হয়েছিল ফর্টিসকে। ১-১ গোলে খেলা চলছিল। মোহামেডান শেষ মুহূর্তে গোল করে (২-১) কোনো রকমে প্রাণ বাঁচিয়েছিল। ৩ পয়েন্ট নিয়ে ফিরে আসে। এবার ওই একই মাঠে আবাহনী খেলতে গিয়ে হেরে এসেছে। পুরো ৩ পয়েন্ট হারিয়ে ফিরেছে।
মোহামেডান হাত ফসকে গেলেও আবাহনী পার পায়নি। ড্রয়ের পর হারের মালা গলায় পরল আবাহনী। আবাহনীর মন খারাপ। শনির রাহু ভর করেছে। লিগের প্রথম দুই ম্যাচে ৫ পয়েন্ট গেছে। প্রথম ম্যাচে রহমতগঞ্জের বিপক্ষে (১-১) ড্র করে ২ পয়েন্ট লস। আর গতকাল ফর্টিস এফসির কাছে ১-০ গোলে হেরে আবাহনী আরও ৩ পয়েন্ট হারাল। দুই ম্যাচে বিরাট গচ্চা দিল আবাহনী। ড্রয়ের জ্বালা শেষ না হতে হারের জ্বালা নিয়ে ক্লাবে ফিরতে হলো আবাহনীকে। কারো মন ভালো নেই। ম্যানেজার নজরুল ইসলাম, প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার, দেশকে ট্রফি দিয়েছেন। রক্ষণভাগের এই প্রাক্তন অকপটে স্বীকার করলেন তার দল ভালো খেলতে পারেনি।
আবাহনী গোল হজম করেছে ৩৭ মিনিটে। এরপরও ৫৩ মিনিট সময় পেয়েছিল। গোল রির্টান করতে পারেনি। এই জ্বালা মেনে নিতে পারছেন না আবাহনী। গোলের সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে না পারায় কর্মকর্তারা দুষছেন ফরোয়ার্ডদের। আর ফর্টিসের কোচ মাসুদ কায়সার পারভেজের দাবি তারা আরও বড় ব্যবধানে জয় পেতে পারতেন যদি দুটা নিশ্চিত সুযোগ নষ্ট না হতো। গাম্বিয়ান ফরোয়ার্ড ওমর সার বাইরে মেরে সুযোগ নষ্ট করেছেন আর ম্যাচ জয়ের নায়ক ইউক্রেনের ফরোয়ার্ড ভ্যালেরির শট আবাহনীর গোলরক্ষক শহিদুল আলম সোহেল কর্নার করে ঠেকিয়ে দিয়েছেন। আফসোসে পুড়েছেন ফর্টিসের কোচ, কর্মকর্তা, ফুটবলাররা।
কায়সার জানালেন খেলাটা আক্রমণ পালটা আক্রমণেই হয়েছে। তবে আবাহনী ওপেন সুযোগ পায়নি। যেটা আমরা পাওয়া মাত্রই কাজে লাগাতে পেরেছি।’ পয়েন্ট টেবিলে আবাহনীর অবস্থান এখন ৮ নম্বরে। ২ খেলায় ১ পয়েন্ট।
ফর্টিসের আগের দলটা এখন নাই। ৬ জন ভালো মানের ফুটবলার বেরিয়ে গেছে। এখন যেটা রয়েছে সেখানে তরুণ ফুটলারদের আধিক্য। কোচ কায়সার জাতীয় দলের সঙ্গে কাজ করেছেন। অভিজ্ঞতায় পিছিয়ে নেই। আবাহনীর কোচ আর্জেন্টিনার আন্দ্রেস ক্রুসিয়ানি। তার পরিকল্পনার সঙ্গে পেরে ওঠা খুব একটা কঠিন না সেটা বুঝিয়ে দিলেন মোহামেডানের প্রাক্তন ফুটবলার মাসুদ কায়সার।
ম্যাচ জয়ের নায়ক ভ্যালেরি ইউক্রেন থেকে এসেছেন। ২০১৯ সালে একবার শেখ রাসেলে খেলে গেছেন। চলে গিয়েছিলেন কম্বোডিয়া। সেখানে চার বছর লিগ খেলে এখন ঢাকায়। ইউক্রেনে যুদ্ধ বিধ্বস্ত পরিস্থিতিতে বাবা মাকে রেখে বিভিন্ন দেশে ফুটবল খেলছেন। ইউক্রেন যুদ্ধে এখনো তার পরিবারের কারো ক্ষতি না হলে একটা সময় তার পরিবারকে আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হতো। ভ্যালেরি আতংকের মধ্যে কাটিয়েছেন প্রতি মুহূর্ত। কখন কোন খবর আসে, ভয়ে বুকটা দুরুদুরু করত।
কারণ ভ্যালেরির বাড়িটা ছিল বিপজ্জনক জায়গায়। প্রচুর বোমা পড়েছে, দূরে বোমা পড়লেও ভয়ানক শব্দে কেঁপে উঠত তার পরিবার। সেই সব ভয়ের কথাগুলো মাঝে মাঝে পাড়তেন এখনকার সতীর্থ ফুটবলারদের সঙ্গে। ভ্যালেরি এখন ভালো আছেন। যুদ্ধের বোমা এখন আতঙ্কিত করে না। সয়ে গেছে। তাই খেলায় মন দিচ্ছেন। এই ভ্যালেরি কাল জিতিয়েছেন ফর্টিসকে, আবাহনীর বিপক্ষে তার একমাত্র গোলে। এর আগে একবার মোহামেডানের জালেও গোল করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।