নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ভোটের দিন ফুল স্পিড ইন্টারনেট থাকবে, ৭২টি এলাকাকে দুর্গম ঘোষণা, এসব এলাকার ফলাফল হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানোর নির্দেশ, ভোটের নিরাপত্তা পরিকল্পনা জানল যুক্তরাষ্ট্রের দুই পর্যবেক্ষক সংস্থা নির্বাচন কখনো হালকাভাবে নেওয়ার বিষয় নয়—মন্তব্য করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘যতদূর সম্ভব নির্বাচনটাকে দৃশ্যমানভাবে স্বচ্ছ করতে হবে। নির্বাচনকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হবে। আন্তর্জাতিক কমিউনিটির কাছে আমাদের দেখাতে হবে নির্বাচনটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে।’
গতকাল সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। বিচারকদের নির্বাচনে সহিংসতা বন্ধে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে কিছুটা উত্তাপ হবে, কিছুটা গণ্ডগোল হতে পারে, কিছুটা সহিংসতা হতে পারে। এগুলো খুব বেশি ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। কিন্তু যেটা অসামান্য সহিংসতা সেটা অবশ্যই প্রতিরোধ করতে হবে। কিছু কিছু সহিংসতা হচ্ছে। সহিংসতাকে কোনোভাবেই বরদাস্ত করা উচিত নয়। কারণ এটা জনমনে ভীতির সৃষ্টি করে। আমরা কখনো রক্ত দেখতে চাই না। এজন্য এটা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছি।’সিইসি বলেন, ‘অনেক সময় কূটনীতিকরা এসে আমাদের বলেন, নির্বাচনটা ভালো হতে হবে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে হবে। এ কথা বলার অধিকার ওনাদের রয়েছে। আন্তর্জাতিক কমিউনিটির অংশ হিসেবে এ দাবি তারা করতেই পারেন। নির্বাচনে কারচুপি, কেন্দ্র দখল, পেশিশক্তির ব্যবহার, কালোটাকা বিতরণসহ নানা ধরনের অনিয়ম হয়। এগুলো প্রতিরোধ করে নির্বাচনটাকে দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে। বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হবে।’
ভোটারদের মধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে একটি আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় গেলে ভোটাররা প্রশ্ন করেন আমরা ভোট দিতে পারব তো! যে কোনো কারণেই একটা অনাস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে সেটা প্রতিরোধ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। যে কারণে সেটা ভোটদানে সর্বজনীন হয়ে ওঠেনি। সেখানে সহিংসতা হয়েছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনটা অংশগ্রহণমূলক হয়েছে এবং শান্তিপূর্ণ হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে সেই নির্বাচন নিয়েও বিতর্ক উত্থাপিত হয়েছিল। বিতর্কের অবস্থাটা জানি না, কিন্তু বিতর্ক হয়েছে। পাবলিক পারসেপশনটা ইতিবাচক হয়নি, এটাই সত্য।’
সিইসি আরও বলেন, অনেকেই বলেন উনারা যদি নির্বাচনটা তিন মাস পিছিয়ে দিতেন, তাহলে ভালো হতো। কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যবদ্ধতা হয়নি। প্রথমত, তিন মাস পিছিয়ে দেওয়ার কোনো রকম এক্তিয়ার নির্বাচন কমিশনের নেই। অনেকেই একটি বিভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে পড়েন, মনে করেন নির্বাচন কমিশন অসীম ক্ষমতার অধিকারী; প্রয়োজনে তিন মাস, তিন বছর বা ৩০ বছর পিছিয়ে দিতে পারে; এগুলো সত্য নয়।
ভোটের দিন ফুল স্পিডের ইন্টারনেট থাকবে :ভোটের দিন সব অপারেটরের ইন্টারনেট ফুল স্পিডে থাকবে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব জাহাংগীর আলম। গতকাল সোমবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। এ সময় ভোটের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে আগের দিন ৬ জানুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানাবেন বলেও তথ্য দেন ইসি সচিব। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
দুর্গম এলাকার ফলাফল হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানোর নির্দেশ: দুর্গম এলাকার ভোটের ফলাফল ভেরিফাইড হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পাঠাতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল ইসির উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা পাঠান। এর আগে ২৫ জেলার ৭২টি এলাকাকে দুর্গম ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
ভোটের নিরাপত্তা পরিকল্পনা জানল যুক্তরাষ্ট্রের দুই পর্যবেক্ষক সংস্থা :নির্বাচন কমিশন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নিরাপত্তা পরিকল্পনা জানল যুক্তরাষ্ট্রের দুই নির্বাচনি পর্যবেক্ষক সংস্থা আইআরআই ও এনডিআই। সোমবার সন্ধ্যায় আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে যুক্তরাষ্ট্রের দুই সংস্থার সঙ্গে বৈঠক শেষে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কমিশনের মিটিং হয়েছে। বৈঠকে তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চেয়েছিল। আমাদের নিরাপত্তা পরিকল্পনা ও নির্বাচনি মালামাল কীভাবে পৌঁছাবে; কোড অব কন্ডাক্টে মাইনরিটি ইস্যুগুলো আছে কি না, এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিস্তারিত বিষয় তারাও মিডিয়াকে বলবে না। আমাদেরও বলতে না করেছে।
বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আওয়াল, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, আনিসুর রহমান, ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে বৈঠকে অংশ নেওয়া ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই)-এর সদস্যরা হলেন মিসেস নাতাশা রথচাইল্ড, মি. ইভো পেন্টচেভ, মিসেস মারিয়াম তাবাতাদজে, মি. ক্রিস্পিন কাহেরু এবং মি. নিনাদ মারিনোভিক।
২ কোটি টাকা চায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় : এদিকে পর্যবেক্ষকদের দেখভালের জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে ২ কোটি টাকা চেয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের নির্বাচন সহায়তা সেলের পরিচালক সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে এমন চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, এবারের নির্বাচনে প্রায় ৩০০ জনের মতো বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। তবে নির্বাচন কমিশন যাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে তাদের স্থানীয় সব ব্যয় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন বহন করবে।