আদালতের রায়েই ড. ইউনূস দণ্ডিত, আ. লীগের কোনও দায় নেই: ওবায়দুল কাদের
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
জাহাঙ্গীর আলম মিয়া :
নোবেলবিজয়ী ড. ইউনূসের সাজার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আদালতের রায়েই তিনি দণ্ডিত হয়েছেন। এখানে আওয়ামী লীগের কোনও দায় নেই। যে শ্রমিকদের তিনি পাওনা থেকে বঞ্চিত করেছেন, তারাই মামলা করেছে। এখানে আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা কেন?’
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
সোমবার (১ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান এবং নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চার জনের শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় একটি ধারায় ৬ মাসের কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছেন। একইসঙ্গে তাদের ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে ১০ দিনের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। একই মামলায় অপর একটি ধারায় ২৫ হাজার জরিমানা, অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছেন আদালত।
এই রায় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনার স্ট্যাটাস, পজিশন, ব্যক্তিত্বের উচ্চতা কি আইনের ঊর্ধ্বে? ড. ইউনূস সাহেব কি আইন-আদালতের ঊর্ধ্বে? শাস্তি কি তাকে আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে? যে শ্রমিকদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন তাদেরই মামলা, সেই মামলায় আদালত তাকে শাস্তি দিয়েছে। এখানে সরকারের কী করণীয় আছে। সরকার কেন এখানে সমালোচনার মুখে পড়বে? এটাতো যথাযথ নয়।’
‘বিএনপির কর্মসূচিকে রহস্যময়’, উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা অবাক হচ্ছি যে, তারা (বিএনপি) লিফলেট বিতরণ করতে যাচ্ছে ৪ তারিখ পর্যন্ত। পাশাপাশি কিছু কিছু খারাপ তথ্যও পাচ্ছি, হঠাৎ করে তারা গুপ্ত হত্যা, চোরগোপ্তা হামলা, ভয়ঙ্করভাবে এসবের প্রতি ঝুঁকে পড়তে পারে এবং সেই জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখন লিফলেট বিতরণের নামে নিরবতা বাইরে দেখানো হলেও তারা হঠাৎ করে সরব হয়ে উঠবে সশস্ত্র তৎপরতার মাধ্যমে, যা নির্বাচন বিরোধী। এরকম খবর আমরা পাচ্ছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ‘এখনও তো নিরবতার মধ্যে রয়েছে বিএনপি। তাদের লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি তো নিরীহ। এটাকে আন্দোলন বলবেন? তাদের আন্দোলনও হবে না। কোন লক্ষণও নেই। আমরা ওই অবস্থায় দেশ চালাবো না। আগামীবার আমরা আরও শক্তভাবে, সুশৃঙ্খলভাবে দেশ পরিচালনা করবো।’
স্বচ্ছ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আশাপ্রকাশ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘যদিও অশান্তির উপাদান এখানে আছে। অগ্নিসন্ত্রাস আছে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আছে। বাসে-ট্রেনে আগুন দেওয়া আছে। নির্বাচনে জনগণ যাতে আতঙ্কগ্রস্ত হয় এবং ভোট দিতে না যায় সে কারণে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বিএনপি ও তার দোসররা চালিয়ে যাচ্ছে।’
কাদের বলেন, ‘নির্বাচন থেকে পিছিয়ে পড়ার কোনও সুযোগ নেই। সংবিধান অনুযায়ী যে তারিখ নির্ধারিত হয়েছে তা থেকে পিছিয়ে আসার কোন সুযোগ নেই। যত বাধায় আসুক, যত সন্ত্রাস হোক, যা কিছু তারা করুক এবং লিফলেট বিতরণ করে জনগণকে নির্বাচন থেকে বিরত করার চেষ্টা করুক, এর কোনটাই এ নির্বাচন বন্ধ করতে পারবে না।’ বিএনপিকে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ জানিয়ে কাদের বলেন, ‘এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আমরা অবিচল, অটল। এ নির্বাচন অনুষ্ঠান ইতিহাস অর্পিত দায়িত্ব, গণতন্ত্র রক্ষার দায়িত্ব। মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ সংরক্ষণের দায়িত্ব। যেকোনও মূল্যে নির্বাচন, নির্বাচনি কর্মকাণ্ড সমাপ্ত করতে নির্বাচন কমিশনকে তাদের ভূমিকা পালনে যেকোন সহযোগিতা করতে আওয়ামী লীগ বদ্ধ পরিকর।’
বিএনপির নির্বাচনি বর্জনের কর্মকাণ্ড ঠেকাতে আওয়ামী লীগ প্রস্তুত কিনা এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি আগের চেয়েও বেশি। সবকিছু আমরা সময়মত সম্পন্ন করতে চাই। আমরা অবাধ, শান্তিপূর্ণ এবং জনগণের অংশগ্রহণের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। আমাদের প্রস্তুতি সন্তোষজনক।’
জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে কিনা এটা দেখতে হবে দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে তাদের কোনও টানাপোড়ন নেই। আমাদের সঙ্গে তাদের খুব ভালোভাবে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমরা পরস্পরের সহযোগী হবো, একটা ভালো নির্বাচনে ঐকমত্যে পৌঁছেছি। আমার মনে হয় না, তারা দলগতভাবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার গঠনের মতো আসনের ধারে-কাছে নেই জাতীয় পার্টি। সরকার গঠনের অনেক উপরে তারা প্রার্থী দিয়েছে। কোনও কোনও প্রার্থী কোনও অসুবিধার জন্য করতে পারছে না, সেটা তাদের ব্যাপার। নির্বাচনে কোনও সমস্যা নেই। যাদের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা হয়েছে তারা কেউ তো নির্বাচন থেকে সরে যায়নি।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন, সাহাবুদ্দিন ফরাজী প্রমুখ।