দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপি না থাকলেও চিন্তায় আ.লীগের দেড় ডজন কেন্দ্রীয় নেতা

প্রকাশিত: ২:৪০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৬, ২০২৪

সালমান ফজলুর রহমান, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, নুরুল ইসলাম নাহিদ, কাজী জাফর উল্লাহ, ফারুক খান ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া

ডেস্ক রিপোর্ট :
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল অংশ না নিলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দেড় ডজন নেতাকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হচ্ছে। রাজপথের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিবিহীন এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বহু নেতাকে ভাবতে হচ্ছে নিজের দলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নৌকার মনোনয়নবঞ্চিতদের নিয়ে; যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন।

সার্বিকভাবে নৌকার পালে বিজয়ের হাওয়া থাকলেও অনেক স্থানে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন ঈগল ও ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ২৯৯টি সংসদীয় আসনে লড়ছেন ২৮টি রাজনৈতিক দল। সব মিলিয়ে এক হাজার ৯৭০ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের ৪১ নেতার মধ্যে অন্তত ১৮ জন হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মুখে পড়ছেন।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা-৩ (খালিশপুর-দৌলতপুর) আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী এস এম কামাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার আসনে তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী আছেন। এখানে ভোটারদের ব্যাপক উৎসাহ আছে। গণসংযোগে হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশ নিচ্ছে। ৭ তারিখ (জানুয়ারি) কী হবে আল্লাহ জানেন। আমার টার্গেট ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসা।

এবারের নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে ২৯৮টি আসনে দলীয় প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা করেছিল আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে ১৪ দলের শরিকদের ছয়টি এবং জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসনে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া, তিনটি আসনে দলের মনোনীত প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়ায় নৌকা নিয়ে এবার নির্বাচন করছেন ২৬৩ জন।

এর মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদের ৪১ নেতা রয়েছেন।

জাতীয় পার্টি বা স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সালমান এফ রহমান, রাজিউদ্দিন আহম্মেদ রাজু, নুরুল ইসলাম নাহিদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আব্দুর রহমান, সিমিন হোসেন রিমি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এস এম কামাল হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, কার্যনির্বাহী সদস্য সানজিদা খানম। তারা নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন।

সালমান ফজলুর রহমান

দলীয় সূত্র মতে, ঢাকা-১ (দোহার ও নবাবগঞ্জ) আসনে ভোটযুদ্ধে মুখোমুখি আওয়ামী লীগের সালমান ফজলুর রহমান ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সালমা ইসলাম। এ আসনে আরও পাঁচজন প্রার্থী রয়েছেন। এখানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু

নরসিংদী-৫ আসনে সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর বিরুদ্ধে লড়বেন স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী। এ ছাড়া, এ আসনে আরও সাত প্রার্থী রয়েছেন। নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত বর্ষীয়ান রাজনীতিক রাজুকে এবার কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে।

নুরুল ইসলাম নাহিদ

সিলেট-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ আসনে প্রার্থী হয়েছেন তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। সোনালী আঁশ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন তিনি। এ ছাড়া, এ আসনে আরও চার প্রার্থী রয়েছে। রাজনীতির নানা হিসাবনিকাশে এবার নুরুল ইসলাম নাহিদকে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হচ্ছে বলে ধারণা এলাকাবাসীর।

কাজী জাফর উল্লাহ

ফরিদপুর-৪ আসনে মুখোমুখি হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফর উল্লাহ এবং যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। এ ছাড়া, এ আসনে আরও পাঁচ প্রার্থী রয়েছেন। ভোটের মাঠে লড়াইয়ে এগিয়ে রয়েছেন কাজী জাফর উল্লাহ ও মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী জাফর উল্লাহ সম্পর্কে বর্তমান সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন বলেছেন, যে দুই-তিনবার পরাজিত হয় তিনি কেমন হেভিওয়েট? আমরা আসলে বুঝতে পারি না হেভিওয়েট প্রার্থী বলতে কী বোঝায়?

ফারুক খান

গোপালগঞ্জ-৩ আসনের নৌকার মাঝি লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান। এ আসনে মুকসুদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কাবির মিয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। তার সঙ্গে লড়াই করে জিতে আসতে হবে ফারুক খানকে।

মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া

চাঁদপুর-২ আসনে নৌকার মাঝি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তার সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী আন্তর্জাতিক উপকমিটির সদস্য এম ইসফাক আহসানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। মায়া চৌধুরীর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সমর্থন নিয়ে ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারেন এ স্বতন্ত্র প্রার্থী।

আব্দুর রহমান

ফরিদপুর-১ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমানকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলতে পারেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ্ মোহাম্মদ আবু জাফর। তিনিও এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। এ ছাড়া, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলন।

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর খেলার মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় আব্দুর রহমান বলেন, রাজনীতিতে মিথ্যাচার আমি করি না। আপনারা আপনাদের মহামূল্যবান ভোট টাকার কাছে বিক্রি করবেন না। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তোমার বয়স ৪৬ বছর। আমার রাজনীতির বয়সই ৫৭ বছর। আমি যেদিন মুক্তিযুদ্ধ করেছি সেদিন তুমি মায়ের পেটে পর্যন্ত আসোনি। তুমি আবার আমাকে নিয়ে বাজে বক্তব্য দিয়ে বেড়াও।

সিমিন হোসেন রিমি

গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সিমিন হোসেন রিমি। তাকে লড়তে হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী শিল্পপতি আলম আহমেদের সঙ্গে। এ আসনে আরও পাঁচ প্রার্থী রয়েছেন।

মাহবুব-উল আলম হানিফ

কুষ্টিয়া-৩ আসনে নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন কুষ্টিয়া পৌরসভার পাঁচবারের মেয়র আনোয়ার আলীর ছেলে পারভেজ আনোয়ার তনু। এ দুই প্রার্থীর মধ্যে এবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা।

ডা. দীপু মনি

চাঁদপুর-৩ আসনে মোট সাত প্রার্থীর একজন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এ আসনে দীপু মনির শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া। তিনি চাঁদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। এবার সেখানে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে পাশের আসনে দীপু মনির বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন তিনি।

আব্দুর রহমান, সিমিন হোসেন রিমি, মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, আবদুস সোবহান গোলাপ।

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন

জয়পুরহাট-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আট প্রার্থী। এ আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী হচ্ছেন আওয়ামী লীগের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। তিনি হুইপ ছাড়াও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির পাঁচবারের সাংগঠনিক সম্পাদক, জয়পুরহাট-২ আসনের দুবারের সংসদ সদস্য। স্বপনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. গোলাম মাহফুজ চৌধুরী।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ দীর্ঘদিন আক্কেলপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র, আক্কেলপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রুকিন্দিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

এস এম কামাল হোসেন

খুলনা-৩ আসনে লড়ছেন চার প্রার্থী। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েছেন এস এম কামাল হোসেন। ওই আসনের জাতীয় পার্টির লাঙ্গলের মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, জাকের পার্টির গোলাপ ফুলের এস এম সাব্বির হোসেন ও ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফাতেমা জামান রাজনীতিতে তেমন পরিচিত ব্যক্তি নন।

শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল

মৌলভীবাজার-২ আসনে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন। এখানে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য এম এম শাহীন। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও সংসদ সদস্য হয়েছিলেন তিনি।

আবদুস সোবহান গোলাপ

মাদারীপুর-৩ আসনে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। ঈগল প্রতীক নিয়ে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য তাহমিনা বেগম।

আবদুস সবুর

কুমিল্লা-১ আসনে নৌকার প্রার্থী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর। এ আসনে আট প্রার্থী নির্বাচন করছেন। তবে, নৌকার সঙ্গে ঈগল প্রতীকের প্রার্থী নাঈম হাসানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।