ভারত-মালদ্বীপের সাম্প্রতিক দ্বন্দ্ব নিয়ে যা বলল বেইজিং
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক লাক্ষা দ্বীপ সফরের জেরে ব্যাপক বাহাসে জড়িয়ে পড়া ভারত ও মালদ্বীপকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে চীন। সেই সঙ্গে নয়াদিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ না করতে মালদ্বীপকে পরামর্শও দিয়েছে বেইজিং।
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস সোমবার তার সম্পাদকীয় কলামে এ সম্পর্কে বলেছে, ‘চীন সবসময়েই মালদ্বীপকে তার সমপর্যায়ের অংশীদার মনে করে এবং মালদ্বীপের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে। একই সঙ্গে মালদ্বীপ ও ভারতের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককেও শ্রদ্ধা করে বেইজিং।’
‘এবং নয়া দিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখা যে মালদ্বীপের জন্য জরুরি— সে সম্পর্কেও বেইজিং সম্পূর্ণ অবগত। বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে চীনের সঙ্গে ভারতের দ্বন্দ্ব রয়েছে। কিন্তু বেইজিং কখনও মালদ্বীপকে টেনে আনবে না। সেই সঙ্গে আরও একটি গুরুত্বপূর্ন তথ্য হলো, মালদ্বীপ কিংবা ভারত— কোনো দেশকেই চীন অবন্ধুসুলভ কিংবা হুমকি বলে মনে করে না।’
‘উপরন্তু বেইজিং চায় চীন, ভারত ও মালদ্বীপের সমন্বয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি ত্রিপাক্ষিক জোট করতে। তবে এক্ষেত্রে নয়াদিল্লিকে মুক্ত মানসিকতা দিয়ে বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে এবং অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চীনের সহযোগীতামূলক সম্পর্ক একেবারে তুচ্ছ পর্যায়ে নেই।’
সোমবার কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করতে বেইজিং সফরে গিয়েছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু, যিনি ভারতবিরোধী চীনঘেঁষা রাজনীতিবিদ হিসেবেই নিজ দেশে পরিচিত। গত সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই মালদ্বীপ থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।
সম্প্রতি ভারতের সর্বদক্ষিণের রাজ্য কেরালার উপকূলবর্তী লাক্ষা দ্বীপে বেড়াতে গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই ভ্রমণের কিছু ছবি শেয়ার করেন তিনি।
তার এই ছবি প্রকাশের পর দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শীর্ষ পর্যটন দেশ মালদ্বীপের কয়েকজন মন্ত্রী ও রাজনীতিবিদ সমালোচনা করেন। তাদের বক্তব্য, ভারতীয় পর্যটকদের মালদ্বীপের পরিবর্তে লাক্ষা দ্বীপে ভ্রমণের বার্তা দিতেই এসব ছবি পোস্ট করা হয়েছে।
কিছু ছবিতে তাকে ‘জোকার’ বা ‘পুতুল’ বলে মন্তব্য করা হয়। আপত্তিকর মন্তব্য করা হয় ভারত-ইসরায়েল সম্পর্ক নিয়েও। পরে অবশ্য ব্যাপক সমালোচনার মুখে মালদ্বীপের মন্ত্রী-রাজনীতিকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সেসব মন্তব্য মুছে দিয়েছেন।
মালদ্বীপ সরকার প্রথম দিকে বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব না দিলেও পরে সে দেশের বিরোধী দলগুলিও এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে সরকারের সমালোচনা শুরু করে। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম সোলি (যাকে পরাজিত করে মুইজ্জু সম্প্রতি ক্ষমতায় এসেছেন) এবং আর এক সাবেক প্রেসিডেন্ট মহম্মদ নাশিদ মোদীর সমালোচনা করা মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের দাবি তোলেন। তাঁরা জানান, ভারত মলদ্বীপের গুরুত্বপূর্ণ ‘মিত্র’। সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে এমন মন্তব্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এর পরই ঘরে-বাইরে চাপের মুখে মুইজ্জু সরকার তিন মন্ত্রীকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়।
বরখাস্ত হওয়া তিন মন্ত্রী হলেন মরিয়ম শিউনা, মালশা শরিফ এবং মাহজুম মজিদ।
গ্লোবাল টাইমসের সোমবারের সম্পাদকীয় কলামের মাধ্যমে মালদ্বীপকে একদিকে যেমন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভালোর করার পরামর্শ দিয়েছে বেইজিং, তেমনি অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি সম্ভাব্য আঞ্চলিক জোট করতে মোহাম্মদ মুইজ্জুর নেতৃত্বাধীন সরকারকে তৎপর হওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে