ছেলেকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার অভিযোগে ভারতীয় নারী সিইও গ্রেপ্তার

প্রকাশিত: ৩:২৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১০, ২০২৪

ডেস্ক রিপোর্ট :

চার বছর বয়সী ছেলেকে হত্যার অভিযোগে ভারতের এক এআই স্টার্টআপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে (সিইও) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মায়ের ব্যাগে সন্তানের লাশ পাওয়ার পর বেঙ্গালুরুর ‘মাইন্ডফুল এআই ল্যাব’ এর প্রধান সূচনা শেঠকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে পুলিশ।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, শুধু সন্তানকে খুনই নয়, আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন সূচনা শেঠ। খুনের ঘটনার তদন্তে এই তথ্য পাওয়া গেছে। পুলিশ নিহত শিশুর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কর্নাটকের হিরিউর হাসপাতালে পাঠিয়েছিল।

ময়নাতদন্তের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক কুমার নায়েক সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, শিশুটিকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। পুলিশের অনুমান, গোয়ার সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্টে বালিশ চাপা দিয়েই নিজের ছেলেকে খুন করেন সূচনা।

চিকিৎসকের মতে, ‘সম্ভবত বালিশ জাতীয় কোনও জিনিস দিয়ে শ্বাসরোধ করার কারণে শিশুটির মৃত্যু হতে পারে। শিশুটিকে গলা টিপে খুন করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। খুনের প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য এসেছে। শ্বাসরোধের কারণে দেহটির মুখ ও বুক ফুলে গিয়েছে। শিশুটির নাক দিয়ে রক্তপাতও হয়েছিল।’

পুলিশের ধারণা, সন্তানকে খুন করার পরিকল্পনা অনেক দিন আগেই করেছিলেন সূচনা। তার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে যে তথ্যপ্রমাণ এরকই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

গোয়া পুলিশ জানিয়েছে, ওই অ্যাপার্টমেন্ট থেকে কফ সিরাপের (কাশির ওষুধ) একাধিক খালি বোতল পাওয়া গেছে। তা দেখে মনে হচ্ছে সন্তানকে প্রচুর পরিমাণে ওষুধ খাওয়াতেন সূচনা।

গোয়া পুলিশ প্রধান সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, সূচনা যে ঘরে সন্তানকে খুন করেছিলেন, সেখানে পাওয়া গিয়েছে কাফ সিরাপের দু’টি খালি শিশি। একটি বড় এবং অন্যটি তুলনায় ছোট। ওই অ্যাপার্টমেন্টের এক কর্মীকে দিয়ে ছোট কফ সিরাপের শিশিটি কিনিয়েছিলেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।

সূচনা কয়েক মাস আগে স্বামী পিআর বেঙ্কট রমনের বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। আদালতে তাদের বিবাহবিচ্ছেদের মামলা চলছে। সেই সময়েই গত অগস্টে স্বামীর বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ করেন সূচনা। তবে আদালতে সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তার স্বামী। আগামী ২৯ জানুয়ারি তাদের বিবাহবিচ্ছেদের মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ছিল।

গোয়া পুলিশের এক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা এএনআইকে জানিয়েছেন, বিবাহবিচ্ছেদের মামলাটি শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। আদালত সন্তানের বাবাকে প্রতি রোববার তার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দিয়েছিল। সম্ভবত সেই কারণেই মহিলা হতাশ ও ক্ষুব্ধ ছিলেন। স্বামীর ওপর সেই রাগ থেকে সন্তানকে তিনি খুন করে থাকতে পারেন।

ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, বালিশ অথবা কাপড় দিয়ে শ্বাসরোধ করে শিশুটিকে খুন করা হয়েছে। খুনের পর দেহ সুটকেসে ভরে মা ট্যাক্সি ধরেছিলেন। দেহ নিয়ে বেঙ্গালুরুতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। পথে পুলিশ তাকে ধরে ফেলে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে কোনও ধস্তাধস্তির প্রমাণ মেলেনি। পুলিশ মনে করছে, খুনের আগে প্রচুর ওষুধ খাইয়ে শিশুটিকে ঘুম পাড়িয়ে ফেলেছিলেন সূচনা। তার পর বালিশ বা কাপড় দিয়ে চেপে ধরেন তার মুখ।

পুলিশের কাছে জেরায় অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সূচনা। তিনি জানিয়েছেন, তিনি ঘুম থেকে উঠে দেখেন, শিশুটি মারা গিয়েছে। পুলিশ এই কাহিনি বিশ্বাস করছে না। সত্য অনুসন্ধানের চেষ্টা চলছে। গত ৬ জানুয়ারি গোয়ার অ্যাপার্টমেন্টে গিয়েছিলেন সূচনা। ৮ তারিখ সেখান থেকে বেঙ্গালুরুর ট্যাক্সি ধরেন। আদালত আপাতত তাকে ছয়দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।

শিশুটির বাবা বেঙ্কট ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় কর্মরত। সন্তানের মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি সেখান থেকে চলে এসেছেন। ময়নাতদন্তের পর শিশুর দেহ তার হাতেই তুলে দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত্যুর আগের দিনই সন্তানের সঙ্গে কথা হয়েছিল বাবার। জাকার্তা থেকে ৭ জানুয়ারি রাতে ভিডিও কলের মাধ্যমে ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বেঙ্কট। তার পরেই তাকে খুন করা হয় বলে পুলিশের অনুমান।