বিদায়ী বছরে র‌্যাবের জালে কিশোর গ্যাংয়ের ৩৪৯, অস্ত্রধারী ২৯৩ সদস্য

প্রকাশিত: ১০:০১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১১, ২০২৪

এসএম দেলোয়ার হোসেন:

গেল এক বছরে (২০২৩ সাল) র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) জালে ধরা পড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের বিভিন্ন গ্রæপের ৩৪৯ সদস্য।
২০১৭ সাল থেকে র‌্যাব এপর্যন্ত বিভিন্ন অপরাধে কিশোর গ্যাংয়ের ১ হাজার ১২৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া অস্ত্রধারী ২৯৩ সন্ত্রাসীও র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েছে। এ সময় জব্দ করা হয়েছে ৬১৮টি বিভিন্ন প্রকার দেশি-বিদেশি অস্ত্র, ১০৩টি ম্যাগজিন, ১ হাজার ৩৬২ রাউন্ড গোলা-বারুদ, ২ হাজার ১৩৪টি বিভিন্ন ধরনের ককটেল, বোমা ও গ্রেনেড এবং প্রায় ৬০ কেজি বিস্ফোরক। আজ বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) বিকেলে নিউজ পোস্টকে এসব তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৪০ জনকে (৩০ জনকে অর্থদÐ এবং ১০ জনকে মুচলেকা) পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পশ্চিমা দেশগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে গ্যাং ও কিশোর গ্যাংয়ের অস্তিত্ব আছে। বাংলাদেশের কিশোররা বিদেশি এই গ্যাং কালচার রপ্ত করে কয়েক দশক আগে। শুরুতে সন্ত্রাসী ভাবমূর্তি না থাকলেও ধীরে ধীরে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা সন্ত্রাসী ভাবাপন্ন হয়ে ওঠে। তারা গ্যাংয়ে-গ্যাংয়ে দ্ব›দ্ব, অন্তর্কোন্দল, চাঁদাবাজি, এলাকার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও মাদক সিন্ডিকেটে জড়িত।
র‌্যাব জানায়, কিশোর গ্যাং তথা গ্যাং কালচার এবং উঠতি বয়সী ছেলেদের মাঝে ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক গ্রæপের সঙ্গে অন্য গ্রæপের মারামারি করা বহুল আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। গ্যাংয়ের সদস্যরা এলাকায় নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করার জন্য উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায়, বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালায়, পথচারীদের উত্ত্যক্ত করে এবং ছোট-খাটো বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর চড়াও হয়ে মারামারি-খুনোখুনি করে। তারা নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য একই এলাকায় অন্যান্য গ্রæপের সঙ্গে প্রায়ই কোন্দলে লিপ্ত থাকে। ২০১৭ সালে উত্তরায় স্কুলছাত্র আদনান হত্যাকাÐের মাধ্যমে কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি আলোচনায় আসে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাÐের মূল হোতাসহ কয়েকজন কিশোর গ্যাং সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানায়, ২০২৩ সালের ২৮ জানুয়ারি রাতে রাজধানী আদাবরের সন্ত্রাসী গ্রæপ ‘বিডিএসকে’ গ্যাংয়ের প্রধান হৃদয় ওরফে হিটার হৃদয়সহ আটজনকে দেশি-বিদেশি অস্ত্রসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও ফরিদপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। পরদিন ২৯ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, শ্যামপুর ও কদমতলী এলাকা থেকে কিশোর গ্যাং লিডার জালাল ওরফে পিচ্চি জালাল বাহিনীর ১৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এছাড়াও গেল বছরের বিভিন্ন সময়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর-হাজারীবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় অস্ত্রসহ র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ে কিশোর গ্যাংয়ের সক্রিয় শতাধিক সদস্য। গত বছরের ৬ ফেব্রæয়ারি রাজধানীর আদাবর, মোহাম্মদপুর ও হাজারীবাগ এলাকা থেকে কিশোর গ্যাং গ্রæপের ২০ সদস্যকে দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ২২ মার্চ রাজধানীর মোহাম্মদপুর, হাজারীবাগ, শেরেবাংলা নগর ও তেজগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের ৪৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৮ এপ্রিল আশুলিয়ার নবারটেক এলাকা থেকে রাজধানীর আশুলিয়ার চাঞ্চল্যকর লিখন হত্যাকাÐের পলাতক আসামি কিশোর গ্যাং সদস্য অনিক (২০) এবং জোবায়েরকে (১৯) গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ২৬ মে ঢাকার সাভার ও বরিশালের বাকেরগঞ্জ থেকে রাজধানীর দারুস সালাম এলাকার চাঞ্চল্যকর সিয়াম (১৪) হত্যা মামলার প্রধান আসামি ও চিহ্নিত কিশোর গ্যাং লিডার পটেটো রুবেল ও তার সহযোগী রকিকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৬ জুন ফেনীর রামপুর এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রমের প্রস্তুতিকালে নুরু গ্যাংয়ের প্রধান মাহিদুল ইসলাম সুজন ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ১৬ জুলাই রাজধানীর বনানী থেকে কিশোর গ্যাং পিচ্ছি জয় গ্রæপের তিন সক্রিয় সদস্যকে দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ৮ সেপ্টেম্বর রাতে বাগেরহাট ও রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে বহুল আলোচিত রাজধানীর মোহাম্মদপুরে এক যুবকের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে তার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালকারী আনোয়ার ওরফে স্যুটার আনোয়ার গ্রæপের অন্যতম সদস্য রাফাত, তুষার ও আহমেদসহ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।
তিনি বলেন, র‌্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে রাজধানীসহ দেশের সীমান্তবর্তী জেলা ও বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে ১৯ হাজার ৭৫৫টি অস্ত্র এবং ২ লাখ ৫৯ হাজার ৭০৩ রাউন্ড গোলা-বারুদ জব্দ করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৪ হাজার ৪১৬ জনকে। এছাড়া, রকেট লঞ্চার, গ্রেনেড, বিভিন্ন প্রকার শেল, ককটেল ও গোলাসহ বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলা-বারুদ জব্দ করা হয়েছে। পৃথক এসব ঘটনায় বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট থানায় আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো ও গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানিয়েছেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।