দর্শনার্থীদের পদচারণায় জমজমাট মধুমেলা

প্রকাশিত: ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২০, ২০২৪

জেলা প্রতিনিধি, যশোর

হাজারও দর্শনার্থীদের পদচারণায় আনন্দ উচ্ছ্বাসে জমে উঠেছে সাগরদাঁড়ির মধুমেলা। কপোতাক্ষ নদের পাড়ে এ মেলা এখন এ অঞ্চলের মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গত শুক্রবার থেকে যশোরের কেশবপুরের সাগরদাঁড়িতে শুরু হয়েছে মধুমেলা। মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মদিন ২৫ জানুয়ারি। তবে এ জন্মদিনকে ঘিরে উৎসবের আয়োজন শুরু হয়ে যায় আগে ভাগেই। অন্যান্য বছর সাতদিন মেলার আয়োজন করা হলেও এ বছর ২০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আরও দুই দিন বৃদ্ধি করে ৯ দিনব্যাপী মধুমেলার আয়োজন করা হয়েছে। প্রথমদিন থেকেই মেলার মাঠে ভিড় করতে শুরু করেছে স্থানীয় ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা। দিনভর মেলার মাঠে সার্কাস-জাদু দেখছেন, চড়ছেন নাগরদোলায়।

মিল্লাত হোসেন নামে এক ব্যাংকার খুলনা থেকে পরিবারসহ এসেছেন মধুমেলা দেখতে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিবছরই আসি। অন্যান্য বছর অফিস ছুটি নিয়ে আসতে হয়। এবার শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি।

জয়ন্তী বসু নামে এক দর্শনার্থী বলেন, মধুকবি আর সাগরদাঁড়ি মানেই প্রাণের স্পন্দন জাগানো একটা ব্যাপার। এখানে এলেই মনটা ভরে যায়। আর মেলা মানে তো কোনো কথাই নেই। ঘুরছি, দেখছি, অনেক ভালো লাগছে।

বিথিকা সরকার নামে আরেক দর্শনার্থী বলেন, আমরা সাতক্ষীরা থেকে এসেছি। আসতে কষ্ট হলেও এখানে এসে সে কষ্টটা ভুলে গেছি। বাচ্চারা নাগরদোলায় চড়ছে, সার্কাস দেখছে, আমাদেরও অনেক ভালো লাগছে।

মধুমেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। মেলা জুড়ে ৩৫১টি ছোটবড় স্টল রয়েছে। এ সব স্টলের মধ্যে রয়েছে খাবারের দোকান, কসমেটিকস, শিশুদের খেলনার দোকান, বাহারি মিষ্টির দোকান ইত্যাদি। এ বছর মেলা দুই দিন বৃদ্ধি করায় ভালো বেচাকেনা হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।

মধুমেলায় কসমেটিকস্ এর প্রসাধনীর স্টল দিয়েছেন ঝিনাইদহের আক্তার হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা প্রতিবছরই দোকান দেই। আমরা তো বড় বড় মেলাগুলোকে টার্গেট করি বড় অংকের বেচাকেনার জন্য। এবছর মধুমেলা জমজমার হচ্ছে, এখন পর্যন্ত ভালো বেচাকেনা হচ্ছে।

দেলোয়ার হোসেন নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, বিনোদন কেন্দ্র আর আমাদের মতো কসমেটিকসের দোকানগুলোতে মানুষের ভিড় বেশি। এবার মেলা দুই দিন বৃদ্ধি করা হয়েছে। এজন্য আমরা লাভের আশাও ভালো করছি।

মধুকবির ২০০তম জন্মবার্ষিকীতে নানা দাবি তুলেছেন এখানকার সাংস্কৃতিক কর্মীরা। তাদের প্রধান দাবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত’র স্মৃতিবিজড়িত জন্মস্থানে একটি সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হোক।

যশোর শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হাসান বুলু বলেন, আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মীদের প্রাণের দাবি মধুকবির এই স্মৃতি বিজড়িত জন্মস্থানে সাগরদাঁড়িতে তার নামে একটি সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হোক। বাংলা সাহিত্যে মাইকেল প্রাসঙ্গিক। আমরা চাই এই প্রাসঙ্গিকতাকে শুধু সাগরদাঁড়িতে আটকে না রেখে সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে।

মধুমেলা উদযাপন কমিটির সদস্য এমএ হালিম বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই সাগরদাঁড়িতে একটি সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি করে আসছি। এবছরও আমরা একই দাবিটি তুলে ধরছি। এছাড়া সাগরদাঁড়ির সঙ্গে সাতক্ষীরার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম কপোতাক্ষ নদের উপর বাশেঁর সাকোটি সেতুতে রুপান্তর করার দাবি জানাচ্ছি।

১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সাগরদাঁড়ি গ্রামে এক জমিদার বংশে মাইকেল মধুসূদন দত্ত জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট বাঙালি কবি ও প্রথম সার্থক নাট্যকার, বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যের অন্যতম ব্যক্তিত্ব। তিনি বাংলা সনেট আর আধুনিক মহাকাব্যেরও জনক।