সিরিয়ায় হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিহত
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
ডেস্ক রিপোর্টঃ
সিরিয়ার দামেস্কে ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহতদের মধ্যে ইরানের বিপ্লবী গার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়েছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। এছাড়াও হামলায় ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর চার জ্যেষ্ঠ সদস্য নিহত হয়েছেন।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ডের মতে, এই হামলার জন্য দায়ী ইসরায়েল। এতে চারজন সামরিক উপদেষ্টার পাশাপাশি সিরিয়ার অনেক বাহিনী নিহত হয়েছে।হামলার বিষয়ে ইসরায়েল কোনো মন্তব্য করেনি। কয়েক বছর ধরে এটি সিরিয়ায় ইরান সমর্থিত লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে আসছে। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ ধরনের হামলা আরও তীব্র হয়েছে।
দ্বন্দ্বটি এই অঞ্চলের চারপাশে ছড়িয়ে পড়া একটি বিস্তৃত যুদ্ধের বিষয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে, বিশেষ করে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে। গাজায় হামাস, লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনের হুথিসহ মধ্যপ্রাচ্যে তেহরানের অনেক সমর্থক গোষ্ঠী রয়েছে। দেশটি ইরাক ও সিরিয়ার গোষ্ঠীগুলোকেও সমর্থন করে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে, ‘একটি চারতলা ভবনকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে পাঁচজন নিহত হয়েছে। পুরো ভবনটি ধ্বংস করা হয়েছে। এখানে ইরান সমর্থিত নেতারা বৈঠক করেছিলেন।’
সিরিয়ার অভ্যন্তরীন একটি সূত্রসহ ব্রিটিশ ভিত্তিক পর্যবেক্ষক আরও বলেছে, লক্ষ্যবস্তু এলাকাটি ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) ও ইরানপন্থী ফিলিস্তিনি দলগুলোর নেতাদের একটি উচ্চ-নিরাপত্তা অঞ্চল হিসেবে পরিচিত।
অবজারভেটরির ডিরেক্টর রামি আবদেল রহমান বলেন, ‘তারা নিশ্চিতভাবেই ওই গোষ্ঠীর সিনিয়র সদস্যদের টার্গেট করেছিল।’মধ্য-সকালের হামলার ফলে প্রচুর আকাশে অনেক ধোঁয়া দেখা গেছে বলে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় মিডিয়া জানিয়েছে।
সিরিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা সানা জানিয়েছে, ‘হামলাটি দামেস্কের মাজেহ পাড়ায় একটি আবাসিক ভবন লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে।’ তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কিনা তা বলা হয়নি।
ঘটনাস্থল থেকে এএফপির একজন সংবাদদাতা জানান, ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনটি ঘিরে রেখেছে অ্যাম্বুলেন্স, দমকল কর্মী ও সিরিয়ার আরব রেড ক্রিসেন্ট উদ্ধারকারী দলগুলো। সম্পূর্ণ ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে জীবিতদের সন্ধানে ব্যস্ত ছিল সিভিল ডিফেন্স।
মাজেহ এলাকায় জাতিসংঘের সদর দপ্তর, দূতাবাস ও রেস্তোরাঁ রয়েছে। একজন বাসিন্দা এএফপিকে বলেছেন, ‘আমি পশ্চিম মাজেহ এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ স্পষ্ট শুনেছি এবং আমি ধোঁয়ার বিশাল মেঘ দেখেছি। শব্দটি একটি ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণের মতো ছিল। কয়েক মিনিট পরে আমি অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ শুনতে পাই।’
সিরিয়ায় এক দশকের বেশি গৃহযুদ্ধ চলাকালীন ইসরায়েল তার ভূখণ্ডে শতাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে। প্রাথমিকভাবে হামলাগুলো ইরান-সমর্থিত বাহিনী ও সিরিয়ার সেনাবাহিনীর অবস্থানগুলোকে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে।
ডিসেম্বরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডের একজন সিনিয়র জেনারেল নিহত হয়। ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি বাগদাদে মার্কিন ড্রোন হামলায় ফোর্স কমান্ডার কাসেম সোলেইমানি নিহত হওয়ার পর থেকে রাজি মুসাভি ছিলেন গার্ডের বিদেশি অপারেশন শাখা কুদস ফোর্সের সবচেয়ে সিনিয়র কমান্ডার। ইরানের বাইরে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
একই মাসে পূর্ব সিরিয়ায় বিমান হামলায় কমপক্ষে ইরানপন্থী ২৩ যোদ্ধা নিহত হয়েছে। দেশটির উত্তরে আরও চারজন নিহত হয়েছে। অবজারভেটরির মতে, হামলাগুলো সম্ভব ইসরায়েল পরিচালনা করেছে।সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে নিয়মিত আন্তঃসীমান্ত গোলাগুলিও দেখা গেছে।
ইসরায়েল খুব কমই সিরিয়ায় চালানো ব্যক্তিগত হামলার বিষয়ে মন্তব্য করে। তবে ইসরায়েল বারবার বলেছে, তারা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারকে সমর্থনকারী চিরশত্রু ইরানকে সিরিয়ায় উপস্থিতি বাড়ানোর অনুমতি দেবে না।
২০১১ সাল থেকে সিরিয়ায় রক্তক্ষয়ী সংঘাত চলছে। যার কারনে ৫০ লাখের বেশি জীবন বিপন্ন হয়েছে। এছাড়াও বাস্তুচ্যুত হয়ে লাখ লাখ মানুষ।