নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
‘যুদ্ধ গণহত্যা সহে না কবিতা’ প্রতিপাদ্য করে আগামী ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৩৬তম জাতীয় কবিতা উৎসব। ভারতের বিভিন্ন ভাষার বরেণ্য কবিসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশের কবিরা এবারের উৎসবে অংশ নেবেন।
আজ শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) উৎসব দফতরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন পরিষদের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ।
বরাবরের মতোই ঢাবির গ্রন্থাগারসংলগ্ন চত্বরে (হাকিম চত্বর) এবারের জাতীয় কবিতা উৎসবের আয়োজন করা হবে বলে জানান জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাত।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন কবি আসলাম সানী, কবি কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়, কবি রবীন্দ্র গোপ, কবি হারিসুল হক, কবি দিলারা হাফিজ প্রমুখ।
পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ সামাদ বলেন, সারা পৃথিবীতে আমরা শান্তির পক্ষে। যুদ্ধ গণহত্যা আমরা পছন্দ করি না। প্রাচীনকাল থেকে কোন কবি সাহিত্যিক যুদ্ধ গণহত্যা পছন্দ করেনি। পৃথিবীর একটি বিধ্বস্ত অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এত প্রতিবাদ করার পরও গাজাসহ সারা বিশ্বের নানা জায়গায় শিশুসহ অনেক মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। আমরা এইসব হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাই। আমাদের এই বার্তা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
তিনি কবিতা উৎসবের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, তৎকালীন সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আমাদের কবিতা, বাঙালির জীবনধারা ও আবহমান বাংলার সংস্কৃতি—সবকিছু তছনছ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। সেসময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে একটা গতি সঞ্চার করে জাতীয় কবিতা পরিষদ। জাতীয় কবিতা উৎসবকে আমরা একটা পরম্পরায় বহন করে নিয়ে যাচ্ছি।
কবি তারিক সুজাত বলেন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিগর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া জাতীয় কবিতা উৎসব ও জাতীয় কবিতা পরিষদের নিরন্তর সংগ্রামের ইতিহাস কারও অজানা নয়। আমরা অব্যাহতভাবে স্বৈরাচার, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, যুদ্ধাপরাধের বিচার ও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ব্যক্তিদের বিচারের কথা বলে এসেছি। কবিদের দ্রোহের স্ফুলিঙ্গ থেকে জন্ম নিয়ে এ উৎসব জাতীয় থেকে আন্তর্জাতিক উৎসবে রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশের কবিরা চিরকালই প্রগতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। প্রায় সাড়ে তিন দশক ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও ভাষার সংগ্রামী কবিরা এ উৎসবে আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মানুষের মুক্তির কথা বলেছেন। এ উৎসবকে আমরা কবিতার মিলনমেলায় পরিণত করতে পেরেছি।
তিনি আরও বলেন, দুদিনব্যাপী উৎসবে কবিতাপাঠ, নিবেদিত কবিতা, সেমিনার, আবৃত্তি ও সংগীতের মধ্য দিয়ে আমরা ‘যুদ্ধ গণহত্যা সহে না কবিতা’ স্লোগানকে মূর্ত করে তুলবো। ৩৬তম উৎসবে জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কারপ্রাপ্ত কবির নাম ঘোষণা করা হবে বলে বলেও জানান কবি তারিক সুজাত।
শৃঙ্খল মুক্তির জন্য কবিতা (১৯৮৭), স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কবিতা (১৯৮৮), সাম্পদায়িকতার বিরুদ্ধে কবিতা (১৯৮৯), কবিতা রুখবেই সন্ত্রাস (১৯৯০), গণতন্ত্রের পক্ষে কবিতা (১৯৯১), কবিতা রুখবেই মৌলবাদ (১৯৯২), জয় বাংলার জয় কবিতার (১৯৯৩), জনতার সংগ্রাম কবিতার সংগ্রাম (১৯৯৪), মানুষের অধিকার কবিতার অঙ্গীকার (১৯৯৫), মানবিকতার প্রত্যয়ে কবিতা (১৯৯৬), কবিতা মুক্তির শাশ্বত শক্তি (১৯৯৭), শান্তি-সম্প্রীতি আনবে কবিতা (১৯৯৮), কবিতা তিমির-বিনাশী (১৯৯৯), মাতৃভাষার আলোকধারায় কবিতার হোক জয় (২০০০), কবিতা উৎসব সত্য-সুন্দরের উৎসব (২০০১), কালের যাত্রায় কবিতার জয়ধ্বনি (২০০২), জয় কবিতার জয় মানবতার (২০০৩), কবিতা আনবেই সুসময় (২০০৪), কবিতা প্রতিরোধের হাতিয়ার (২০০৫), জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কবিতা (২০০৬), কবিতা বার বার ফিরে আসে আসে মিছিলে (২০০৭), কবিতার মন্ত্র জয় গণতন্ত্র (২০০৮), জয় জনতার জয় কবিতার (২০০৯), নতুন কবিতা নতুন সময় (২০১০), কবিতা উৎসব মুক্তির উৎসব (২০১১), কবিতা শোণিতে, স্বপ্নের ধ্বনিতে (২০১২), যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবি আজ কবিতার (২০১৩), কবিতা সহে না দানব-যাতনা (২০১৪), জাগো সম্ভাবনায় জাগো কবিতায় (২০১৫), কবিতা মৈত্রীর কবিতা শান্তির (২০১৬), কবিতা মানে না বর্বরতা (২০১৭), দেশহারা মানুষের সংগ্রামে কবিতা (২০১৮), বাঙালির জয় কবিতার জয় (২০১৯), মুজিব আমার স্বাধীনতার অমর কাব্যের কবি (২০২০), বাংলার স্বাধীনতা আমার কবিতা (২০২৩)।