সবাইকে শিক্ষার সুযোগ দিতেই নতুন শিক্ষাক্রম: শিক্ষামন্ত্রী
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সবক্ষেত্রে ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। একই সঙ্গে সব শিক্ষার্থীকে শিক্ষার সুযোগ দিতেই শিক্ষা কারিকুলামে পরিবর্তন বা নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কল্যাণে দেশে দুই কোটি শিক্ষার্থী প্রাথমিকের ধাপ শেষ করে। সেখান থেকে এসএসসি এবং দাখিল পর্যায়ে আসে ২০ লাখ শিক্ষার্থী। বাকি এক কোটি ৮০ লাখ হারিয়ে যাচ্ছে। এই এক কোটি ৮০ লাখ শিক্ষার্থীকে শিক্ষার মধ্যে রাখতেই কারিকুলামের পরিবর্তন। এর সুফল পেতে আমাদের কিছুটা সময় লাগছে।’
শনিবার (২০ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব এবং চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে শিক্ষার উন্নয়নে একটি নতুন রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে কাজ করছে সরকার। সেটা হচ্ছে- বাড়বে এবার কর্মসংস্থান। কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য যেমন শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করতে হবে, তেমনই শিক্ষকদেরও প্রস্তুত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় শহরগুলোর দিক বিবেচনা করে দেখতে পারছি, কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সরকার-প্রশাসনের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় যেহেতু রাজধানীমুখিতা অত্যন্ত বেশি, এতে বিভাগীয় শহরগুলোতে কাজ সৃষ্টি হচ্ছে না। কাজ সৃষ্টি না হলে আমাদের সন্তানদের কর্মসংস্থান দিতে পারবো না।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকগুলোর সদরদপ্তর আইন করেই ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অনেক বহুজাতিক কোম্পানি রয়েছে, একসময়ে চট্টগ্রামে তাদের সদরদপ্তর ছিলো, এখন তারা সবাই ঢাকা চলে গেছে। কারণ এখানকার এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট অফিস- তাদের সিদ্ধান্ত দেওয়ার সক্ষমতা খুবই কম। বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে সবসময় ঢাকায় দৌড়াদৌড়ি করতে হয়।
কর্মসংস্থানের জন্য বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘শুধু চট্টগ্রাম বলে নয়, রাজধানী ঢাকার ওপর যে ব্যাপক চাপ তৈরি হয়েছে, সেজন্য বিকেন্দ্রীকরণের কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমাদের যেসব বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব, সেগুলো আমরা যথাসম্ভব করার চেষ্টা করবো। আর যাতে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান হয়, কেউ প্রতিষ্ঠান করতে চাইলে, সিদ্ধান্ত যাতে এখান (চট্টগ্রাম) থেকেই পায়, ঢাকায় গিয়ে মন্ত্রণালয়ে যাতে দৌড়াদৌড়ি করতে না হয়, সেগুলোর বিষয় রয়েছে।’
বর্তমান সরকারের সময়ে ক্লাসরুম পর্যায়ে সারাদেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অবকাঠামো তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘সারাদেশে নতুন নতুন বিদ্যালয় ভবন হয়েছে। এখন ম্যানেজিং কমিটি চাইলেই শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারে না। এনটিআরসিএর মাধ্যমে একজন শিক্ষকের ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। নতুন শিক্ষা কারিকুলাম বাস্তবায়ন পর্যায়ে যেসব চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে, সেগুলো নিরসনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ করার জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে একশটি হয়েছে, অবশিষ্ট চার শতাধিক এখনো বাকি রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে এবং বিশ্বে যে ধরনের কাজ সৃষ্টি হচ্ছে, সে ধরনের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দক্ষতা তৈরিতে সরকার নতুন কারিকুলাম করেছে। এ ধরনের শিক্ষা এবং দক্ষতা আমাদের শিক্ষার্থীদের দিতে হবে- যেখানে তারা নতুন দক্ষতা তৈরির মানসিকতা শিখতে পারে। শেখার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। সেটা শিক্ষা কারিকুলামের মাধ্যমে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘লেখাপড়া করে যে, গাড়িঘোড়া চড়ে সে- এই ধারণা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সমাজে গাড়িঘোড়া চড়া আমাদের লক্ষ্য নয়। সমাজে বৈষম্য সবসময় ছিল। আমাদের শিক্ষাকে সেভাবে সাজাতে হবে, যেখানে বৈষম্যটা কম হয়।’
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রেসক্লাব সভাপতি সালাহউদ্দিন মো. রেজা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক। সিইউজে সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান, কলিম সরওয়ার, সিইউজে সভাপতি তপন চক্রবর্তী, সাবেক সভাপতি মোস্তাক আহমেদ, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ, সিইউজে সিনিয়র সহ-সভাপতি রুবেল খান, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার, সিইউজে যুগ্ম সম্পাদক সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন হায়দার প্রমুখ।