জেলা প্রতিনিধি, নোয়াখালী
অনুকূল আবহাওয়া, স্বল্প খরচ, কম পরিশ্রম আর বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় নোয়াখালীর সুবর্ণচরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সরিষার চাষ। ফলে এক বছরেই সরিষার আবাদ বেড়েছে ৫ গুণ।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর সুবর্ণচর উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। বাজারে তেলের চাহিদা বেশি থাকায় গত বছরের চেয়ে এ বছর পাঁচগুণ বেশি জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে সুবর্ণচরে সরিষা আবাদি জমি ছিল মাত্র ১৮ হেক্টর। এরপর প্রায় প্রতি বছরই শস্যটির আবাদি জমি বেড়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সুবর্ণচর উপজেলায় ১ হাজার ৫৫৪ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়। অথচ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ হাজার ৫৩৬ জন কৃষক সরিষা চাষ করেছেন মাত্র ৩৪০ হেক্টর জমিতে। স্থানীয় জাতের পাশাপাশি বারি সরিষা ১৪, ১৫, ১৭ ও বিনা ৯, ৪, ১১ ও টোরি ১৭ জাতের সরিষা চাষ করেছেন। কয়েক বছর ধরে ক্রমাগত ভোজ্য তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও বাজারে সরিষার চাহিদা থাকায় চাষিরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন সরিষা চাষে। অনেকেই দো-ফসলি জমিতে সরিষা আবাদ করছেন।
৩ একর জমিতে সরিষা আবাদ করেছে কৃষক মোস্তফা। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ধান চাষ করার পর এই জমি পতিত থাকতো। কৃষি অফিসের সহযোগিতায় আমি তিন একর জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। প্রতি একরে আমার ১৫-২০ হাজার টাকা করে লাভ হবে। কৃষি কর্মকর্তা আমাদের সার্বিক পরামর্শ দিচ্ছেন তাই এই উপজেলায় সরিষা আবাদ কেবল বাড়ছে।
২ একর জমিতে সরিষা আবাদ করা কৃষক বেচু মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরিষা আমাদের জন্য বাড়তি ফসল। আমরা এই ফসলে লাভবান হচ্ছি। এই ফসল শেষে বোরো ধান রোপন করব। আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। কৃষি অফিস থেকে সার্বিক সহযোগিতা পাচ্ছি। আগামীতেও আমরা এই আবাদের জন্য আগ্রহী।
কৃষক আবদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার তিন একর জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। বেশ ভালো ফুল ধরেছে। আশা করা যায় ফলন ভালো হবে। বোরো ধান রোপণের আগেই কম সময়ে সরিষার ফসল ঘরে তোলা যায় বলে বাড়তি ফসল হিসেবে আবাদ করেছি। ঝড়বৃষ্টি না হলে খুবই ভালো ফলন হবে। বাজারে বিক্রি করার পাশাপাশি নিজেদের তেলের চাহিদাও মিটে যায়।
বেসরকারি চাকরিজীবী মো. রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরিষা ক্ষেতের পরিবেশ খুব মনোরম। চমৎকার ফলন হয়েছে। ফুলের ঘ্রাণও সুন্দর। এমন পরিবেশ পাওয়া যায় না তাই ছবি তুললাম। যা স্মৃতি হিসেবে থাকবে।
সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হারুন অর রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সুবর্ণচরে এবছর ১ হাজার ৫৫৪ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। যা গত বছর থেকে পাঁচগুন বেশি। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে তেল ফসলে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জনের যে তিন বছর মেয়াদি যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে তা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের এই উদ্যোগ। আমরা আশাকরছি আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে কৃষকগণ ফলন ভালো পাবেন। সুবর্ণচরে উৎপাদিত তেল দিয়ে সুবর্ণচরের চাহিদা মিটিয়ে আমরা দেশের অন্যান্য জায়গায় সরবরাহ করতে পারব। কৃষকদের এই উদ্যোগে আগামী বছর গুলোতেও সরিষার আবাদ বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। আপনাদের মাধ্যমে আমরা দেশের অন্যান্য কৃষকদের সরিষা আবাদের আহ্বান জানাচ্ছি। এতে করে দেশের উৎপাদিত সরিষা দিয়ে আমাদের ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।