ডেস্ক রিপোর্টঃ
আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও লড়তে চান প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য। রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য কে মনোনীত হবেন, সে দৌড় ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।আইওয়া অঙ্গরাজ্যে রেকর্ড ৫১ শতাংশ ভোট পেয়ে দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে গেছেন ট্রাম্প। আগামীকাল মঙ্গলবার নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যে রিপাবলিকান দলীয় প্রাইমারি ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া : ট্রাম্পের আইওয়া জয়ের তাত্পর্য বুঝতে হলে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই সম্পর্কে খানিকটা ধারণা থাকা প্রয়োজন। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত চলবে দলগুলোর প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া, যা পরিচিত ‘প্রাইমারি’ হিসেবে। অনেকটা সাধারণ নির্বাচনের মতোই বিভিন্ন রাজ্যে প্রাইমারি নির্বাচন আয়োজন করা হয়, যেখানে কোনো একটি দলের প্রার্থীরা প্রতিযোগিতা করেন চূড়ান্ত মনোনয়নে উঠে আসার জন্য।
প্রাইমারি সাধারণত আয়োজন করে স্টেট বা রাজ্য সরকার। তবে কিছু অঙ্গরাজ্যে প্রাইমারির বদলে আরেকটি প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হয়, যেটি ককাস হিসেবে পরিচিত। ককাস রাজ্য সরকার নয়, বরং রাজনৈতিক দলগুলো আয়োজন করে।
প্রাইমারিকে অনেকটা খুদে নির্বাচন হিসেবে দেখা হয় যেখানে ভোটারদের গোপনে অথবা সরাসরি অথবা আগে পোস্ট করার মাধ্যমে ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকে। তবে ককাসে একটি নির্দিষ্ট স্থান ও সময়ে সরাসরি উপস্থিত হয়ে ভোট দিতে হয়। অনেক সময় প্রার্থীর পক্ষে উপস্থিতদের সংখ্যা বা হাত তোলা গোনে এটি নির্ধারণ হয়। এক সময় ককাস যুক্তরাষ্ট্রের বেশ জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু বেশির ভাগ অঙ্গরাজ্য এখন প্রাইমারির দিকেই ঝুঁকেছে। কিন্তু আইওয়ার রিপাবলিকান পার্টি আরো বেশ কিছু অঙ্গরাজ্যসহ ককাস সিস্টেমে রয়ে গেছে। যেমন নেভাডা, আইডাহো, মিসৌরি, নর্থ ডাকোটা, হাওয়াই, ওয়াইয়োমিং এবং কেনটাকি।
একজন প্রার্থী যদি কোনো ককাসে ১৫ শতাংশের কম ভোট পান, তাহলে তার সমর্থকরা অন্য প্রার্থীদের মধ্য থেকে কাউকে আরেক বার সমর্থন প্রদর্শনের সুযোগ পাবেন। আবার তারা চাইলে দ্বিতীয় বার সমর্থনের জন্য না-ও দাঁড়াতে পারেন। আবার একজন প্রার্থী প্রাইমারিতে বিজয়ী হলে তিনি স্টেট বা অঙ্গরাজ্যের সব বা আংশিক প্রতিনিধি জয় করবেন, যারা দলের চূড়ান্ত সম্মেলনে তার পক্ষে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্ধারণে ভোট দেবেন।
ট্রাম্পের আইওয়া জয়ের অর্থ কী?: সাধারণত আইওয়া অঙ্গরাজ্যের অনেকগুলো ককাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের মনোনয়নের লড়াই। এই অঙ্গরাজ্যে শ্বেতাঙ্গ ভোটার বেশি। এই কসাসে জয় সাধারণত একজন প্রার্থীকে প্রাইমারিতে জয়ের দিকে এগিয়ে নিতে এবং মনোবল চাঙ্গা করতে সহযোগিতা করে। ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব এসেক্সের অধ্যাপক ড. নাতাশা লিন্ডস্টেডের মতে, একজন প্রার্থী যদি তার শক্তি প্রদর্শন করতে পারেন এবং সেটা যদি পরবর্তীতে মানুষের মধ্যে একটা গতির সঞ্চার করতে পারে সেটা পরবর্তী প্রাইমারিতে মানুষের ভোটে একটা প্রভাব ফেলতে পারে। সাধারণত প্রাইমারিতে ভোটার টার্ন আউট কমই থাকে, এতে খুব কট্টর সমর্থকরাই যোগ দেন। তবে সেক্ষেত্রেও আইওয়া একটি মনোভাব তৈরি করে দেয়।
এবারের প্রচণ্ড ঠান্ডা ও তুষারপাতের মধ্যে আদৌ মানুষ কতটা ভোট দিতে আসবে, সেটা নিয়ে সংশয় ছিল। খুব বেশি না এলেও শেষ পর্যন্ত ভোট হয়েছে এবং আইওয়ার ৯৯টি কাউন্টি বা প্রদেশের একটি বাদে বাকি সবটাতেই জয় পেয়েছেন ট্রাম্প। যে একটিতে হেরেছেন, সেটিও মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে। এটি নিঃসন্দেহে ট্রাম্পের জন্য একটি উত্সাহ জোগানোর মতো খবর বিশেষত যেখানে নানা আইনি জটিলতা পার করছেন তিনি।
এই একটি অঙ্গরাজ্য দিয়েই তাকে অনেকটাই উত্ফুল্ল দেখা যাচ্ছে। এ জয়ের পর তিনি যেভাবে মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়ে কথা বলেছেন, তা দেখে মনে হতে পারে যে, তিনি হয়তো রিপাবলিকান থেকে প্রার্থী মনোনীত হয়েই গেছেন।
আইওয়ায় জেতার পর পরই হোয়াইট হাউজে গেলে সীমান্ত বন্ধ করাসহ কী কী করবেন তা নিয়েও কথা বলেন তিনি। এছাড়া বাকি দুই রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বীদের নিয়ে কিঞ্চিত্ হাস্যরসও করেন তিনি। রিপাবলিকান পার্টি থেকে আইওয়াতে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস, যিনি আইওয়া জুড়ে অনেক দৌড়ঝাঁপ করার পাশাপাশি প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছিলেন। সে তুলনায় খুব বেশি প্রচারণা না করেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঐতিহাসিক বিজয় নিঃসন্দেহে তাকে চাঙ্গা করার মতো। তবে শুধু এই রাজ্য দিয়ে সমগ্র আমেরিকাকে বিবেচনায় নেওয়া যায় না। যেমন ২০১৬ সালে আইওয়া ককাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পেছনে ফেলে এগিয়ে ছিলেন টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে জনমত জরিপসহ অনেক ক্ষেত্রেই ট্রাম্প রিপাবলিকান অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে বেশ এগিয়ে থাকায় তাকে দল থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনা বেশ জোরালোভাবে আছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাছাড়া ট্রাম্পের বেশ গোঁড়া একটা সমর্থকগোষ্ঠী রয়েছে, যাদের কাছে এখনো তার আবেদন আছে।
তার প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী নিকি হ্যালে বা রন ডিস্যান্টিস যদি আইওয়ার মতো অন্যান্য জায়গাতেও পিছিয়ে পড়েন তাহলে চূড়ান্তভাবে ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়নের সুযোগ বেড়ে যাবে। এ বছরের জুনের মধ্যেই ধারণা পাওয়া যাবে রিপাবলিকানরা কাকে তাদের দল থেকে প্রেসিডেন্ট দৌড়ে মনোনয়ন দেবেন।