কনকনে ঠান্ডাতেও কাজের আশায় দাঁড়িয়ে তারা

প্রকাশিত: ২:৩১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২৪

জেলা প্রতিনিধি, ফেনী

বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে প্রতিদিনই ভোর থেকে ফেনী শহরের প্রাণকেন্দ্র ট্রাংক রোড খেজুর চত্বরের পাশে সারি সারি হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন একদল শ্রমজীবী মানুষ। চুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন কাজে জেলার বিভিন্ন এলাকায় যান তারা। কাজের জন্য লোক পাওয়া যায় বলে অনেকে সকালের এ স্থানকে মানুষের হাট বলেও চেনেন। কিন্তু গত কয়েকদিনের তীব্র শীতের প্রভাব পড়েছে এসব শ্রমজীবী মানুষের আয় রোজগারে।

সোমবার (২২ জানুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শত শত শ্রমজীবী দাঁড়িয়ে আছেন কাজের সন্ধানে। তাদের মধ্যে সবাই ফেনীর স্থানীয় নয়। বেশিরভাগই এসেছেন রংপুর, সিলেট, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, কুমিল্লাসহ অন্যান্য জেলা থেকে।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্যান্য জেলার তুলনায় ফেনীতে কাজ বেশি পাওয়া যায় বলে তারা ফেনীতে আসেন। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ চলছে তীব্র শীত। ঠান্ডা বাতাস ও কুয়াশার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। এই তীব্র শীতের কারণে আগের মতো কাজ পাচ্ছেন না।

আবদুস সাত্তার নামে এক শ্রমজীবী বলেন, প্রতিদিন ভোরে ট্রাংক রোডে মানুষের হাটে এসে দাঁড়াই। এরপর বাড়িওয়ালা, ঠিকাদাররা এসে চুক্তির মাধ্যমে কাজের জন্য নিয়ে যান। রাজমিস্ত্রী, ফসল কাটাসহ চুক্তিতে নানা রকমের কাজ করি। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে কাজ পাচ্ছি না। আগে সপ্তাহে ৭ দিন কাজ করলেও এখন শীতের কারণে একদিন কাজ পেতেও কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ওই একদিনের কাজে ১ হাজার ৫০০ টাকা পাই। সেই টাকা দিয়ে কষ্ট করে পুরো সপ্তাহ চলতে হচ্ছে।

কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা মো. দুলাল। ফেনীতে ভালো কাজ পাওয়া যায় বলে প্রায় ৩ বছর ধরে নিয়মিত এ ভাসমান হাটে আসেন তিনি। দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে  তিনি বলেন, শীতের তীব্রতা যখন ছিল না তখন আসার পরপরই কাজ পেয়ে গেছি। শীতের কারণে এখন বাড়িওয়ালা, ঠিকাদাররা আসে না তেমন। এ আয় থেকেই ৫ জনের পরিবার চলে। এভাবে হলে পরিবার নিয়ে কিভাবে চলব বুঝতে পারছি না।

মনু মিয়া নামে এক শ্রমিক বলেন, বাড়তি আয়ের জন্য দিনাজপুর থেকে ফেনীতে আসি। কাজ পেলে মালিকের বাড়ি বা আশপাশের এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতাম। কিন্তু গত তিনদিন ধরে ভোর ৬টা থেকে দাঁড়িয়ে থেকেও কাজ পাইনি। রাতে স্টেশনে ঘুমাচ্ছি। খুব কষ্টে দিন পার করছি।

করিম নামে আরেক শ্রমজীবী বলেন, ঠান্ডায় সর্দি, জ্বর নিয়ে কাজের সন্ধানে এসেছি। গত ৩-৪ দিন কাজ করতে পারি নাই। হাতে টাকাও নেই ওষুধ কেনার মতো। বাধ্য হয়ে আজকে বের হয়েছি।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ফেনীর এ শ্রমবাজারে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ শ্রমজীবী আসে কাজের সন্ধানে। বাড়িওয়ালা, ঠিকাদারসহ অনেকে এই শ্রমজীবীদের চুক্তিতে নিয়ে যায় নানা ধরনের কাজ করানোর জন্য। সারাদিন কাজ করার জন্য চুক্তি হয় ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায়।

রাজশাহী থেকে আসা মোহাম্মদ সেলিম বলেন, আমাদের এলাকায় কাজ পাওয়া যেত। খেতের ধান আর টুকটাক উপার্জন দিয়ে ভালোভাবেই বছর চলে যেত। দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তাতে বাড়তি আয়ের জন্য ফেনীতে এসেছি। মাসে ২০ থেকে ২৫ দিন কাজ পাই। মাস শেষে সবমিলিয়ে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা থাকে। সে টাকা থেকে বাড়িতে মা-বাবা আর সন্তানদের পড়ালেখার জন্য পাঠাই। কিন্তু শীত আসার পর থেকে পরিবার পরের কথা, নিজের খরচ চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।

ফেনী জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা) সজীব কান্তি রুদ্র বলেন, জেলায় ১৯ হাজার কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বরাদ্দকৃত সহায়তা উপকারভোগীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

ফেনী আবহাওয়া অফিসের উচ্চমান পর্যবেক্ষক মুজিবুর রহমান  বলেন, সোমবার দুপুর পর্যন্ত জেলায় সর্বনিম্ন ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৪ শতাংশ। এছাড়া চলতি সপ্তাহে জেলায় সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আরও কয়েকদিন শীতের তীব্রতা থাকতে পারে বলে জানান এ কর্মকর্তা।