জেলা প্রতিনিধি মাদারীপুর
দীর্ঘ ৯ মাস বন্ধ থাকার পর অবশেষে চালু হয়েছে ‘মাদারীপুর মিউজিয়াম’। সপ্তাহখানেক আগে মিউজিয়ামটি চালু করা হয়। এরআগে উদ্বোধনের পর থেকে বন্ধ ছিল এটি। মাদারীপুরের ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য নির্মিত মিউজিয়ামটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ায় খুশি জেলাবাসী।
প্রাচীন ইতিহাস ও সমৃদ্ধ জনপদ হিসেবে পরিচিত মাদারীপুর জেলা। বৃটিশবিরোধী আন্দোলনসহ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে মাদারীপুর জেলার রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল অবদান। তবে এ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের জন্য মাদারীপুরে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো বা কোনো মিউজিয়াম ছিল না। ফলে দিন দিন মাদারীপুর জেলা থেকে এগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ইতিহাস সংরক্ষণে চালু করা হয়েছে মিউজিয়ামটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ মাদারীপুর শহরের ঐতিহ্যবাহী শকুনি লেকপাড়ের পুরোনো ট্রেজারি ভবনে মাদারীপুর মিউজিয়ামের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহান খান। এরপর থেকে মিউজিয়ামটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি। এমনকি খোলা হয়নি মূল ফটকও। এতে দীর্ঘদিন লতাপাতার আড়ালে ছিল জেলার একমাত্র মিউজিয়ামটি। জঙ্গলে ভরা ছিল মূল ফটক। ‘মাদারীপুর মিউজিয়াম’ নাম লেখা সাইনবোর্ডটিও লতা-পাতায় ভরে যাওয়ায় কারো চোখে পড়েনি। এনিয়ে ভিডিওসহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনের পর মিউজিয়ামটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্তের কাজ শুরু হয়।
জঙ্গল পরিষ্কার করে নতুনভাবে ‘মাদারীপুর মিউজিয়াম’ লেখা সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়। এক সপ্তাহ আগে সবার জন্য মিউজিয়ামটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। রবি থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মিউজিয়ামটি দর্শনার্থীদের জন্য খোলা রাখা হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, কিছু মনীষীর ছবি ও সংক্ষিপ্ত জীবনী, প্রাচীন ঐতিহ্য, পুরোনো ফ্যাক্স মেশিন, টাইপিং মেশিন, একুশে পদকপ্রাপ্ত চিত্রশিল্পী কাজী আনোয়ার হোসেনের আঁকা বেশকিছু ছবিসহ পুরোনো কিছু জিনিসপত্র স্থান পেয়েছে মিউজিয়ামে।
মিউজিয়াম ঘুরতে আসা শিশু দর্শনার্থী ফাইজা সিমি বলে, ‘এখানে এসে আমার খুব ভালো লেগেছে। বিশেষ করে সুন্দর সুন্দর ছবি দেখে মুগ্ধ হয়েছি।’মাদারীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী চাঁদনী আক্তার বলেন, ‘এটি মাদারীপুরের প্রথম মিউজিয়াম। দীর্ঘদিন মিউজিয়ামটি বন্ধ ছিল। বর্তমানে এটা সবার জন্য উন্মুক্ত করায় আমরা খুশি।’
মাদারীপুরের ফ্রেন্ডস অব নেচারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক রাজন মাহমুদ বলেন, মিউজিয়ামটির মাধ্যমে আমাদের জেলার ইতিহাস ও ঐহিত্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এগুলো জানতে পারবে।
মাদারীপুর মিউজিয়ামের কিউরেটর ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, জাদুঘরটিকে বর্তমান অবস্থানে আনতে জেলা প্রশাসনকে বিশাল কর্মজজ্ঞ বাস্তবায়ন করতে হয়েছে। পুরোনো ট্রেজারি ভবনের অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে ভবনটিকে জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে। পুরোনো ট্রেজারি ভবন ব্যবহার অনুপযোগী ছিল। পরে ভবনটিকে সংস্কার করে ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে। রাতের বেলায় জায়গাটিতে মাদকসেবীদের আড্ডা বসতো, তা বন্ধ করা হয়েছে। নিরাপত্তা দেওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়াসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। বর্তমানে জাদুঘরটি রবি থেকে বৃহস্পতিবার দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকছে। প্রবেশ ফি সম্পূর্ণ ফ্রি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও মাদারীপুর মিউজিয়ামের সভাপতি মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান বলেন, জেলাসহ দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে মাদারীপুর মিউজিয়াম।