অবশেষে উদ্ধার ২০০ কোটি টাকার সরকারি জমি

খাল দখল করে ভবন, ভুয়া দলিলে ব্যাংক ঋণ

প্রকাশিত: ১১:০৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২৪

সাইফুল ইসলাম :

খাল দখল করে তার ওপর নির্মাণ করা হয় তিনতলা ভবন। পাশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জমি দখল করে গড়ে তোলা হয় ডেইরি ফার্ম। নিজের নামে এসব জমি ও স্থাপনার ভুয়া দলিল বানিয়ে ব্যাংক থেকে নিয়েছেন বড় অঙ্কের ঋণও। নানা ছলচাতুরি করে দীর্ঘদিন এসব জমি ভোগ দখল করছিলেন জাকের ডেইরি ফার্মের মালিক আনোয়ার হোসেন। অবশেষে এসব জমি উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

পাউবোর নথিতে দেখা গেছে, মোহাম্মদপুর থানার রামচন্দ্রপুর মৌজার সিএস দাগ নম্বর ৬৭০-এ রামচন্দ্রপুর খালের ওপর ২০১৩ সালে একটি সংযোগ সেতু নির্মাণের অনুমতি পায় আনোয়ার হোসেন। আনোয়ার হোসেনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট জায়গাতে ২৭০ ফুট প্রশস্ত খালের ওপর এ সেতু নির্মাণের অনুমতি দেয় সংস্থাটি।


অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সংযোগ সেতু নির্মাণের অনুমতি পেলেও আনোয়ার হোসেন পাউবো এবং সিটি করপোরেশনের পার্শ্ববর্তী প্রায় এক একর জায়গা দখল করে সেখানে গড়ে তুলেছেন জাকের ডেইরি ফার্ম। জায়গার দাগ নম্বরের সঙ্গে মিল রেখে অন্য দাগে নিজের নামে ১৯ শতাংশ জমি কিনে সেই দলিল দেখিয়ে দখল করা জমির খাজনা পরিশোধ করেছেন তিনি। একইসঙ্গে জালিয়াতির মাধ্যমে দখল করা জমির মালিকানা দলিল করে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট লিজিং কোম্পানি অব বাংলাদেশ (আইডিএলসি) থেকে এক কোটি ষাট লাখ টাকা ঋণ নেন তিনি। ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরের হিসাব মতে, সংশ্লিষ্ট মৌজায় এ জমির বর্তমান অর্থমূল্য প্রায় দুইশ’ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন বলেন, এখানে সরকারি খাস জমির পাশাপাশি তার নিজের জমিও রয়েছে। নিজের জমির পাশে কিছু খাস জমি তার দখলে থাকলেও সে জমিগুলো দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তের আবেদন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি। খাল দখল করে ভবন নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন বলেন, পার্শ্ববর্তী বেড়িবাঁধের কারণে এই খালের প্রবাহ নষ্ট হয়ে গেছে বিধায় তিনি এখানে ভবন নির্মাণ করেছেন।

জালিয়াতি এবং জাল দলিল সম্পর্কে জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন বলেন, এ জায়গা আমার কেনা। খামারের নামে প্রায় দুই কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। কাগজপত্র বৈধ না হলে ব্যাংক কীভাবে এত টাকা ঋণ দিলো? তবে দাবির পক্ষে আনোয়ার হোসেন যেসব চুক্তিপত্র এবং দলিল এই প্রতিবেদককে দেখান, তাতে পাউবো কিংবা সরকারি কর্তৃপক্ষের কোনও সিল-স্বাক্ষর ছিল না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, রামচন্দ্রপুর খাল এবং আশপাশের জায়গাজুড়ে চলা এই দখল সম্পর্কে জানার পর তারা খাল এবং পাশের জমি উদ্ধার করার উদ্যোগ নিয়েছে। পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী তবিবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, সমন্বিত বন্যা প্রতিরোধ প্রকল্পের অধিগ্রহণ করা জমির ৬৭০ নম্বর দাগের ২২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার থেকে ২২ দশমিক ৭৫ কিলোমিটারের মধ্যবর্তী স্থানে শুধু একটি সংযোগ সড়ক নির্মাণপূর্বক তা ব্যবহারের জন্য আনোয়ার হোসেনকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এর বাইরে পার্শ্ববর্তী যেসব স্থাপনা তিনি নির্মাণ করেছেন তার পুরোটাই অবৈধ।

তবিবুর রহমান বলেন, সম্প্রতি ডিএনসিসি সূত্রে আমরা এ বিষয়ে অবগত হয়েছি। দখল হওয়া অধিকাংশ জমি আমরা এরইমধ্যে উদ্ধার করেছি এবং খুব শিগগিরই বাকি অংশগুলো উদ্ধার করা হবে। দখলদারদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে দীর্ঘদিন অবৈধ দখলে থাকা রামচন্দ্রপুর খাল এবং পার্শ্ববর্তী জমিগুলো উদ্ধারে উদ্যোগ নিয়েছে ডিএনসিসি। দখল উচ্ছেদ করে জমি উদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়ার পর আনোয়ার হোসেন ডিএনসিসির সংশ্লিষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সময় চেয়ে আবেদন করার পর একমাস পার হয়ে গেলেও জমির দখল না ছাড়ায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে ডিএনসিসি। এরইমধ্যে খাল এবং পার্শ্ববর্তী জমির বড় অংশ থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করেছে সংস্থাটি। উচ্ছেদ করা স্থানে খেলার মাঠ এবং শিশুদের জন্য পার্ক নির্মাণ করা হবে উল্লেখ করে সেখানে সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছে ডিএনসিসি।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির অঞ্চল ৫-এর নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বির আহমেদ বলেন, জাকের ডেইরি ফার্ম যেখানে গড়ে উঠেছে তার পুরোটাই রামচন্দ্রপুর খালের অংশ। খাল ভরাট করে এরা তিনতলা স্থাপনা নির্মাণ করেছে। দখল করা জমির দলিল তারা দেখাতে পারেননি বলে আমাদের নিয়মিত উচ্ছেদ কার্যক্রমের আওতায় এরইমধ্যে অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করেছি। এ ছাড়া আশপাশের সরকারি স্থানে গড়ে ওঠা অন্যান্য স্থাপনাও উচ্ছেদ করা হবে।