আন্তর্জাতিক ডেস্ক
নেসেট (ইসরায়েলের পার্লামেন্টে) অধিবেশনে জিম্মিদের স্বজনদের হামলার পর গাজা উপত্যকায় দু’মাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে ইসরায়েল। দুই মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার এবং মিসরের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের কাছে প্রস্তাবটি পাঠানোও হয়েছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ইনেত এবং মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওস জানিয়েছে, প্রস্তাবে হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তি প্রক্রিয়াকে কয়েকটি স্তর বা পর্যায়ে ভাগের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। জিম্মিদের মধ্যে যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি এবং অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন, সবার আগে তাদের মুক্তি চায় ইসরায়েল।
পরবর্তী পর্যায়গুলোতে আটক ইসরায়েলি নারী সেনাসদস্য, বেসামরিক তরুণ-তরুণী ও পুরুষ সেনাসদস্যদের মুক্তির ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়েছে প্রস্তাবে। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, এই জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে। তবে কতজনকে মুক্তি দেওয়া হবে— সেই সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি।
প্রস্তাবে যুদ্ধ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দেয়নি ইসরায়েল; তবে বলেছে, গাজার প্রধান শহরগুলোতে ইসরায়েলি সেনাদের উপস্থিতি হ্রাস করা হবে এবং যুদ্ধ শুরুর পর উপত্যকার যেসব ফিলিস্তিনি বাড়িঘর ছেড়ে তাদেরকে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে আসার অনুমতি দেওয়া হবে।
ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, জিম্মিদের মুক্তির পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে দু’মাস সময় নেবে বলে ধারণা করছেন তারা। এই সময়সীমায় গাজায় কোনো অভিযান চালানো হবে না।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সামরিক-বেসামরিক ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিকসহ ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে হামাস যোদ্ধারা। সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় আরও ২৪০ জন ইসরায়েলি এবং অন্যান্য দেশের নাগরিককে।
১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে সেদিন প্রথম একদিনে এতজন মানুষের হত্যা দেখেছে ইসরায়েল। অভূতপূর্ব সেই হামলার জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী এবং তার এক সপ্তাহ পর বিমান বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।
ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার বোমাবর্ষণে গত প্রায় সাড়ে তিন মাসে গাজায় নিহত হয়েছেন ২৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার এবং ইসরায়েলি বাহিনীর বোমাবর্ষণে ধসে যাওয়া বিভিন্ন ভবনের ধ্বংস্তূপের নীচে এখন ও চাপা পড়ে আছেন অন্তত কয়েক হাজার মানুষ।
গত ২৫ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঘোষিত এক মানবিক বিরতির সাত দিনে মোট ১০৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। বাকি ১৩২ জন এখনও তাদের হাতে আটক রয়েছে।ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ইনেত জানিয়েছে, সোমবার জিম্মিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। সেখানে আটক জিম্মিদের দ্রুত ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।