হাওর অঞ্চলের সাত জেলায় এখনও ৬৫ ভাগ ধান কাটা বাকি রয়েছে। সরকারের দেয়া ধান কাটা যন্ত্র হারভেস্টার, রিপার সরবরাহ ও ধান কাটার শ্রমিক ছাড়াও ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরাও ধান কেটে কৃষকের ঘরে তুলে দিচ্ছেন। এরপরও কৃষকের মনে রয়েছে আতঙ্ক। কেননা আবহাওয়া কখন কী করে তা বলা মুশকিল।
এদিকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে হাওরের ধান কাটা শেষ হবে বলে আশা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
অধিদফতর সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত হাওরে মাত্র ৩৫ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। এবার সারাদেশে ৪৭ লাখ ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় এবার দুই কোটি চার লাখ মেট্রিক টন চালের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সারাদেশে বোরো ধান কাটার সময় এখনও পুরোপুরি শুরু হয়নি। যারা আগাম বি-আর ২৮ ধান লাগিয়েছেন তারা এখন ধান কাটছেন। তবে সারাদেশে ধান কাটার মৌসুম শুরু হতে এখনো ১০-১৫ দিন সময় লাগবে।
অধিদফতর সূত্র জানায়, সারাদেশ হিসাব করলে মাত্র চার ভাগ ধান কাটা হয়েছে। তবে হাওরে আগাম ধান লাগানো হয় বিধায় এ ধান আগাম পাকে। হাওর বেষ্টিত সাত জেলায় বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২০ ভাগ।
কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান জানান, হাওরের ধান দ্রুত ঘরে তুলতে সরকার কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধান কাটতে জরুরি ভিত্তিতে ১৮০ কম্বাইন হারভেস্টার ও ১৩৭ রিপার সরবরাহে বরাদ্দ দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। হাওরে বর্তমানে ৩৬২ কম্বাইন হারভেস্টার ও এক হাজার ৫৬ রিপার সচল রয়েছে। এছাড়াও ২২০ কম্বাইন হারভেস্টার ও ৪৮৭ রিপার দ্রুত মেরামত করা হচ্ছে। হাওরের ধান কাটতে জরুরি ভিত্তিতে এসব যন্ত্রপাতি বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে বিধায় এ অঞ্চলের ধান কাটার কোনো সমস্যা হবে না বলে আশা করছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. আবদুল মুঈদ এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এবার ৪৭ লাখ ৫৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে। আর চালের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দুই কোটি চার লাখ মেট্রিক টন।
তিনি বলেন, এবার ধানের যে ফলন হয়েছে আশা করি চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। কৃষি বিভাগ ৫০ শতাংশ ভর্তুকির মাধ্যমে ধান কাটার মেশিন দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। প্রতিবার শ্রমিক সংকটের কারণেই ধান কাটার যন্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে। এ ছাড়া কৃষকের ঘরে ধান তোলার জন্য সরকার হাওরের ফসল রক্ষায় বাঁধ নির্মাণে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ইতিমধ্যে হাওরের বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ফলে আশা করা হচ্ছে সুন্দরভাবে কৃষক হাওরের ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।
তিনি বলেন, আগামী জুনের মধ্যে ৬৪ জেলায় তিন ক্যাটাগরির কৃষি যন্ত্রপাতি যেমন কম্বাইন হারভেস্টার, রিপার এবং রাইস ট্রান্সপ্লান্টার সরবরাহ করা হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বরত কর্মকর্তা রাশেদ ইফতেখার বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে হাওরের ৯০ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।