জেলা প্রতিনিধি বরগুনা
বরগুনায় সিজারিয়ান অপারেশনে মা ও নবজাতকের মৃত্যুর আলোচিত ঘটনায় তদন্তে নেমেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সরেজমিনে তদন্ত করতে নিহত মেঘলা আক্তারের বাড়ি ও নিবন্ধনহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি পরিদর্শন করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনার বামনা উপজেলার ডৌয়াতালা ইউনিয়নের গুদিঘাটা গ্রামে মেঘলা আক্তারের বাড়ি ও দুপুর ১টার দিকে নিবন্ধনহীন সুন্দরবন হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার সরেজমিনে পরিদর্শন করেন কমিশনের তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
এ সময় কমিশনের উপপরিচালক এম. রবিউল ইসলামসহ তদন্ত কমিটির আরও দুই সদস্য উপস্থিত ছিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন বরগুনা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. মেহেদী হাসান।
সিজারিয়ান অপারেশনে নিহত নবজাতক ও মা মেঘলা আক্তারের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন কমিশনের উপপরিচালক এম. রবিউল ইসলাম। এ সময় ওই ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা প্রকৃত ঘটনা জানান। এছাড়া নিবন্ধনহীন সুন্দরবন হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকসহ সংশ্লিষ্টরা প্রভাবশালী বলেও দাবি করেন তারা। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলেও দাবি করেন পরিবারটির সদস্যরা।
পরে এ ঘটনায় সঠিক তদন্তের স্বার্থে মেঘলার স্বামী রফিকুল ইসলাম তারেক, বাবা ছগির হোসেন, চাচা হুমায়ুন কবিরসহ পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্যের আলাদাভাবে লিখিত জবানবন্দি নেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
এছাড়া ভুক্তভোগী পরিবারকে ন্যায়বিচার পেতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপপরিচালক। পরে নিবন্ধনহীন সুন্দরবন হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন করেন তারা।
এর আগে ১৫ জানুয়ারি বিকেলে মেঘলা আক্তার নামের ওই প্রসূতি নারীকে সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য সুন্দরবন হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করে স্বজনরা। পরে ওইদিনই রাতে সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য মেঘলার শরীরে অ্যানেস্থেসিয়া পুশ করেন ওই ক্লিনিকের আবাসিক ডাক্তার সবুজ কুমার দাস। এরপর রাত পৌনে ১১টার দিকে অপারেশন থিয়েটারেই মেঘলা আক্তার এবং তার নবজাতকের মৃত্যু হয়।
মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে মেঘলার বাবা ছগির হোসেন চিকিৎসক সবুজ কুমার দাসকে প্রধান আসামি করে ক্লিনিকের মালিক ডৌয়াতলা ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানসহ মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে বামনা থানায় মামলা করেন। পরে ২০ জানুয়ারি সকালে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে র্যাব-২ এর সদস্যরা মামলার তিন নম্বর আসামি ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুরকে গ্রেফতার করেন।
এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপপরিচালক এম. রবিউল ইসলাম বলেন, যারা অপরাধ করেছে তারা যত শক্তিশালী হোক এ দেশের আইনের আওতায় আসতে হবে। ভুক্তভোগী পরিবার যাতে ন্যায়বিচার পায়, সে ব্যবস্থা অবশ্যই রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে।
ভুক্তভোগী পরিবারকে হুমকির বিষয়ে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সকলকে আমরা বলতে চাই তারা যাতে এ বিষয়টিতে শক্ত হাতে পদক্ষেপ নেয়। কোনোভাবেই যেন নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়। এছাড়া কেউ যেন এ বিচারে বাধা সৃষ্টি না করতে পারে সে কারণেই আমরা এ পরিবারের পাশে আছি।