পুরান ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে মোবাইল টাওয়ার স্থাপনে স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
# কেউই মানছে না হাইকোর্টের নির্দেশনা
# চলছে বিভিন্ন কোম্পানির টাওয়ার স্থাপন
# ক্ষতিকর রেডিয়েশন আতঙ্কে শতাধিক বাসিন্দা
# পরিত্রাণ পেতে বিভিন্ন দপ্তরে এলাকাবাসীর অভিযোগ
সাইফুল ইসলাম:
উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে রাজধানীর পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় রাজউকের অনুমোদনহীন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসানো হচ্ছে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির টাওয়ার। অভিযোগ উঠেছে, অর্থলোভী অতিউৎসাহী কতিপয় বাড়ির মালিক আর্থিক চুক্তির বিনিময়ে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ভবনের ছাদে এসব টাওয়ার বসানোর সুযোগ করে দিচ্ছেন। এতে মোবাইল টাওয়ারের ক্ষতিকর রেডিয়েশন বা বিকিরণ মাত্রায় মানসিক অসুস্থতায় স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কায় আতংকে আছেন পুরান ঢাকার অধিকাংশ বাসিন্দা। ভুক্তভোগীরা ইতোমধ্যেই এর থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। কিন্তু কোনো কিছুকেই আমলে নিচ্ছেন না বাড়ির মালিকরা। আজ শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) রাজধানীর পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেয়া যায়, পুরান ঢাকার লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগসহ বেশ কয়েকটি থানা এলাকায় রাজউকের অনুমোদনহীন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ছাদে বসানো হয়েছে ক্ষতিকর রেডিয়েশনযুক্ত বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির টাওয়ার। বেশিরভাগ কোম্পানির টাওয়ার বসানো হয়েছে লালবাগ থানাধীন ডিএসসিসি’র ২৩ নং ওয়ার্ডের লোলিত মোহন দাস লেনের বিভিন্ন ভবনে। ওই এলাকার শতাধিক বাসিন্দা ক্ষতিকর রেডিয়েশন আতঙ্কে মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন। রাজউকের অনুমোদনহীন ঝুকিপূর্ণ ভবন ও বসতঘর ঘেঁষে মোবাইল টাওয়ার স্থাপন বন্ধ করতে এরই মধ্যে কয়েকজন বাসিন্দা বিটিআরসি, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব, রাজউক চেয়ারম্যান, ঢাকার জেলা প্রশাসক, আইজিপি ও সংশ্লিষ্ট এলাকার থানা পুলিশের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। কিন্তু মোবাইল টাওয়ার ভাড়া দেয়া বাড়ির মালিক কারো কথায়ই কোন কর্নপাত না করে টাওয়ার স্থাপনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ঘণবসতিপূর্ণ এ এলাকায় স্বাস্থ্যঝুঁকি ও মানসিক ক্ষতির আশংকা থাকা সত্বেও উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ঘণবসতিপূর্ণ এলাকায় টাওয়ার নির্মাণ না করার অনুরোধ জানিয়েছে বিটিআরসিসহ বিভিন্ন সংস্থা। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ভুক্তভোগীদের জমা দেওয়া আবেদনের কপি নিউজ পোস্টের হাতে এসেছে। এবং তা সংরক্ষণে রাখা হয়েছে।
সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা একটি বাড়ির ফ্ল্যাট মালিক মো. এমদাদুল হক নিউজ পোস্টকে বলেন, কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ও উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে আমাদের ফ্লাট ঘেঁষা পাশের বাড়ির সপ্তম তলায় একটি মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করছেন লালবাগের ৩৪নং ললিত মোহন দাস লেনের বাড়ি মালিক মো. মমতাজ মিয়া। এতো নীচু ও বসতঘর ঘেঁষে মোবাইল টাওয়ার স্থাপনের ক্ষতিকরের বিষয়টি তাকে অবহিত করা সত্বেও বছরে ২/৩ লাখ টাকার প্রলোভনে তিনি গায়ের জোরেই আমাদের বসত ফ্ল্যাট ঘেঁষেই মোবাইল টাওয়ারটির স্থাপনের কাজ করছেন। কারো কথার কর্নপাত করছেন না তিনি। বরং এই বলে হুমকি দিচ্ছেন আমার বাড়িতে আমি টাওয়ার লাগাবো হাইকোর্টের কি? আমি আদালতের আদেশ-ফাদেশের তোয়াক্কা করি না। এমদাদুল হক বলেন, প্রথমতঃ টাওয়ার স্থাপনের ভবনটি পুরনো এবং ঝুঁকিপূর্ণ ও রাজউকের অনুমোদনহীন। এ ছাড়া টাওয়ারের পাইপগুলো স্থাপন করা হচ্ছে আমার ফ্লাট ঘেঁষে। ঝড়-তুফানে যেমন টাওয়ার ভেঙে পড়লে আমাদের ভবনের উপর পড়ার আশংকা ও এর ক্ষতিকর বিকিরণে মানসিক অসুস্থতা ও জানমালের ক্ষতির আশংকায় আমরা ভীতসন্ত্রস্ত।
এমদাদুল হক বলেন, জনবহুল এলাকায় মোবাইল টাওয়ার স্থাপন না করার নির্দেশনা রয়েছে হাইকোর্টের। ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয়তার ও রেডিয়েশন উচ্চ মাত্রার কারণে মানবদেহের ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি এই মোবাইল টাওয়ার। তাই অবিলম্বে এই জনবহুল ও রাজউকের অনুমোদনহীন ভবনের মোবাইল টাওয়ার নির্মান কাজ বন্ধ রাখতে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেছি। সেই সঙ্গে টাওয়ার স্থাপনে হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে চলা ও রাজউকের অনুমোদনহীন ভবনে মোবাইল টাওয়ার স্থাপনে বিটিআরসিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন অনুমতি প্রদান না করেন সে বিষয়ে নজর দেয়ার দাবি জানান এমদাদুল হক।
তার এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে বাড়ির মালিক মমতাজ মিয়ার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিউজ পোস্টকে বলেন, স্থানীয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুরোধে আমার ভবনের ছাদে টাওয়ার স্থাপনের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। মোবাইল কোম্পানির লোকজন তাদের টাওয়ার বসানোর যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে যাচ্ছে। তবে এলাকাবাসী বলছেন, এখনও তিনি তার একক ক্ষমতাবলে টাওয়ার বসানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে বিটিআরসির উপ-পরিচালক ড. শামসুজ্জোহা এবং রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ইতোমধ্যেই বিটিআরসি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৯৯টি এলাকায় একটি জরিপ চালিয়েছে। সেই জরিপে মোবাইল টাওয়ার স্থাপনে মানবদেহ ও প্রাণীকূলে তেমন ক্ষতির লক্ষণ পায়নি। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চেয়ে অনেক নিচে রয়েছে এ দেশের মোবাইল কোম্পানিগুলোর স্থাপিত টাওয়ারের নিঃসৃত বিকিরণ। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি বা ভীতির কোনো কারণ নেই। তবে ঘণবসতিপূর্ণ এলাকায় স্বাস্থ্যঝুঁকি ও মানসিক ক্ষতির আশংকা থাকলে প্রতিবেশীর স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশের ক্ষতি হয়, এমন কোনো মোবাইল টাওয়ার নির্মাণ না করার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। এতে কেউ বিধি ভঙ্গ করলে তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।