ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ
ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন বাজারে আমন ধান উধাও হয়ে গেছে। মজুতদারদের সিন্ডিকেটে কোথাও মিলছে না ধান। যে কারণে সরকারিভাবে সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হতে চলেছে। সরকারি মূল্য থেকে বাজারদর বেশি হওয়ায় কৃষক ও হাসকিং মিল মালিকরা খাদ্য গুদামে ধান, চাল সরবরাহ করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন বলে দাবি জেলা খাদ্য বিভাগের।
সরকারিভাবে হাসকিং মিল মালিকদের কাছ থেকে প্রতি কেজি ৪৪ টাকা দরে ১১শো টন চাল ও কৃষকের কাছ থেকে প্রতি কেজি ৩০ টাকা মূল্যে ১৫০০ টন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ধানের অভাবে খাদ্য গুদামের সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হতে চলেছে।
জানা গেছে, অধিক মুনাফা লাভের আশায় বিভিন্ন জেলার অটোরাইস মিল মালিকরা তাদের চাহিদার থেকে তিনগুণ বেশি ধান মজুত করেছেন। এ কারণে তারা বিভিন্ন জেলার হাট বাজারের ধান, চাল ব্যবসায়ীদের কাছে অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখেন। এসব ব্যবসায়ীরা আমন ধান ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই কৃষকদের কাছ থেকে সরকারি মূল্য থেকে বেশি দরে ধান কিনে মজুত করেন। পরবর্তীতে তারা আরও লাভের আশায় মজুতকৃত ধান বিক্রি করে থাকেন। যে কারণে কৃষকরা খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করছেন না।
অপরদিকে বাজারে ধান না পাওয়ায় হাসকিং মিল মালিকরাও সরকারি খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ করতে পারছেন না। বর্তমান কেশবপুর বাজারে মোটা চাল প্রতি কেজি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
জেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ফুড লাইসেন্স ছাড়া কেউ ধান-চালের অবৈধ মজুত বা ব্যবসা করতে পারবে না। ঠাকুরগাঁওয়ে ক্ষুদ্র ফুড লাইসেন্স ১৩৫টি ও বড় ফুড লাইসেন্স রয়েছে ১২টি। ক্ষুদ্র লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীরা চাল ১০ টন, ধান ১০ টন ও গম ১০ টন মজুত করতে পারবেন। আর বড় ফুড লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীরা ধান, চাল ও গম মিলে ১৫০ টন মজুত করতে পারবেন।
নিয়মানুযায়ী ৭ দিন অন্তর অন্তর ফুড ব্যবসায়ীদের ধান, চাল ও গম মজুতের বিবরণ খাদ্য বিভাগে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও কোনো ব্যবসায়ী এ নিয়ম মানেন না। এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও খাদ্য বিভাগও একেবারে উদাসীন ভূমিকা পালন করছে।
এরইমধ্যে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা হাট বাজারে অতিরিক্ত ধান, চাল মুজতকারীদের সন্ধানে নেমেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগও অনুরূপভাবে মাঠে নামলেও কোনো মজুতদারের সন্ধান করতে পারেনি।
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি অফিসার সিরাজুল ইসলাম বলেন, কৃষি বিভাগের দায়িত্ব হলো কৃষককে পরামর্শ দিয়ে বেশি ফসল উৎপাদন এবং পোকা মাকড় থেকে ফসল রক্ষা করা। উপজেলা প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগের পক্ষ থেকে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচিত করা হয়। নির্বাচিত কৃষকরাই কেবল খাদ্য গুদামে ধান সরবরাহ করতে পারবেন। যেখানে বেশি দাম পাবে কৃষক সেখানেই ধান বিক্রয় করবেন। তবে উৎপাদনের পর কৃষক কোথায় বিক্রয় করবেন না করবেন এবং কারা মজুত করছেন এটা দেখভালের দায়িত্ব কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের।
ঠাকুরগাঁও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাহমুদুল হাছান বলেন, খোলা বাজারে ধান ও চালের দাম বেশি হওয়ায় কৃষক এবং হাসকিং মিল মালিকরা খাদ্য গুদামে ধান চাল সরবরাহ করছে না। মিল মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে যাতে তারা তাদের চুক্তি অনুযায়ী চাল সরবরাহ করে। তবে মজুতদারদের সন্ধানে কাজ করায় কিছু কিছু ব্যবসায়ী এরইমধ্যে তাদের মজুত করা ধান চালের কথা জানিয়েছেন। এ পর্যন্ত সদর উপজেলা খাদ্য গুদাম কৃষকদের কাছ থেকে ৩০ টন ধান ও মিল মালিকদের কাছ থেকে ৪৫৫ টন চাল ক্রয় করেছেন বলেও তিনি জানান।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহাবুর রহমান জানান, যৌথভাবে নিয়মিত বাজার মনিটরিং ও মজুতদারদের সন্ধানে কাজ করা হচ্ছে। সরকারিভাবে ধান, চাল সংগ্রহ যাতে সফল হয় সে বিষয়েও কাজ করা হচ্ছে।