করোনাভাইরাসের ‘উৎস প্রাকৃতিক’, জানালো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনাভাইরাসের উৎস একটি চীনা গবেষণাগার বলে প্রমাণ দেখার দাবির একদিন পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আবারও জানালো, কোভিড-১৯ এর উৎস প্রাকৃতিক। শুক্রবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা জানিয়েছেন সংস্থাটির জরুরি কর্মসূচিবিষয়ক প্রধান মাইকেল রায়ান। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এখবর জানিয়েছে।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, প্রাণঘাতী এই ভাইরাস প্রাণি থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছে। গত বছর চীনের উহানের একটি মাংসের বাজার থেকে তা ছড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরে তা বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ সময় শনিবার সকাল ১১টা নাগাদ বিশ্বে ৩৩ লাখ ৪৪ হাজারের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। প্রাণ হারিয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৭৭৫ জন। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ৬৫ হাজারের বেশি মানুষের।
করোনাভাইরাসে উৎস চীনের উহানের একটি গবেষণাগার বলে দাবি করে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে চীন। বৃহস্পতিবার মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স পরিচালকের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, করোনাভাইরাস মানবসৃষ্ট বা জিনগতভাবে পরিবর্তিত হওয়ার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এই মহামারির উৎস আক্রান্ত পশু না চীনা ল্যাবে দুর্ঘটনা, তা এখনও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানানো হয় ওই বিবৃতিতে।
ওই দিনই চীনের একটি ভাইরোলোজি গবেষণাগার থেকে করোনাভাইরাসের সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করে ট্রাম্প বলেছেন, এই বিষয়ে তিনি প্রমাণ দেখতে পেয়েছেন। আর তা দেখার পর চীনা ল্যাবরেটরিতে ভাইরাসটির উৎপত্তি নিয়ে তিনি অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাসী। তবে তিনি কোনও প্রমাণ প্রকাশ করেননি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের এই দাবির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সংস্থাটির জরুরিবিষয়ক প্রধান মাইকেল রায়ান জানান, জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা বারংবার শুনে আসছে অসংখ্য বিজ্ঞানী ভাইরাসটির উৎস অনুসন্ধানে কাজ করছেন। তিনি বলেন, আমাদের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে ভাইরাসটি প্রকৃতিগত।
এর আগেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভাইরাসটির উৎস সম্পর্কে একই অবস্থানের কথা জানিয়েছিল। শুক্রবার করোনাভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে চীনের তদন্তে অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। চীনের চলমান তদন্তে তাদের অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাবে বলে আশা প্রকাশ করেছে তারা। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে পাঠানো এক ই-মেইলে এ কথা নিশ্চিত করেছে সংস্থাটির মুখপাত্র তারিক জাসারেভিক।
রায়ান বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ভাইরাসটির প্রাকৃতিক উৎস চিহ্নিত করা’। কীভাবে প্রাণি-মানুষের বাধা ভেঙে গেলো তা জানার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন এই কর্মকর্তা।
তিনি আরও বলেন, এই জানার লক্ষ্য হলো যাতে করে আমরা প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি এবং যে কোনও স্থানে এমনটি যাতে না ঘটে সেজন্য জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ে চীন সরকারের পাশাপাশি ডব্লিউএইচও’র কঠোর সমালোচনা করে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভাইরাসটির তীব্রতা অগ্রাহ্য করা এবং চীন-ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠার অভিযোগ এনে কিছুদিন আগে ডব্লিউএইচও’র তহবিল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্পের সমালোচনার মুখে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে করোনা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে পরোক্ষভাবে বিশ্বনেতাদের ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক টেড্রোস আডানোম গেব্রিয়াসিস। ডব্লিউএইচও সময় নষ্ট করেনি উল্লেখ করে তিনি মনে করিয়ে দেন, মহামারি ঠেকানোর জন্য চীন ছাড়া বাকি বিশ্ব পর্যাপ্ত সময় পেয়েছিল।
উল্লেখ্য, ৩০ জানুয়ারি যখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাকে স্বাস্থ্যজনিত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে তখন চীনের বাইরে মাত্র ৮২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং এদের কেউ মারা যায়নি।