আন্তর্জাতিক ডেস্ক
অধিকাংশ যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ বাহিনীর হাতে ইউক্রেনীয় বাহিনীর নাকাল হওয়া এবং বাহিনীর পিছু হটার দায়ে ইউক্রেনের সেনাপ্রধান জেনারেল ভ্যালেরি জালুঝনিকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। শিগগিরই প্রেসিডেন্সিয়াল ডিক্রি জারির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
গত সোমবার নিজ কার্যালয়ে জেনারেল জালুঝনিকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন জেলেনস্কি। সেখানে কয়েক জন সরকারি কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে জালুঝনির সঙ্গে সংক্ষিপ্ত এক বৈঠক করেন তিনি। সেই বৈঠকেই তাকে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।বৈঠকে উপস্থিতি দু’জন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবারের বৈঠকে জালুঝনিকে প্রথমে কমান্ডিং শাখা থেকে সরিয়ে অন্য কোনো শাখায় বদলির প্রস্তাব দিয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, যে যদি এই প্রস্তাব তিনি মেনে না নেন, সেক্ষেত্রে তাকে চাকরিচ্যুত হতে হবে।জালুঝনি এ প্রস্তাব মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এখন প্রেসিডেন্টের নির্দেশই কার্যকর হবে,’ সিএনএনকে বলেছেন এক কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য জানতে জেলেনস্কির দপ্তরে যোগাযোগ করেছিল সিএনএন, কিন্তু কেউ কোনো কথা বলতে চাননি। তবে সূত্রের বরাতে জানা গেছে, ইউক্রেনের পরবর্তী সেনাপ্রধান হিসেবে এই মুহূর্তে দু’জনকে বিবেচনা করা হচ্ছে। তাদের একজন হলেন দেশটির সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগ ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টোরেটের প্রধান জেনারেল কিরিলো বুদানভ এবং অপরজন দেশটির স্থলবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওলেক্সান্দার সাইরিস্কি।
গত মঙ্গলবার সিএনএন জেনারেল কিরিলো বুদানভের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন একটি যুদ্ধের মধ্যে রয়েছি। আমার মনে হয় না এখন এসব ইস্যুতে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা আমাদের উচিত হবে।’জেনারেল ওলেক্সান্দর সাইরিস্কির সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিল সিএনএন। তবে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত মিনস্ক চুক্তি অনুযায়ী ক্রিমিয়াকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে ইউক্রেনের স্বীকৃতি না দেওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য তদ্বিরের অভিযোগে ইউক্রেনের সঙ্গে কয়েক বছর টানাপোড়েন চলার পর ২০২২ সালে দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন।
যুদ্ধের প্রথম দিকে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা ক্ষয় পেতে থাকে। এর মধ্যে ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিজ্জিয়া প্রদেশ দখল করে নিয়েছে রুশ বাহিনী এই চার প্রদেশের সম্মিলিত আয়তন ইউক্রেনের ভূখণ্ডের এক পঞ্চমাংশ।
রুশ বাহিনীকে ঠেকাতে সর্বশেষ মরিয়া চেষ্টা হিসেবে গত জুন থেকে কাউন্টার অফেন্সিভ বা সর্বশক্তি দিয়ে রুশ বাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার রণকৌশল অনুসরণ করছে ইউক্রেন, কিন্তু তাতেও বিশেষ লাভ হচ্ছে না।