নিজস্ব প্রতিবেদক
একসঙ্গে গরুর মাংস বিক্রির ব্যবসা করতেন মামুন ও খোকন। তারা দুজন নিকটাত্মীয়। ভোক্তা অধিদপ্তরের ৬৫০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রির সিদ্ধান্তের পর গত বছরের ২২ ডিসেম্বর ব্যবসা আলাদা করেন মামুন। ভোক্তা অধিদপ্তরের নির্ধারিত মূল্যে মাংস বিক্রি শুরু করায় মামুনের ক্রেতা বেড়ে যায়। অন্যদিকে খোকন বেশি দামে বিক্রি করায় তার ক্রেতা যায় কমে। এ নিয়ে খোকন ও মামুনের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়।গত ২০ জানুয়ারি উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডার মধ্যে খোকন ছুরি দিয়ে মামুনকে প্রকাশ্যে পেটে ও বুকের ডান পাশে কুপিয়ে পালিয়ে যান। হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান ভুক্তভোগী মাংস ব্যবসায়ী মামুন।
আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত মিজানুর রহমান ওরফে খোকনকে মাদারীপুর থেকে গ্রেফতারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাব।সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গত ২০ জানুয়ারি দুপুরে রাজশাহীর বাঘা থানার আড়ানী হাটে ন্যায্যমূল্যে গরু মাংস বিক্রি করায় একজন মাংস ব্যবসায়ীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে অন্য এক মাংস ব্যবসায়ী। পরে স্থানীয় জনগণ তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
ওই ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই বাদী হয়ে রাজশাহীর বাঘা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে গত (৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে র্যাব-৫ ও র্যাব-৮ এর যৌথ দল মাদারীপুরের শিবচর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে প্রধান আসামি মিজানুর রহমান ওরফে খোকনকে (৩৫) গ্রেফতার করে। গ্রেফতার খোকন রাজশাহী বাঘার মৃত খোদা বক্সের ছেলে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মামুন হত্যাকাণ্ডে নিজের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করেন খোকন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে কমান্ডার মঈন বলেন, ভুক্তভোগী মামুন গ্রেফতার খোকনের নিকটআত্মীয়। তারা রাজশাহীর বাঘা থানার আড়ানি বাজারে একসঙ্গে গরু মাংস বিক্রির ব্যবসা করতেন। সম্প্রতি ভোক্তা অধিদপ্তর, মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন সম্মিলিত বৈঠক করে ৬৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে আলাদাভাবে মাংস বিক্রির ব্যবসা আলাদা করে মামুন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়। নির্ধারিত ৬৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি শুরুর পর তার দোকানে ক্রেতা বেড়ে যায়। অন্যদিকে বেশি দামে মাংস বিক্রির কারণে খোকনের দোকানে কমে যায় বিক্রি।
তিনি বলেন, নির্ধারিত মূল্যে মাংস বিক্রি করা নিয়ে গত ২০ জানুয়ারি খোকন ও মামুনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে খোকন মাংস কাটার ছুরি দিয়ে মামুনকে প্রকাশ্যে পেটে ও বুকের ডান পাশে উপর্যুপরি আঘাত করে পালিয়ে যায়।
গ্রেফতার খোকন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে প্রথমে রাজশাহীর তাহিরপুরে তার এক আত্মীয় বাড়িতে অবস্থান করে। পরে মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় স্থায়ীভাবে আত্মগোপনে তার পূর্বপরিচিত এক বন্ধুর মাধ্যমে সেখানে ড্রেজার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে থাকেন। মাদারীপুরের শিবচর এলাকায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় ৪ ফেব্রুয়ারি দিনগত রাতে র্যাবের যৌথদল তাকে গ্রেফতার করে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, খোকন মাংস ব্যবসার পাশাপাশি মাদক কারবাসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। খোকনের বিরুদ্ধে বাঘা থানায় মাদক মামলাসহ বিভিন্ন অপরাধে চারটি মামলা রয়েছে এবং এসব মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগও করেছেন তিনি।