বেনাপোল বন্দরে চার স্ক্যানারের তিনটিই নষ্ট

প্রকাশিত: ৪:৪৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪

উপজেলা প্রতিনিধি বেনাপোল (যশোর)

দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে ব্যবহৃত চারটি স্ক্যানিং মেশিনের মধ্যে তিনটিই চার মাস ধরে নষ্ট। এরমধ্যে পাঁচ কোটি টাকার কন্টেইনার মোবাইল স্ক্যানিং মেশিনও রয়েছে, যেটা বন্দরের প্রবেশমুখে স্থাপন করা হয়েছে। ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ও যাত্রী যাতায়াত নিরাপদ করতে স্ক্যানারগুলো বসানো হয়েছিল। এগুলো নষ্ট থাকায় বাড়ছে সোনা চোরাচালানসহ নানা অনিয়ম। এপারের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে কাস্টমস ও বন্দর পেরিয়ে সোনাসহ বিভিন্ন অবৈধ পণ্য আটক হচ্ছে ভারতের পেট্রাপোলে।

স্থলবন্দর সূত্র জানায়, চীনা সরকার ২০২০ সালের এপ্রিলে বেনাপোল বন্দরে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে এ কন্টেইনার মোবাইল স্ক্যানিং মেশিনটি স্থাপন করে। স্থাপনের পর একজন চীনা প্রকৌশলী তিন মাস ধরে কাস্টম কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেন। বেশকিছু দিন চলার পর অচল হয়ে পড়ে মেশিনগুলো। মেরামত করে আবারও সচল করা হয়। তবে গত চার মাস ধরে আবারও অচল হয়ে পড়ে আছে স্ক্যানিং মেশিনগুলো।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাণিজ্য ও যাত্রী যাতায়াতের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চারটি স্ক্যানিং মেশিন স্থাপন করে। এর একটি মোবাইল স্ক্যানার স্থাপন করা হয় বন্দরের বাইপাস সড়কে পণ্য প্রবেশদ্বারে। অত্যাধুনিক মেশিনটি পণ্যবাহী ট্রাকে আসা রাসায়নিক, মাদক, অস্ত্র ও মিথ্যা ঘোষণার পণ্য শনাক্ত করতে সক্ষম। এছাড়া বেনাপোল চেকপোস্ট ও রেলস্টেশনে আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন-কাস্টমস রুটে চোরাচালান রোধে আরও তিনটি স্ক্যানিং মেশিন বসানো হয়।

স্ক্যানিং মেশিনগুলো কাস্টমসের পক্ষে পরিচালনা করে আসছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাসোসিয়েটস। মেশিনগুলোর মধ্যে তিনটিতে যান্ত্রিক ক্রুটি ধরা পড়লে গত চার মাস ধরে স্ক্যানিং কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এর আগেও কয়েকবার নষ্ট হয়েছিল স্ক্যানিং মেশিনগুলো।

বেনাপোলের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেকপোস্ট আন্তর্জাতিক সম্পাদক সুলতান মাহামুদ বিপুল বলেন, জরুরিভাবে বাংলাদেশ অংশে স্ক্যানিং মেশিন সচল করা দরকার। এগুলো অচল হয়ে পড়ে থাকায় সড়কে নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ছে।ভারতগামী পাসপোর্টধারী আজিজুল ইসলাম বলেন, এপারের স্ক্যানিং মেশিন বন্ধ থাকায় অবাধে ওপারে মূল্যবান সম্পদ পাচার হয়ে যাচ্ছে। চোরাচালান প্রতিরোধে বাংলাদেশ কাস্টমস অনেকটা অসহায় পড়ে পড়েছে।

সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, স্ক্যানিং মেশিন নষ্টের সুযোগে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আমদানি বাণিজ্যে চোরাচালানকারীরা অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে আসছেন। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। স্ক্যানিং বন্ধ থাকায় এ দেশ থেকে স্বর্ণসহ মূল্যবান সম্পদ পাচার হচ্ছে ভারতে। বাণিজ্য নিরাপদ রাখতে স্ক্যানিং কার্যক্রম চালু করা জরুরি।

স্ক্যানিং মেশিন মেরামত করতে বড় অংকের অর্থের প্রয়োজন বলে জানান স্ক্যানিং মেশিন তদারকিতে নিযুক্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাসোসিয়েটসের বেনাপোল অফিস ব্যবস্থাপক বনি আমিন।

তিনি বলেন, এ ব্যয় কাস্টমস বহন করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্ক্যানিং মেশিন তিনটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে।প্রতিদিন বেনাপোল স্থলবন্দর ব্যবহার করে ছয় হাজার পাসপোর্টধারী যাতায়াত ও ছয় শতাধিক ট্রাক পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয় বলে জানিয়েছে বন্দর সূত্র।

বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, বন্দর ও কাস্টমস ইমিগ্রেশনে স্ক্যানিং পরিচালনা করছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এগুলো নষ্ট থাকায় চোরাচালানের ঝুঁকি বাড়ছে। দ্রুত স্ক্যানিং মেশিন সচল করতে কাস্টমসকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।বেনাপোল কাস্টম হাউজের যুগ্ম-কমিশনার মোহাম্মদ হাফিজুল ইসলাম বলেন, আমরা কন্টেইনার স্ক্যানিং মেশিনটি মেরামতের জন্য একাধিকবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে পত্র দিয়েছি। আশা করি, খুব শিগগির এটি মেরামত করা সম্ভব হবে।