কারাগারে বডিবিল্ডারের মৃত্যু: স্ত্রীর অভিযোগ নিয়ে যা বলল ডিএমপি

প্রকাশিত: ১:৩৯ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজধানীর পুরান ঢাকার বংশাল থানার কায়েৎটুলি পুলিশ ফাঁড়িতে মাদক বহনের অভিযোগে বডিবিল্ডার ফারুক হোসেনকে আটক করে পুলিশ। পরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তাকে আদালতে তোলা হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। কারাগারে নেওয়ার একদিন পর মারা যান ফারুক হোসেন।

এ ঘটনার পর ফারুকের স্ত্রী ইমা আক্তার হ্যাপি গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন, পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন করায় তার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। ফারুকের স্ত্রীর অভিযোগের প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ (এডিসি) কে এন রায় নিয়তি লিখিত একটি প্রতিবাদ গণমাধ্যমে পাঠান। তবে মিডিয়া বিভাগ থেকে পাঠানো লিখিত বক্তব্যে কোনো কর্মকর্তার স্বাক্ষর ছিল না।

প্রতিবাদে ডিএমপি বলেছে, ঘটনার প্রকৃত সত্য হচ্ছে, ১২ জানুয়ারি বংশাল থানার নাজিমউদ্দিন রোডে নিয়মিত চেকপোস্টে তল্লাশির সময় ফারুক হোসেনকে ২৫০ গ্রাম গাঁজাসহ আটক করা হয়। আসামিকে নিরাপদে থানায় নেওয়ার জন্য গাড়ি আসতে দেরি হওয়ায় কায়েৎটুলি ফাঁড়িতে নিয়ে বসিয়ে রাখা হয়। ফাঁড়ির সামনের আগামাছি লেনের ৫০/১ বাড়িতে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা যায়, ১২ জানুয়ারি রাত ৯টা ২২ মিনিট ২০ সেকেন্ডে এসআই ইমদাদুল বাইকে পুলিশ ফাঁড়ি থেকে বের হচ্ছেন। অপরদিকে আসামির স্ত্রী ইমা আক্তার ফাঁড়িতে প্রবেশ করেন রাত ৯টা ৫০মিনিটে ৪০ সেকেন্ডে। ইমা ফাঁড়ি থেকে বের হন রাত ১০টা ২৫ মিনিটে ১০ সেকেন্ডে। পরে এসআই ইমদাদুল ফাঁড়িতে প্রবেশ করেন রাত ১০টা ২৮ মিনিটে। সুতারং এসআই ইমদাদুল হকের সঙ্গে আসামির স্ত্রীর দেখা হয়নি। এ ছাড়া ইমার মোবাইল ফোনের কল লিস্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এসআই ইমদাদুলের সঙ্গে ফোনেও যোগাযোগ হয়নি। সুতরাং কোনো পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে আসামিকে শারীরিক নির্যাতন কিংবা তার কাছ থেকে টাকা দাবি করা ও কুপ্রস্তাব দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেনি।

ইমার অভিযোগ, তার স্বামী ফারুককে বংশাল থানা হাজতে নেওয়ার পর শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ডিএমপি বলছে, এ ঘটনার প্রকৃত সত্য হচ্ছে, ১২ জানুয়ারি কায়েৎটুলি ফাঁড়ি থেকে ফারুককে সুস্থ শরীরে বংশাল থানায় নেওয়া হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলায় তাকে আদালতে পাঠানো হয়। থানা হাজতে প্রবেশ ও পরের দিন আদালতের উদ্দেশে রওনা দেওয়া পর্যন্ত সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আসামিকে নির্যাতনের চিত্র পাওয়া যায়নি। আসামিকে হাজতখানায় সম্পূর্ণ স্বাভাবিক আচরণ করতে দেখা গেছে। পরে ১৩ জানুয়ারি আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের হাজতখানায় পাঠানো হয়। সেখানে তার প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। আদালত আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সেখানেও আসামি ফারুকের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। প্রত্যেকটি স্বাস্থ্য পরীক্ষায় তার শরীরে কোনো প্রকার আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। আঘাতের চিহ্ন থাকলে যথাযথ কারণ ছাড়া ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগ ও কেন্দ্রীয় কারাগার কখনো আসামি গ্রহণ করে না। ফলে এ থেকে প্রমাণিত, আসামি ফারুককে কায়েৎটুলি ফাঁড়ি থেকে বংশাল থানায় এবং বংশাল থানা থেকে আদালতে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় পাঠানো হয়েছে।

ডিএমপি আরও জানায়, ১৩ জানুয়ারি কারাগারে পাঠানো পর ১৪ জানুয়ারি ফারুক কারাগারে অসুস্থবোধ করলে প্রথমে তাকে কারা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ১৫ জানুয়ারি রাত ১২টা ৫০ মিনিটে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার সৈয়দ হাসান আলী বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন। কারা হাসপাতালের চিকিৎসক ও সহকারী সার্জন ডাক্তার তানভির স্বাক্ষরিত এক প্রেসক্রিপশনে আসামির অসুস্থতার কারণ সম্পর্কে মাদকাসক্তি ও ব্লাড প্রেসার লো (৮০/৫০) থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। ঢাকা জেলার সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পায়রা চৌধুরী মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করেন। সেখানে মরদেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তার ফাহমিদা নার্গিস ময়নাতদন্ত করেন ও মরদেহের ভিসেরা পরীক্ষার জন্য সংরক্ষণ করেন। ফাহামিদা নার্গিস স্বাক্ষরিত প্রাথমিক ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মরদেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করেন। এ ছাড়াও রোগ অথবা জখমের বিস্তারিত বিবরণ কলামে উল্লেখ করেন ‘ফাইব্রোটিক পরিবর্তনের উপস্থিতিসহ হার্ট বড় পাওয়া গেছে’ পূর্ণাঙ্গ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ভিসেরা পরীক্ষা শেষে প্রদান করা হবে।

এদিকে স্বামীর মৃত্যুর পর ইমা গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করে বলেন, কায়েৎটুলি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ইমদাদুল হকসহ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা মাদক বহনের নাটক সাজিয়ে ফারুককে ধরে নিয়ে যায়। পরে ছেড়ে দেওয়ার জন্য তার কাছে টাকা দাবি করে। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় শারীরিক নির্যাতন ও হ্যান্ডকাফ পরিয়ে ফারুককে ফাঁড়িতে বসিয়ে রাখা হয়। স্বামীকে আটকের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ফাঁড়িতে গেলে পুলিশ সদস্যরা প্রথমে এক লাখ ও পরে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু টাকা দিতে আমি রাজি হইনি। এসময় ফারুককে ছেড়ে দেওয়ার জন্য এসআই ইমদাদসহ পুলিশের হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করি। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় ফারুককে ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে পুলিশ সদস্যরা কুপ্রস্তাব দেন। তাদের কুপ্রস্তাবে রাজি হলে ফারুককে তারা ছেড়ে দেবে বলে জানান।