জেলা প্রতিনিধি, ভোলা
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষায় ভোলায় প্রথমবারের মতো উঁচু জমিতে কৃষকরা দলবদ্ধভাবে তরমুজের আবাদ করেছেন। আর ওই জমির চারপাশে নিজেদের উদ্যোগে উঁচু বাঁধ নির্মাণ করে বন্ধ করে দিয়েছেন নদীর লবণাক্ত ও জোয়ারের পানি প্রবেশের পথ। শুধু তাই নয়, ক্ষেতে সেচ দেওয়ার জন্য ডোবায় জমিয়ে রাখা বৃষ্টি পানি ব্যবহার করছেন তারা। কৃষকদের এমন উদ্যোগের সফলতা চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে সব কৃষকই এমন পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করবেন বলে দাবি কৃষি বিভাগের।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভোলার সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন চর চটকিমারা গ্রামের কৃষক মো. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ১০ জন কৃষক প্রায় ৮০ একর উঁচু জমিতে প্রথমবারে মতো দলবদ্ধভাবে তরমুজের আবাদ করেছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে তরমুজ রক্ষায় ওই কৃষকরা নিজেদের উদ্যোগে জমির চারদিকে উঁচু বাঁধ নির্মাণ করে লবণাক্ত পানি ও জেয়ারের পানি প্রবেশের পথ বন্ধ করেছেন। এমনকি ওই জমির মাঝে ডোবা তৈরি করে জমিয়ে রেখেছেন বৃষ্টির পানিও। আর জমে থাকা বৃষ্টির পানি দিয়েই দিচ্ছেন ক্ষেতের পানি সেচ। এতে খরচ অনেক কমে যাবে বলে দাবি কৃষকদের।
কৃষক মো. আনোয়ার হোসেন জানান, তারা প্রতি বছরই ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে তরমুজের চাষ করে আসছেন। কিন্তু প্রতি বছরই মেঘনা ও তেঁতুলিয়ার লবণাক্ত ও জোয়ারের পানিক্ষেতে প্রবেশ করে ক্ষতিগ্রস্ত হন তারা। তাই এবছর তারা ১০ জন কৃষক একত্রিত হয়ে ভোলা সদরের চটকিমারা গ্রামের প্রায় ৮০ একর উঁচু জমিতে তরমুজের চাষ শুরু করেছেন।
কৃষক মো. সাদ্দাম হোসেন জানান, তাদের ক্ষেতে লবণাক্ত ও জোয়ারের পানি যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য তারা ৮০ একর জমির চারদিকে উঁচু করে মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করেছেন। আর উঁচু বাঁধের ফলে তেঁতুলিয়া নদীর জোয়ার ও লবণাক্ত পানি ক্ষেতে ঢুকতে পারবে না। আর তরমুজের ফসলেও ক্ষতি হবে না।কৃষক মো. আমির হোসেন জানান, জমির মাঝখানে ডোবা তৈরি করা হয়েছে। সেই ডোবায় বৃষ্টির পানি জমিয়ে রেখেছেন তারা। আর বৃষ্টির পানি দিয়েই তারা ক্ষেতে পানিসেচ দেবেন।
কৃষক মো. বজলুল রহমান ও মো. আওলাদ হোসেন জানান, তরমুজ ক্ষেতে বৃষ্টির পানি সেচ কাজে ব্যবহার করায় রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ অনেক কম হবে। এতে আমাদের ক্ষেতে সার ও কীটনাশক তেমন ব্যবহার করতে হবে না। আর খরচও অনেক কমে যাবে। এছাড়াও এবছর নতুন পদ্ধতিতে অধিক লাভবান হওয়ার আশাও করছেন তারা।
ভেদুরিয়া ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুম বিল্লাহ জানান, প্রতি বছরই জোয়ার ও লবণাক্ত পানিতে তরমুজের ক্ষতি হতো। কিন্তু এবছর চর চটকিমারায় ১০ জন কৃষক দলবদ্ধ হয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করে নতুন পদ্ধতিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। ওই কৃষকদের মাঠে সব ধরনের পরামর্শ ও তদারকি করছেন তারা। কৃষকরা যে পদ্ধতিতে এবছর তরমুজের আবাদ করেছেন তাতে তারা সফল ও অধিক লাভবান হবেন।
ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হাসান ওয়ারিসুল কবীর জানান, চর চটকিমারার কৃষকদের দেখাদেখি জেলার অন্যান্য কৃষকরাও দলবদ্ধ হয়ে এমন পদ্ধতিতে আগামীতে তরমুজের চাষ করবেন। এতে করে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষকদের তরমুজ আর ক্ষতির মুখে পড়বে না। আর কৃষকরাও অধিক লাভবান হবেন। জেলায় বাড়বে তরমুজের আবাদ।তিনি আরও জানান, এ বছর ভোলায় ১৮ হাজার ৯৬১ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে চর চটকিমারায় হয়েছে প্রায় ৪০ হেক্টর জমিতে।