ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ আর নেই। শনিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর সম্মিলিতি সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মারা গেছেন তিনি (ইন্নালিল্লাহি—–রাজিউন)।
তার একান্ত ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) নাজমুল হক সৈকত সমকালকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ রাতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত তাকে সিএমএইচে নেওয়া হয়। সেখানেই মারা যান তিনি।
প্রতিমন্ত্রীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এক শোকবার্তায় মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ১৯৪৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের কেকানিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম শেখ মো. মতিউর রহমান এবং মা মোসাম্মৎ রাবেয়া খাতুন। চার ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তিনি জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম খাদেমুল ইসলাম গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসায় শিক্ষা জীবন শুরু করেন। এরপর সুলতানশাহী কেকানিয়া প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন। ১৯৬১ সালে একই বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। আযম খান সরকারি কমার্স কলেজ থেকে ১৯৬৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৬৬ সালে বিকম (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে এম.কম. এবং ১৯৭৪ সালে অর্থনীতি বিষয়ে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৭ সালে ঢাকার সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
আবদুল্লাহ কর্মজীবনের শুরুতে সুলতানশাহী কেকানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরে গোপালগঞ্জ ও ঢাকা জজকোর্টে ওকালতি পেশায় জরিত হন। প্রথমে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের বোর্ড অব গভর্নরসের সদস্য ও পরে ওই বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক ছিলেন।
শেখ মো. আব্দুল্লাহ ছাত্রজীবনে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। আযম খান সরকারি কমার্স কলেজে লেখাপড়া করার সময় কলেজের ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলনে অংশ নেন এবং সে সময় যুবলীগে যোগদান করে গোপালগঞ্জ জেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুজিব বাহিনীতে যোগদান করে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর তিনি গোপালগঞ্জ জেলা শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। গোপালগঞ্জ-৩ আসনে শেখ হাসিনার সবকটি সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা ও কার্যক্রমে ভূমিকা পালন করেন।
তিনি গত কয়েক মেয়াদে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। শেখ মো. আব্দুল্লাহ এ আসনে শেখ হাসিনার পক্ষে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশসহ বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক দলসমূহের সম্পর্কন্নোয়ন এবং কওমি মাদরাসার সনদ স্বীকৃতির পেছনে ভূমিকা পালন করেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তিনি ৭ জানুয়ারি ২০১৯ সালে শেখ হাসিনার চতুর্থ মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট কোটায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহর মৃত্যতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক শোক জানিয়েছেন।