বাজেট বাস্তবায়নে অতীতে ব্যর্থ হই নাই, এবারও হব না: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৯:৫৩ অপরাহ্ণ, জুন ২৯, ২০২০

বাজেট বাস্তবায়নে অতীতের মতো এবারও সফল হবেন বলে আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার সকালে সংসদে প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের ওপর আলোচনায় একথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাজেট বাস্তবায়নে আমরা অতীতে কখনও ব্যর্থ হই নাই। ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতেও ব্যর্থ হব না। মাননীয় স্পিকার আমরা হতাশায় ভুগি না। আমরা সব সময় একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নিয়েই এগিয়ে যাই।

“তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় কখনও কখনও সেই পরিকল্পনা প্রয়োজন অনুযায়ী পুনঃনির্ধারণ করতে হয়। সে কারণেই আজকে বাজেট আমরা প্রণয়ন করেছি। আমরা আশা করি, এটা আমরা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব।”

সামনে যে সঙ্কটই আসুক না কেন তা শক্তভাবে মোকাবেলা করার প্রত্যয় জানান শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষকে অভুক্ত থাকতে দেবে না বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।

এই বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের খাদ্য চাহিদা হচ্ছে ৩ কোটি ৭৫ লক্ষ টন। উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৯৯ লক্ষ টন। আমি আগেই বলেছি, ২৫ কোটি টন আমাদের উদ্বৃত্ত রয়েছে এবং আমাদের এই উৎপাদন আমরা অব্যাহত রাখব। কাজেই আল্লাহর রহমতে আমাদের কোনো অসুবিধা হবে না।”

করোনাভাইরাস পরবর্তী পরিস্থিতিতে দেশে যেন খাদ্য সংকট না হয় সেজন্য এক ইঞ্চি কৃষিজমিও যেন অনাবাদী না থাকে সেই নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।

বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ মহাদুর্যোগের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি মহামন্দার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএম এফ) ২০২০ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি ৪.৯ শতাংশ সঙ্কুচিত হবে মর্মে প্রাক্কলন দিয়েছে। তাছাড়া করোনার প্রভাবে বৈশ্বিক পণ্য বাণিজ্য ১৩ থেকে ২০ শতাংশ হ্রাস, বিশ্বব্যাপী ১৯ কোটি ৫০ লক্ষ কর্মীর পূর্ণকালীন চাকরি হ্রাস, বৈশ্বিক এফডিআই প্রবাহ ৫ থেকে ১৫ শতাংশ হ্রাস এবং বৈশ্বিক রেমিটেন্স ২০ শতাংশ হ্রাস পাবে মর্মে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ঘোষণা দিয়েছে।

“ঠিক এই পরিস্থিতিতে আমরা বাংলাদেশে একটি বাজেট প্রনয়ন করেছি। এই বাজেট প্রণয়ন অত্যন্ত কঠিন ও দুরূহ কাজ ছিল।”

করোনাভাইরাস মহামারীর এই সময়ে সরকারি ছুটির মধ্যেও যারা ‘অক্লান্ত পরিশ্রম’ করে বাজেট প্রণয়ন করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি এই সংকট মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে তিনি বলেন, “আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে এটাই চাই, করোনাভাইরাস নামের এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের হাত থেকে যেন আমাদের দেশবাসী এবং সারা বিশ্ববাসী যেন মুক্তি পায়। সেটাই আমরা কামনা করি। যারা এখনও চিকিৎসাধীন আছেন তারা যেন দ্রুত সুস্থতা পান সেই কামনা করি।”

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ হতে ৩০ মে পর্যন্ত দীর্ঘ ৬৬ দিন সারা দেশে সাধারণ ছুটি দেওয়া হয়।

এই প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও কোভিড-১৯ এর একটা বিরূপ প্রভাব পড়েছে। সব বিবেচনায় নিয়ে চলতি অর্থ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার যেটা আমাদের প্রাক্কলন ছিল, আমরা ৮.২ অর্জন করব আর প্রথম ৮মাসে আমরা কিন্তু ৭.৮ শতাংশ অর্জন করেছিলাম। কিন্ত এই করোনার কারণে এবং সব কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়াতে সেটা কমে যায় এবং বাধ্য হই এটাকে সংশোধন করতে যেটা আমরা ৫.২ শতাংশ ধার্য করেছি

“আমরা আশা করি, ২০২১ সালে বিশ্ব এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি কোভিড-১৯ এর প্রভাব থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসবে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের অর্থনীতি তার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে ধরে নিয়ে আগামী ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেট প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮.২ শতাংশ। একই সময় নিম্ন মূল্যস্ফীতি ধরে রাখার পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করেছি।”

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। দুর্নীতির মূল উৎপাটন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাউকে ছাড় দেব না।

“মাননীয় স্পিকার আপনার মাধ্যমে মহান সংসদকে জানাতে চাই, দেশের উন্নয়ন যেন অব্যাহত থাকে এবং আমাদের অর্জনসমূহ সমুন্নত রাখতে সরকার দুর্নীতিবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখবে।”
সূত্র – বিডিনিউজ২৪ডটকম।