করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে বিশ্বজুড়ে সীমিত পরিসরে উদযাপিত হচ্ছে বড়দিনের উৎসব। নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশ বিধি-নিষেধ নতুন করে জোরালো করেছে। বড়দিনের বিশেষ সমাবেশ সংক্ষিপ্ত করেছেন পোপ ফ্রান্সিসও। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার বড়দিনে তেমন প্রস্ততি নেই যিশু খ্রিস্টের জন্মস্থান বেথলেহেমে। বড়দিনের আগেরদিন ঐতিহ্যগতভাবে চার্চ অব দ্য ন্যাটিভিটিতে ক্রিসমাস ইভ সমাবেশ হয়ে থাকে। সেখানে যোগ দিয়ে থাকেন লাখো মানুষ। তবে এ বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে জনসাধারণের জন্য এ সমাবেশ বন্ধ রাখা হয়। অনলাইনে সম্প্রচার করা হয় এ অনুষ্ঠান। শুধু, ধর্মযাজক ও নির্বাচিত মানুষরাই সেখানে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ইতালিতে সেন্ট পিটারের বাসিলিয়ায় পোপ ফ্রান্সিস ইভ সমাবেশ করেন। তবে খুব সীমিত পরিসরে এর আয়োজন করা হয়। ২০০ জনেরও কম মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাদের বেশিরভাগই ভ্যাটিকানের কর্মী। সবাই মাস্ক পরিহিত ছিলেন। ঐতিহ্যগতভাবে এ অনুষ্ঠান সাধারণত মধ্যরাতে হয়ে থাকলেও বৃহস্পতিবার এর আয়োজন করা হয় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে। কারণ, করোনা পরিস্থিতির কারণে ইতালিতে এখন কারফিউ চলছে। ধর্মোপদেশমূলক বাণীতে পোপ ফ্রান্সিস বলেন, ‘একটি শিশুর জন্ম মানুষকে মনে করিয়ে দেয় যে নিজের ভাগ্য গড়তে গড়তে যেন আমরা আমাদের সময় ব্যয় না করি; বরং যারা দুর্ভোগে আছে তাদের অশ্রু মুছে দিই, গরিবের সেবা করি।’
বড়দিনে নিজ বাসভবন অ্যাপস্টোলিক প্যালেস থেকে ভিডিও বার্তা দেবেন পোপ। সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে ভিড় এড়াতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
যুদ্ধ-বিধ্বস্ত উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার কামিশলিতে মুখে মাস্ক পরে বড়দিনের উৎসবে শামিল হয়েছেন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা। ক্রিসমাস ট্রিতে আলোকসজ্জা করার উৎসবও করা হয়েছে।মারিয়া ডানহু নামে আগতদের একজন বলেন, ‘আমরা ভয় পাচ্ছিলাম, এ বছর না করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বড়দিনের অনুষ্ঠান বাতিল হয়ে যায়। তবে দেখুন না, এখন এখানে সবাই উদযাপন করছে এবং আমরা খুশি।’
করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দেশের বিখ্যাত ক্রিসমাস মার্কেটগুলো বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে জার্মানি। কুয়েতে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত গির্জাগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে।
ক্যাথলিক সংখ্যাগরিষ্ঠ ফিলিপাইনে অনেকে একা একাই ছুটি কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। গণপরিবহন ব্যবহারে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির পাশাপাশি কোয়ারেন্টিন বিধির কারণে ভ্রমণ করাটা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। ম্যানিলাতে বসবাসরত ২১ বছর বয়সী কিম প্যাট্রিয়া বলেন, ‘আমি খাবার অর্ডার করছি, পুরনো মুভ্যিগুলো দেখছি এবং পরিবারের সঙ্গে ভিডিও কলে যোগাযোগ করছি।’
নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেরে সঙ্গে যুক্তরাজ্যের ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রয়েছে। বড়দিনের ছুটির কারণে যুক্তরাজ্য সীমান্তে কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছে। তবে অন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর লাখো মানুষ এখনও ইংল্যান্ডে আটকে রয়েছেন।
ফরাসি ট্রাক চালক লরাঁ বেঘিন পণ্য সরবরাহ করতে গিয়ে ইংল্যান্ডে আটকে পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘বাড়িতে বড়দিন উদযাপন? সে কথা তো চিন্তাই করছি না।’
বক্সিং ডে সেলস জনিত ভিড় এড়িয়ে চলতে সিডনিবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী। তবে হারবার ব্রিজে আতশবাজির ঝলকানির মধ্য দিয়ে ২০২১ সালকে বরণ করে নেওয়ার পরিকল্পনা বহাল আছে। বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) হংকং ঘোষণা দিয়েছে, তারা যুক্তরাজ্যফেরতদের হোটেল কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ ১৪ দিন থেকে বাড়িয়ে ২১ দিন করেছে। গত ২১ দিনের মধ্যে যারা দুই ঘণ্টার বেশি দক্ষিণ আফ্রিকায় ছিলেন তাদের প্রবেশও নিষিদ্ধ করেছে হংকং সরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) যুক্তরাজ্যফেরতদের জন্য বৃহস্পতিবার রাতে একটি নির্দেশনা জারি করেছে। ভ্রমণের আগে যাত্রীদের কোভিড টেস্ট করাতে হবে এবং এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। সোমবার থেকে কার্যকর হবে এ নির্দেশনা। শুধু বিশেষ পরিস্থিতিতেই যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের সুযোগ পাবেন যুক্তরাজ্যের বাসিন্দারা। যেমন-আটকে পড়া আমেরিকান নাগরিক, তাদের পরিবারের সদস্য এবং সীমিত সংখ্যক ভিসাধারী।