লকডাউন: বিধিনিষেধ ভাঙায় রাজধানীতে কয়েকশ আটক, জরিমানা
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের মধ্যে ‘জরুরি প্রয়োজন ছাড়া’ রাস্তায় বের হওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েকশ মানুষকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার বেলা ১টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের আট বিভাগে মোট ৭৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এর বাইরে আটক করা হয়েছে ২৪৯ জনকে। নিয়ম না মানায় আটজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানাও করা হয়েছে।
লকডাউনে জরুরি সেবার গাড়ি ছাড়া সব ধরনের যান্ত্রিক বাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রায়েছে। তা না মানায় ওই সময় পর্যন্ত ২২২টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করে প্রায় তিন লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
নিয়ম না মেনে দোকান খোলা রাখায় দশ মালিকের কাছ থেকে ৩৪ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে পুলিশ।
কেবল ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগেই ১৬৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরমধ্যে তেজগাঁও থানা এলাকায় ৩০ জন, শিল্পাঞ্চল থানা ৮ জন, মোহাম্মদপুর ২৬ জন, আদাবর থানা ১৮ জন, শেরে বাংলা নগর থানা ৪০ জন এবং হাতিরঝিল থানা পুলিশ ৪২ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মৃত্যুঞ্জয় দে সজল গ্রেপ্তারের এই তথ্য জানিয়ে বলেন, “তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হওয়া এই ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ ৭ জুলাই পর্যন্ত চলবে বলে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে।
পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার মাহতাব উদ্দিন জানান, কঠোর লকডাউনের মধ্যে ‘অপ্রয়োজনে’ বের হওয়ায় তার এলাকার বিভিন্ন থানায় দুপুর পর্যন্ত একশর বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে।
দারুস সালাম থানারওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, “এ পর্যন্ত ৩৬টি মামলা হয়েছে এবং জরিমানা আদায় হয়েছে ৯৯ হাজার টাকা। আরও আটক হচ্ছে এবং সংখ্যা আপডেট হচ্ছে।”
মিরপুর বিভাগে মোট ৯৮টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এছাড়া মাস্ক না পরায় মিরপুর দারুস সালাম সড়কে তিনজনকে জরিমানা করেছে র্যাব-৪ এর ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর মধ্যে দুইজন গাড়ি চালক এবং একজন মোটরসাইকেল চালক।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমান ওই সড়কে গাড়ি এবং পথচারীকে থামিয়ে চলাচলের কারণ জানতে চান। যারা যৌক্তিক কারণ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের তিনজনকে সাজা দিয়ে বাকিদের সতর্ক করে দেন তিনি।
এসময় সাদা কাগজে ‘জরুরি ওষুধ সরবরাহ ও উৎপাদন’ লেখা একটি ফার্মসিউটিক্যাল কোম্পানির স্টিকার লাগানো গাড়ি আটক করা হয়। চালক সুজন মিয়ার মুখে মাস্ক ছিল না, কোম্পানির কোনো পরিচয়পত্রও তিনি দেখাতে পারেননি।
পরে মাস্ক না পরায় তাকে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একইভাবে একটি প্রাইভেটকারের চালককে দুইশ টাকা এবং একজন মোটরসাইকেল চালককে পাঁচশ টাকা জরিমানা করা হয়।
র্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, “করোনাভাইরাস রোধে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার বাস্তবায়নে কাজ করছি। আমরা শুধু জরিমানা করছি না, কাউকে সতর্কও করছি পাশাপাশি মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে।”
মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছেন উপ কমিশনার সাইফুল ইসলাম।
রমনা বিভাগের পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হারুন অর রশীদ জানান, সকালে রমনা থানার সুগন্ধা মোড় থেকে দুজন এবং শাহবাগ মোড় থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
“তাদের বিরুদ্ধে সরকারি আদেশ অমান্য করায় দণ্ডবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার মাহিন ফারাজী বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত ১০ জনকে অপ্রয়োজনীয় চলাফেরার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছি। এর মধ্যে রায়েরবাজার থেকে ৭ জন এবং তিন রাস্তার মোড় থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
লালবাগে ৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই বিভাগে ২৫টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং ২৫ হাজার ৬০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
মতিঝিলে ১৯টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করে ৪৫ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া ৯টি দোকানকে ১৮ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। দুই ব্যক্তিকে মোট ১ হজার ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
পুলিশের ওয়ারী বিভাগে ১৫টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অপ্রয়োজনে বের হওয়ায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩ জনকে। এছাড়া ১৬ জনকে মোট ১ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
গুলশান বিভাগে ২১টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় ৬১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আটক করা হয়েছে ৭ জনকে এবং সাজা দেওয়া হয় ৮ জনকে।
সারা দেশে সাত দিনের সর্বাত্মক লকডাউনের প্রথমদিনে বিধি-নিষেধ মেনে চলা হচ্ছে কিনা তা যাচাই করতে পুলিশের মত র্যাবও বিভিন্ন মোড়ে তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে।
বারডেমের সামনে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, “সকাল থেকে তল্লাশি করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত যাদেরকে পেয়েছি অধিকাংশই প্রয়োজনে বের হয়েছেন। কেউ চিকিৎসার জন্য বের হয়েছেন, কেউবা বিদেশ যাবেন।”
বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত সর্বাত্মক লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে বলা হয়, এর বাস্তবায়নে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সেনাবাহিনীও মাঠে থাকবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিধি-নিষেধ ভেঙে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ রাস্তায় বের হলে মামলা দেওয়া হবে এবং প্রয়োজনে গ্রেপ্তারও করা হবে।