রফিকুল আমিনের জুম মিটিং : তদন্তে নেমেছে কারা অধিদফতর
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
‘জেলে বসেও নতুন ব্যবসায় ডেসটিনির রফিকুল আমিন!’ শিরোনামে ঢাকা পোস্টে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমেছে কারা অধিদফতর। আগামী দু-একদিনের মধ্যে এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
গত দুই মাস ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন আছেন ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমিন। হাসপাতালে থাকার কারণ হিসেবে ‘ডায়াবেটিসের সমস্যা’ উল্লেখ করেছেন তিনি। হাসপাতালে ভর্তি থাকা বন্দি রোগীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব রয়েছে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ এবং শাহবাগ থানা পুলিশের ওপর।
রফিকুল আমিনের বিষয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বিষয়টি নিউজে পড়েছি, তদন্ত করছি। রফিকুল আমিন যদি এটা করে থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে কারাবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ব্যবস্থা নেব। আর কোনো কারারক্ষীর যদি দায়িত্বে অবহেলা থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেল সুপার বলেন, রফিকুল আমিন হাসপাতালের প্রিজন সেলে রয়েছেন। এটা শুধু কারাগারের বিষয় নয়। এখানে শাহবাগ থানা পুলিশ এবং বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তদন্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন সাংবাদিকদের বলেন, তার (রফিকুল আমিন) মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের পর বলতে পারব, তিনি কখন কথা বলেছেন বা আদৌ বলেছেন কি না।
তিনি বলেন, এ মুহূর্তে আমরা কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। শিগগিরই একটি তদন্ত কমিটি করব। কমিটির তদন্তে সব বিষয় উঠে আসবে।
এর আগে বুধবার রাতে ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে আসে ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমিন কারাবন্দি হওয়া সত্ত্বেও ভিডিও অ্যাপ ‘জুম’ ব্যবহার করে সহযোগীদের সঙ্গে মিটিং করেছেন।
রফিকুল আমিন কেবল কাগজে-কলমে কিংবা চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে ‘অসুস্থ’। হাসপাতালে থেকে দিব্যি ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছেন তিনি। মোবাইল-ইন্টারনেট ব্যবহার করে জুম অ্যাপে নিয়মিত মিটিংও করছেন। হাতে তার এমন জুম মিটিংয়ের দুটি ভিডিও চিত্র এসেছে। যার একটি এ বছরের মে মাসের এবং আরেকটি জুন মাসের। ভিডিওতে দেখা গেছে রফিকুল আমিন ডেসটিনির মতোই নতুন আরেকটি এমএলএম ব্যবসার বিষয়ে আলোচনা করছেন। ইতোমধ্যে সেই ব্যবসা শুরুও করেছেন তিনি। ব্যবসার জন্য শিগগিরই এক হাজার ৩০০ মার্কেটিং এজেন্ট নিয়োগের কথা বলেছেন।
জুম মিটিংয়ের রেকর্ড করা ভিডিওতে রফিকুল আমিনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনি সেখানে ‘মিস্টার এ’ নামে রেজিস্ট্রি করেছেন। তার প্রোফাইল ছবিতে ইংরেজি বর্ণের বড় হাতের ‘R (আর)’ লেখা। ব্যবসার বিষয়ে আলাপকালে তার নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে তাকে কথা বলতে শোনা গেছে।
এছাড়া নতুন ব্যবসায় ধীরগতির বিষয়ে মিটিংয়ে রফিকুল আমিন বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে (কারাগারে) যাওয়ার কারণে সেই কাজটা পিছিয়ে গেছে।’ এক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জেলে থেকে কোরআন-হাদিসের অনেক জ্ঞান নিয়েছি।’
রফিকুল আমিন কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। তবে, ডায়াবেটিসের সমস্যার কথা বলে এপ্রিলে তিনি বিএসএমএমইউতে ভর্তি হন। হাসপাতালে চিকিৎসকের অধীনে থাকলেও তার নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় কারাগারের দুজন রক্ষী সবসময় দায়িত্ব পালন করেন।
২০১২ সালের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমিন এবং প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ওই বছরের ১১ অক্টোবর গ্রেফতার হন রফিকুল আমিন ও মোহাম্মদ হোসেন। ২০১৪ সালের ৪ মে দাখিল করা অভিযোগপত্রে আসামি করা হয় মোট ৫৩ জনকে। তাদের বিরুদ্ধে চার হাজার ১১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং ৯৬ কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচারের অভিযোগ আনা হয়। গ্রেফতারের পর থেকে কারাগারে ছিলেন রফিকুল আমিন। তবে, ডায়াবেটিসের সমস্যার কথা বলে গত এপ্রিলে তিনি বিএসএমএমইউতে ভর্তি হন। সূত্র- ঢাকা পোস্ট।