নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
এবার পায়ে হেঁটে বিশ্বভ্রমণে বের হচ্ছেন সাইফুল ইসলাম শান্ত। আগামী শুক্রবার (২২ মার্চ) সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে থেকে তিনি বিশ্বভ্রমণ শুরু করবেন। যশোর-বেনাপোল সীমান্ত পার হয়ে কলকাতা, এরপর ঝাড়খণ্ড, পাটনা, লখনৌ, উত্তরপ্রদেশ হয়ে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে যাবেন। এরপর উজবেকিস্তান দিয়ে এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপ ভ্রমণ করবেন। তারপর উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ ভ্রমণের পর অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে গিয়ে বিশ্বভ্রমণের সমাপ্তি টানবেন। পুরো ভ্রমণের জন্য তিনি ১০-১২ বছরের একটি পরিকল্পনা করেছেন।
বুধবার (২০ মার্চ) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামে (ইআরএফ) এক সংবাদ সম্মেলনে এমন পরিকল্পনা তুলে ধরেন তিনি।সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু বিপর্যয় প্রতিরোধে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছেন। তার বিশ্বভ্রমণের স্লোগান হচ্ছে ‘ঝধাব ঞৎববং, গরহরসরুব এষড়নধষ ডধৎসরহম’।
সাইফুল ইসলাম জানান, জলবায়ুর অস্বাভাবিক পরিবর্তনের কারণে মানবজাতি নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে বাংলাদেশের একটি বড় অংশ পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আমাদের দেশের প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং সমগোত্রীয় দেশগুলোর ঝুঁকি মোকাবিলায় সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে আমি এটিকে আমার বিশ্বভ্রমণের প্রতিপাদ্য বিষয় নির্বাচন করেছি। ভ্রমণকালে আমার চেষ্টা থাকবে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন কমিউনিটি ও স্কুল কলেজে পরিবেশ রক্ষায় গাছ লাগানোর এবং গাছ সংরক্ষণের বিষয়ে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার।আমার এ পুরো বিশ্বভ্রমণের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও মনিটরিংয়ে থাকবে বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং হাইকার সোসাইটি অব বাংলাদেশ।
শান্ত জানান, আগামী শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে থেকে বিশ্বভ্রমণ শুরু করবো। ঢাকা থেকে হাঁটা শুরু করে যশোর-বেনাপোল সীমান্ত পার হয়ে কলকাতায় পৌঁছানোর পরিকল্পনা করেছি। এরপর ভারতের ঝাড়খণ্ড, পাটনা, লখনৌ, উত্তরপ্রদেশ হয়ে দেশটির রাজধানী দিল্লিতে পৌঁছাব। পরিকল্পনা অনুযায়ী এরপর উজবেকিস্তান যাওয়ার কথা রয়েছে। তারপর পর্যায়ক্রমে মধ্য এশিয়ার তুর্কমেনিস্তান, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, কাজাখস্তান, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনসহ ক্রমান্বয়ে অন্যান্য দেশ ভ্রমণের পরিকল্পনা রয়েছে। এশিয়া মহাদেশ ভ্রমণের পর আফ্রিকা এবং ইউরোপ ভ্রমণের পরিকল্পনা রয়েছে। তারপর উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ ভ্রমণের পর অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে গিয়ে বিশ্বভ্রমণের পরিসমাপ্তি ঘটানোর পরিকল্পনা করেছি।
এ পরিকল্পনার পুরোটাই নির্ভর করছে বিভিন্ন দেশের ভিসা পাওয়ার ওপর। সেক্ষেত্রে কোনো দেশের ভিসাসহ অন্যান্য জটিলতা তৈরি হলে রুট পরিবর্তনের পরিকল্পনা পরিবর্তন হবে। সেটা আমি আমার ফেসবুকে পেজে জানিয়েছে দেব।পরিবার ও স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যা হলে সেক্ষেত্রে হয়ত দেশে ফিরতি পারি। না হয় একবারে পুরো বিশ্বভ্রমণ করে দেশে ফিরব। তিনি জানান, এই লম্বা জার্নিতে আমার বন্ধু, পরিবারসহ যারা সাহস যুগিয়েছে সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
সাইফুল ইসলাম শান্ত জানান, তার বাড়ি কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলায়। কিশোর বয়স থেকেই খেলাধুলা এবং ভ্রমণের প্রতি আমার বিশেষ আগ্রহ ছিল। স্নাতক শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে রানিং, ট্রেকিং ইত্যাদি স্পোর্টস ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হতে দেখে আমার আগ্রহ আরো বাড়তে থাকে এবং এগুলোর কোনো কোনোটিতে অংশগ্রহণ করতে থাকি। মূলত রাজধানীতে এবং দেশের অন্যান্য জেলায় অনুষ্ঠিত বিভিন্ন রানিং ইভেন্ট (ম্যারাথন, হাফ ম্যারাথন, ১০ কিমি. ইত্যাদি) দিয়ে রানিং জগতে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যাই। এছাড়াও আমি ভারতের কলকাতায় ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত ‘ঞধঃধ ঝঃববষ ২৫ক’ রানিং ইভেন্ট এবং একই সালে দার্জিলিংয়ে অনুষ্ঠিত ‘দার্জিলিং হিল ম্যারাথন ২০২২’ এ অংশগ্রহণ করি। আমি এ পর্যন্ত দেশ এবং দেশের বাইরে প্রায় ২৫টির বেশি রানিং ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেছি।
এছাড়াও আমি এবং আমার বন্ধু মিলে ২০১৮ সালে ‘ম্যারাথন বাংলাদেশ’ নামে একটি রানিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করি। ‘ম্যারাথন বাংলাদেশ’ থেকে আমরা ২০১৮ সালে বাংলাদেশের প্রথম আল্ট্রা ম্যারাথন এবং পরে ২০১৯ সালে ম্যারাথন ও হাফ ম্যারাথন ইভেন্ট আয়োজন করি।
আমার হাঁটাহাঁটির আগ্রহ শুরু হয় ২০১৬ সালে। ২০১৮ সাল থেকে আমি দীর্ঘ দূরত্বের হাঁটাহাঁটির বিষয়ে কাজ শুরু করি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে আমি দুই দিনে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের জিরো পয়েন্ট থেকে আলীকদম রুটে ১০০ কিলোমিটার হাইকিং অভিযান করি। ২০২০ সালে আমি ৪০ দিনে হেঁটে দেশের ১৬টি জেলার ১০০০ কিলোমিটার (কুমিল্লা থেকে বাংলাবান্ধা) পথ অতিক্রম করি।
এরপর ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এই মহান নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২০ নভেম্বর ২০২০ তারিখে ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে কুমিল্লা, দেবিদ্বার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার হাঁটার একটি কর্মসূচি পালন করি। ২০২২ সালে আমি হেঁটে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা অভিযানে নামি। এ বছর ২০২২ সালের ১৪ জানুয়ারি থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত ৭৫ দিনে হেঁটে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলা (৩০০০ কিলোমিটার) ভ্রমণ করি। এরপর আমি হেঁটে দেশের বাইরে অভিযানের বিষয়ে পরিকল্পনা করি। ২০২২ সালের ৭ অক্টোবর ঢাকা থেকে হেঁটে যাত্রা শুরু করি এবং বেনাপোল সীমান্ত পার হয়ে কলকাতা হয়ে দার্জিলিংয়ে ভারতের পশ্চিম বাংলার সর্বোচ্চ উঁচু স্থান সান্দাকফুতে যাত্রা শেষ করি। এই ভ্রমণে আমি ৬৪ দিনে ১৫০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছিলাম। এ ভ্রমণে আমি জনমনে কিছু সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছি।